পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীর ভালো রাখতে যেসব খাবার খাবেন।

সাধারণত ১০-১৩ বছর বয়সে শুরু হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মে ৪৫-৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত চলে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মাসেই মাসিক হয়ে থাকে এবং তা ৩ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। মেয়েদের প্রতি ২৪ থেকে ৩২ দিন অর্থাত্‍ গড়ে ২৮ দিন পর পর মাসিক হয়।

নারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হল মেন্সট্রুয়েশন সাইকেল বা পিরিয়ড। এ সময় নারীদের পরিচ্ছন্ন থাকা যেমন জরুরি, তেমনি খাবারের বিষয়ে একটু গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ পিরিয়ডের সময়ে পরিচ্ছন্নতা, খাবার, বিশ্রাম নেয়া ও হাঁটাচলায় সাবধানতা জরুরি। আসুন জেনে নেই দেহ ও মন সুস্থ রাখতে পিরিয়ডের সময় যেসব খাবার খাবেন-

সবুজ শাকসবজি:

পিরিয়ডের সময় আপনার শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে যাওয়া স্বাভাবিক, সবুজ শাকসবজিতে আছে প্রচুর আয়রন আছে যা শরীরের আয়রন পূরণে সহায়তা করে। তাই প্রতি বেলার খাবারে রাখুন সবুজ শাক সবজি। বিশেষ করে কচু শাক, পালংশাক ইত্যাদি এসময় বেশি উপকারী।

কলা:

কলা পটাশিয়ামের ও ভিটামিনের খুব ভালো উৎস, যা পিরিয়ডের সময় আপনার জন্য জরুরি। কলাতে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি আছে, যা খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এনার্জি আসে। শরীরের রক্তক্ষরণের জন্য শরীর কয়েকদিন দুর্বল থাকে। তাই এই দুর্বলতা কাটাতে প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় একটি কলা রাখুন।

পানি:

প্রচুর পরিমানে পানি পান করা সবসময়ই ভালো। পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। এই অভাব পূরণ করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে অন্য কোনো পানীয় যেমন চা, কফি, কোলা ইত্যাদি দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ হবে না।

চিকেন:

চিকেন হল আরেকটি আয়রন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা আপনি পিরিয়ডের সময় ডায়েটে যোগ করতে পারেন। প্রোটিন খাওয়া সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, এবং এটি আপনার পিরিয়ডের সময় আপনাকে পূর্ণ এবং স্যাটেড রাখতে সহায়তা করতে পারে।

ডার্ক চকলেট:

ডার্ক চকলেট শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ ও ঠাণ্ডা করে এবং মেজাজ ঠাণ্ডা করে তাই এটি পিরিয়ডের সময় খাওয়া ভালো। একটি সুস্বাদু এবং উপকারী খাবার, ডার্ক চকোলেট আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ ডার্ক চকোলেটে ১০০ গ্রাম আয়রন থাকে এবং ৫৮% ম্যাগনেসিয়াম থাকে।

২০১০ সালের একটি স্টাডি ট্রাস্টেড উৎস থেকে পাওয়া যায় যে, ম্যাগনেসিয়াম পিএমএস (PMS) লক্ষণের তীব্রতা হ্রাস করে।

ফলমূল:

পানি-সমৃদ্ধ ফল যেমন তরমুজ এবং শসা হাইড্রেটেড থাকার জন্য দুর্দান্ত। এছাড়া শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন “সি” জরুরি। কিছু সহজলভ্য ফল যেমন পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন “সি” পাওয়া যায়।

পিরিয়ডের সময় এ ফলগুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাই পিরিয়ডের সময় আপনার পছন্দসই নানা ধরনের ফলমূল খাবার টেবিলে রাখুন।

আদা:

মাসিক ব্যথা বা ঋতুস্রাবের সময় হওয়া পেটে ব্যথা কমাতে আদা খুবই কার্যকরী। ১৫০ জন মহিলার একটি সমীক্ষায়, মাসিকের প্রথম ৩ দিনের জন্য প্রতিদিন ১ গ্রাম আদা খেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে তাদের ব্যথা তুলনামূলক ভাবে কমেছিল। আদা ব্যথা নাশক ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:

যেসব খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় যেমন মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচু শাক, পুঁই শাক, ডাটা শাক, ফুলকপির পাতা, ছোলা শাক, ধনে পাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ও আমড়া খাবার চেষ্টা করতে হবে। এই খাবারগুলো শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে।

দারুচিনি:

পিরিয়ডের ব্যথা উপশমে দারুণ কাজ করে দারুচিনি। এক টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়ো চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এতে সামান্য মধু মিশিয়ে খান। পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুই-তিন দিন আগে থেকে এই চা দুই-তিন কাপ খেলে ব্যথা থাকবে না।

মাছ:

সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড থাকে। এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করে এবং ব্যথা কমাতেও ভূমিকা রাখে। ২০১২ সালের এক গবেষণা অনুসারে ওমেগা-3 পিরিয়ডের সময়ে ব্যথার তীব্রতা হ্রাস করতে পারে।

হলুদ:

হলুদ একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি মশলা হিসাবে পরিচিত। হলুদে থাকা কার্কিউমিন এটির প্রধান সক্রিয় উপাদান। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় কারকুমিনের প্রভাবগুলি লক্ষ্য করা গেছে এবং দেখা গেছে যে, যারা কারকুমিন গ্রহণ করেছেন তাদের কম গুরুতর লক্ষণ রয়েছে।

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার:

বাদামে নানান রকম ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে যা পিরিয়ডের সময় শরীরের জন্য ভালো। বেশিরভাগ বাদাম ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ এবং এগুলি প্রোটিনের দুর্দান্ত উৎস। এছাড়া বাদামে ম্যাগনেসিয়াম এবং বিভিন্ন ভিটামিন থাকে।

চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি পিরিয়ডজনিত শরীরের ঘাটতি পূরণে বেশ উপকারী। সাথে কুমড়ার বীজ সহ নানা ধরণের বীজ রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়।

পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত লবণ, অতিরিক্ত চিনি, কফি, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা।

রেফারেন্স: