রাজা ও তাঁর তিন কন্যার গল্প।

রাজা ও তাঁর তিন কন্যা

—————————

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক ছিল রাজা। রাজার ছিল এক রানি। আর ছিল তিন কন্যা। শিমুল, বকুল ও পারুল।

তিন কন্যাকে নিয়ে রাজা-রানি বেশ সুখেই ছিলেন। রাজ্যেও ছিল সুখ আর শান্তি।

রাজা একদিন গল্প করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন রানি আর তিন কন্যা। রাজা তাঁর কন্যাদের জিজ্ঞেস করলেন এক সহজ প্রশ্ন। কে তাঁকে কী রকম ভালোবাসে?

story3

বড় কন্যা শিমুল। সে জবাব দিল প্রথমে। বলল, “বাবা আমি তোমাকে চিনির মতো ভালোবাসি।” রাজা মুচকি হাসলেন।

মেজ কন্যা বকুল বলল, “বাবা আমি তোমাকে মিষ্টির মতো ভালোবাসি।” রাজার মুখে দেখা গেল হাসির রেখা।

ছোট কন্যা পারুল বলল, “বাবা আমি তোমাকে নুনের মতো ভালোবাসি।” সঙ্গে সঙ্গে রাজার মুখ হয়ে গেল কালো। রানিও শুনে অবাক। এ কেমন কথা! রাজা বেশ অস্থির। ডাকলেন উজির, নাজির আর সেনাপতিকে।

হুকুম দিলেন, “ছোট কন্যাকে গভীর জঙ্গলে রেখে আসতে।” রাজার হুকুম বলে কথা, পরদিন ছোট রাজকন্যাকে পাঠানো হলো বনবাসে।

গভীর অরণ্য, জন-প্রাণী নেই। ছোট রাজকন্যা একা বসে আছে। এমন সময় সেখানে কয়েকজন পরী এলো। রাজকন্যাকে দেখে জানতে চাইল, “গভীর অরণ্যে তুমি একা কেন?”

পারুল সব ঘটনা খুলে বলল। পারুলের দুঃখের কথা পরীরা বুঝতে পারলো। রাজার মেয়ে পারুলের জন্য তারা সুন্দর একটি বাড়ি তৈরি করলো। পরীরা নানা ফুলের চারা এনে একটি বাগান বানালো।

বনের পশুপাখি এলো রাজার মেয়েকে দেখতে। হরিণ এলো, খরগোশ এলো, ময়ূর এলো। তারাও রাজার মেয়ে পারুলের দুঃখ বুঝতে পারলো। তারা পারুলের জন্য এনে দিল নানা ফলমূল। পরীরা এনে দিল মজার মজার খাবার।

story2

গভীর অরণ্যে পারুলের দিন কাটতে লাগলো একা একা। মনে তার অনেক দুঃখ। মা নেই, বাবা নেই, বোনরাও নেই।

একদিন রাজার খেয়াল হলো শিকারে যাবেন। রাজার খেয়াল মানে সহজ কথা নয়। উজির, নাজির, পাইক, বরকন্দাজ নিয়ে বেরোলেন শিকারে। শিকারের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছলেন সেই গভীর অরণ্যে। রাজা তখন খুবই ক্ষুধার্ত।

story

সবাই দূরে দেখতে পেল একটা সুন্দর কুটির। সেই কুটিরে বাস করে এক সুন্দরী কন্যা। রাজার লোকেরা তাকে বলল, “রাজা খুব ক্ষুধার্ত। তিনি খাওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন।” পারুল বলল, “আপনারা একটু জিরিয়ে নিন।” সে রান্না করলো পোলাও, কোরমা ও মাংস। নানা রকমের তরকারি। কিন্তু কোনো কিছুতে একটুও নুন দিল না।

এতো রকমের সাজানো খাবার দেখে রাজা খুব খুশি হলেন। তার জিবে এলো জল। রাজা খেতে বসলেন। খাওয়া শুরু করলেন। এটা নেন ওটা নেন। মুখ দিয়ে ফেলে দেন। সুন্দর রান্না তবে বেজায় বিস্বাদ। একটুও নুন নেই কোনো খাবারে।

রাজা খুব বিরক্ত হলেন। নুন ছাড়া কি কিছু খাওয়া যায়? পারুল বলল, “বাবা, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমার নাম পারুল। আপনার ছোট কন্যা। আপনি যাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন।”

রাজা নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। নিজের আদরের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর নুন দিয়ে রান্না করা হলো সব খাবার। রাজা মজা করে খেলেন।

এবার ফেরার পালা। রাজা তাঁর ছোট কন্যা পারুল আর হাতিঘোড়া নিয়ে রওয়ানা হলেন। পারুল ফিরে আসায় রাজ্যে সবার মুখে হাসি ফুটল। রানি খুশি হলেন। শিমুল, বকুল তাদের বোন পারুলকে ফিরে পেল। রাজ্যে সুখের সীমা রইল না।