দিন শেষে আসলে আমরা সবাই একা। একাকীত্ব যেনো সবকিছু ওলোটপালোট না করে দেয়?

এই বিশ্বের সবথেকে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি যেমনঃ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা বিশ্বের শ্রেষ্ট ধনী জেফ বেজোস বা বিল গেটস বা যত বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী বা প্রসিদ্ধ কোন এক ক্ষমতাশালী /সাধারণ ব্যক্তিত্ব হোক না কেন দিন শেষে সবাইকে একাকীত্বের মধ্যে আসতেই হয়।
একাকীত্বতা এত বড় একটা ক্ষণ বা সময় যা আসলেই অনেক কিছু শেখায়।  অনেক কিছুর সমাধান বা ঘটনার জন্ম দেয়। যারা এই একাকীত্ব সময়টা ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারে, তারা হয়তো ভাল কিছু করতে পারে অথবা যারা ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারেনি, তারা হয়তো বা কিছু ভুলভাল করে ফেলে।
তাই, সময়টা সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে না পারলে,জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উলোটপালোট হয়ে যায়।
আমি মানুষ। আমি সৃষ্টির সেরা জীব। যদি প্রশ্ন করা হয় মানুষ কি একা থাকতে পারে? উত্তরঃ না, মানুষ একা থাকতে পারে না। একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা সৃষ্টি জগতের অন্য জীবের মধ্যেও অনুপস্থিত।

আমরা মানুষেরা একা থাকতে চাই না বা সম্ভবও না। কেউ পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে একা থাকে, কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায়। যারা একাকী জীবন বা একাকীত্বকে উপভোগ করতে চায় বা পারে বা কিভাবে করতে হয় জানে তাদের কথা আলাদা।

করোনা পরিস্থিতি ও একের পর এক লক ডাউনের কারণে বাড়িতে আটকে থেকে তাই আমরা হাপিয়ে উঠেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সকল কিছু বন্ধ। মানসিকভাবে অনেকে ভেঙ্গে পড়েছে। অনেকে সুইসাইড করছে।

বাইরে যাওয়ায় বিধিনিষেধ। তাই আমরা নিতে পারছি না। এর থেকে বোঝা যাই একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা আরো কতো মারাত্মক। তাই এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আমাদের কিভাবে এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি সেদিকে নজর দিতে হবে।

একা থাকাকে যখন আমরা নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করি তখনই একাকীত্ব বোধ আসে। এই বোধ তখন আমাদেরকে ভেতর থেকে ভেঙ্গেচুরে দেয়। কুড়ে কুড়ে খায়। এর যন্ত্রণা কতটা ভয়ংকর সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ সুন্দরভাবে বর্ণনা দিতে পারবে না।

আমাদের জীবনে চলার পথে আমরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। সমস্যার সমাধান যখন করতে পারি না বা সমস্যার সমাধান করতে পারলেও বহু প্রাণহানি, কাজকর্মে সীমাবদ্ধতা যেমনঃ করোনা ভাইরাস মহামারী,  তখন নিজেকে একা মনে হয়, তুচ্ছ মনে হয় নিজের কাছে নিজেকে। মানুষ বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

আর এভাবেই জমতে জমতে গড়ে ওঠে মনের মধ্যে একাকীত্বের পাহাড়। একাকীত্ব যখন গ্রাস করে তখন আমাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। মনোযোগ কমে যায়। কোনো কাজ সুন্দর করে করা হয় না। আত্মবিশ্বাস কমতে কমতে আমাদের জীবনের আনন্দগুলোও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। এরপর একসময় এটি মানসিক সমস্যায় পরিণত হয়। ধীরে ধীরে সমস্যাটি অনেক বড় রূপ ধারণ করে। এটি তখনই আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তাই আমাদের মনে রাখতে হবে- একাকীত্বকে আমরা যত প্রশ্রয় দেবো, এটি তত বেশি গ্রাস করতে থাকবে আমাদেরকে অর্থাৎ ভুক্তভোগীকে। একাকীত্ব জীবনকে ঝামেলা না ভেবে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া এবং এটিকে উপভোগ করা প্রয়োজন অনেক বেশি। আমরা কখনই বুঝে উঠতে পারি না, একা থাকার মুহূর্তগুলোতে আমরা কী করবো বা কী করবো না।

আপনি যদি মনে করে থাকেন আপনি একাই একাকিত্বে ভুগছেন তবে আপনি একা নন। বহু মানুষ এই সমস্যাটির মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। এখানে তুলে ধরা হলো একাকীত্ব কি ও একাকীত্ব দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন।

যখন আমাদের খুব কাছের কেউ আমাদের ছেড়ে চলে যায় বা কোন প্রিয়জনের সাথে দূরত্ব আমাদের একাকীত্ব ভোগাতে পারে। একাকীত্বে ভোগা আরো অনেক কারণ থাকতে পারে অনেকে নিজের কর্মস্থল কে পছন্দ করে না যার ফলে একাকীত্বে ভোগেন ।

সবমিলিয়ে একাকীত্ব দূর করতে আপনি নিজে কিছু স্টেপ ফলো করতে পারেন। আর যদি মনে করেন আপনি এটা পারবেন না, তবে অবশ্যই একজন ভালো থেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।

একাকীত্ব দূর করার উপায়:

আপনার সমস্যার পেছনে কারণ যাই হোক না কেন আপনি মেনে নিন আপনি এই সমস্যাটিতে ভুগছেন এবং একে বয়ে যেতে দিন। নিজেকে সময় দিন কারণ সময়ের সাথে সব কষ্টের ক্ষত পূর্ণ হয়ে যায়। চেষ্টা করুন নিজেই নিজের ভালো বন্ধু হতে।

আপনার নিজের অনুভূতি বিশ্লেষণ করুন:

নিজের অনুভূতি আপনার ল্যাপটপে বা আপনার প্রিয় স্মার্ট ফোনটিতে অর্থাৎ গুগল ড্রাইভ বা ব্লগে লিখে রাখতে পারেন। বর্তমান প্রতারণাময়, সংকটাপন্ন ধরাধামে অর্থাৎ পৃথিবীতে অনেক ভালো মন্দ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সর্বদা পতিত হচ্ছি। বিভিন্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই পদ্ধতিটি একদিকে যেমন আপনার নিজের অনুভুতিকে বিশ্লেষণ করার চর্চা বাড়াতে থাকবে তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতাগুলোকে ও অনুভূতিকে সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

নিজের সাথে সময় দিন:

অনেক তো ছোটাছুটি হলো। নাম, অর্থ প্রতিপত্তি, সন্মান কম তো অর্জন হলো না। এবার একটু শান্ত হয়ে নিজেকে সময় দিন। নিজের যত্ন নিন। তাতে আপনার জীবন সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী  অর্থাৎ আপনার ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।

সুস্থ জীবন যাপনের জন্য আপনি খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হন। শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন, সকালে মেডিটেশন করতে পারেন অথবা লেখালেখি করেও সময় পার করতে পারেন। এগুলো আপনাকে নিজের উপর আরও মনোযোগী করে তুলবে।

একাকিত্বের অনুভূতিকে বিশ্লেষণ করুন:

সাইকোলজি বিশেষজ্ঞ স্লাইট এর মতে, নিজের একাকীত্ব কে বিশ্লেষণ করা একাকীত্ব থেকে বের হয়ে আসার একটা ভালো উপায়। নিজেকে প্রশ্ন করুন
আমি কি নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে যাচ্ছি নাকি নিজেই নিজের সাথে তুলনা করছি? নিজের দৃষ্টিকোণ কে কে আমি ইতিবাচকভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা করছি ? আমি কিস শুধু আমার নিজের ব্যর্থতা গুলো কি দেখছি ?

নিজেকে খারাপ বলে প্রতিনিয়ত সম্বোধন করছি ? আমার নিজের শরীর এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আমি কি যত্নবান ? আমি কি আমার নিজের অনুভুতি কে এড়িয়ে চলার জন্য কোন ভুল পথ অবলম্বন করছি ?

আমি কি নিজের চাওয়া পাওয়া ও ইচ্ছাশক্তির কথা চিন্তা না করে অন্যের কথায় প্রভাবিত হচ্ছি ? আমি কি নিজের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ?
এই প্রশ্নগুলো আপনাকে নিজের সম্পর্কে নতুন করে জানতে এবং একাকীত্ব থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করবে।

নিজেকে বারবার প্রশংসিত করুন:

সময় নিন এবং নিজের খারাপ অনুভূতিগুলোকে সময়ের সাথে বয়ে যেতে দিন। অবশ্যই আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু করার আছে। আপনার দক্ষতাকে কাজে লাগাবার ও জীবনকে উপভোগ করার অধিকার অবশ্যই আপনার রয়েছে।