ভৃঙ্গরাজ চুল পড়া, মাথা ব্যথা কমাতে ও চুল কালো করতে দারুন কার্যকরী।
আয়ুর্বেদে ভৃঙ্গরাজ এক ঐতিহ্য। ভৃঙ্গরাজ শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে, চুলের বৃদ্ধি করে, চুলকে শক্তিশালী করতে, চুল কালো করতে এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
২০১১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভৃঙ্গরাজ কার্যকর। এর অর্থ এটি নির্দিষ্ট ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করতে সহায়ক হতে পারে।
চুলের যত্নে আয়ুর্বেদ ঔষধির মধ্যে ভৃঙ্গরাজ (bhringaraj oil) খুবই জনপ্রিয়। এখন তো নানা হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টেও ভৃঙ্গরাজ ব্যবহার করা হয়।
সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের জন্য চুলের যত্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর চুলের যত্নে মানুষ প্রাচীনকাল থেকে যে ভেষজটি ব্যবহার করে আসছে তার নাম কেশরাজ বা কালোকেশী বা ভৃঙ্গরাজ।
ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্রই এ গাছটি পাওয়া যায়। সাধারণত পুকুর ধারে, বনে-জঙ্গলে এই গাছটি বেশি জন্মে।
অত্যন্ত উপকারী একটা ঔষধি ঘাস ফুলের গাছ ভৃঙ্গরাজ। ভৃঙ্গরাজের ফুল সাদা হয়ে থাকে। দেখতে সূর্যমুখী ফুলের মতো। ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদের উপকারিতা হিসাবে পাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফল ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে ভৃঙ্গরাজের পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে কাটা স্থানের ক্ষত শুকিয়ে যায়।
ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদের উপকারিতা
নিচে ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদের উপকারিতা তুলে ধরা হলো –
চুল বৃদ্ধি করে:
২০০৮ সালে একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে ভৃঙ্গরাজ চুল বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং চুল পড়া রোধে বেশি কার্যকর ছিল।
ভ্রিংরাজের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন “ই”, যা চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে এমন ফ্রি র্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পরিচিত।
চুল পড়া কমায়:
চুল পড়া কমানোর জন্য ভৃঙ্গরাজ তেল ওয়ান স্টপ সমাধান। এটি কার্যকরভাবে মাথার ত্বককে শীতল করে এবং স্ট্রেসের মাত্রা হ্রাস করে যা প্রাথমিকভাবে চুল পড়ার প্রধান কারণ।
এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মাথার ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে ফলে চুল পড়া কমে।
খুশকি হ্রাস করে:
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদে যা খুশকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।
এছাড়া এই তেল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা মাথার ত্বকে অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
চুল কালো করতে:
ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদে হরিটাকি এবং জাটামানসি নাম দুটি উপাদান থাকে যা চুলের প্রাকৃতিক রঙ বজায় রাখতে অত্যন্ত উপকারী।
ছোট বেলাতে নেড়া হয়ে গেলে মায়েরা এই পাতার রস করে মাথায় লাগিয়ে দিত। এতে নাকি চুল কালো।
আসলেই সত্য ভৃঙ্গরাজ তেল বা পাতার রস নিয়মিত ব্যবহার ধূসর চুল কালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভ্রিংরাজ চুল ধূসর হওয়ার প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে বা প্রতিরোধ করতে পারে।
মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে:
এই গাছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভৃঙ্গরাজ গাছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি মূত্রনালীর সংক্রমণ চিকিৎসা করতে সহায়তা করে যা সাধারণত ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের কারণে ঘটে।
লিভার টনিক হিসাবে:
ভ্রিংরাজ বা ভৃঙ্গরাজ গাছের পাতার রস আয়ুর্বেদিক ওষুধে লিভারের টনিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, এই ভেষজটি লিভারের কোষ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।
ত্বকের জন্য ভালো:
ভৃঙ্গরাজ তেল ত্বকের শুস্কতা দূর করে ত্বক হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করতে পারে। ভৃঙ্গরাজ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি সমৃদ্ধ, তাই এটি ত্বকের প্রদাহ যেমন ব্রণের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।
মাথা ব্যথা কমাতে:
যাদের মাথা অল্পতেই গরম হয়ে যায় তাদের জন্য ভৃঙ্গরাজর হতে পারে অনন্য সমাধান। ভৃঙ্গরাজর পাতা বেটে মাথায় প্রলেপ লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখলে মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং মাথাব্যথা কমে যায়।
স্মৃতিশক্তি উন্নতি করতে:
২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যখন ভৃঙ্গরাজ অশ্বগন্ধা এর সাথে মিলিত হয়েছিল, তখন এটি মস্তিষ্কের আলঝাইমার সম্পর্কিত স্মৃতিশক্তি উন্নতি করতে পেরেছিল।
উকুননাশক:
ভৃঙ্গরাজের পাতার রস চুলের গোড়ায় লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন।
এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার এটা করুন। এক মাসের মধ্য চুল হবে উকুনমুক্ত।
কৃমি কমে যায়:
কৃমি প্রতিরোধে ভৃঙ্গরাজ একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ভৃঙ্গরাজ এর পাতা গরম পানিতে দিয়ে নির্যাস বের করে বা কয়েকটি পাতা বেটে খেলে কৃমি কমে যায়।
কাশির প্রকোপ কমাতে:
ভৃঙ্গরাজ কাশির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের কাশির সমস্যা আছে তারা ভৃঙ্গরাজের কয়েকটি পাতা বেটে খেলে কাশি উপশম হয়।
চুলের জন্য ভালো:
চুলের জন্য অনেক উপকারী হওয়াই অনেকে একে কেশরাজকে বলে। পাতা, ফুল ও ফলসহ বেটে রস তৈরী করে নিয়মিত কিছুদিন মাথায় দিলে, চুল পড়া বন্ধ হবে, চুল লম্বা ও কালো হবে।
এছাড়া ২৫০ এম এল নারিকেল তেলের সাথে এক কাপ কেশরাজের কাঁচা রস, তার সাথে আমলকি ১টি, জবাফুল ১টি, ১ চা চামচ মেথী দানা এক সাথে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেকে কাঁচের বোতলে সংগ্রহ করে রাখা যায়।
তৈরীকৃত মিশ্রনটি মাথায় মালিশ করলে মাথা ঠাণ্ডা হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে, চুল লম্বা ও কালো হবে।
কেটে যাওয়া স্থানে:
শরীরের কেটে যাওয়া স্থানে ভৃঙ্গরাজের পাতা বেটে পেস্ট করে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ধীরে ধীরে কাটা স্থানের ক্ষত শুকিয়ে যায়।
সতর্কতা:
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।