নিরামিষ ভোজীদের জন্য আমিষ সমৃদ্ধ খাবার।

আজকাল অনেকেই আছে যারা নিয়মিত নিরামিষ খাবার খায়। বলতে গেলে, আমিষের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ শরীর ঠিক রাখতে নিরামিষ খান, আবার কেউ মনের সংস্কারে এই পন্থা নেন। কিন্তু শরীরতো এত কিছু বোঝে না। তার তো সুষম খাবার দরকার।

শরীরের পেশীগুলোকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন অর্থাৎ আমিষ আমাদের দিতে হয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সারাদিনে ৫৫ গ্রাম আমিষের দরকার হয়। এবার সেই আমিষ কিভাবে তারা গ্রহণ করবে?

আমেরিকাতেও এখন ৪০ লাখ লোক নিরামিষভোজী। এবার কথা হলো তারা আমিষ পাবে কোথা থেকে। এদের জন্য আমিষের একমাত্র পথ হলো নিরামিষ খাবারের মধ্যে আমিষ খোজ।

কিছু কিছু নিরামিষ খাবার আছে যেগুলোতে আমিষের পরিমান বেশি। নিরামিষ খাবারে সবথেকে বড় সুবিধা হলো কোলেস্টেরল কম, চর্বি কম, ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কম, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কম থাকে।

সুস্থ্য শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কষ্টকর হয়ে পড়ে।

নিরামিষ ভোজীদের জন্য আমিষ সমৃদ্ধ খাবার

নিরামিষ ভোজীদের জন্য আমিষ সমৃদ্ধ খাবার নিচে দেওয়া হলো –

শুকনা ফল ও বাদাম:

কাঠবাদাম, পেস্তা, কিশমিশ, ওয়ালনাট ইত্যাদি আমিষে ভরপুর। এতে আনস্যাচুরেইটেড চর্বি থাকে। প্রতিদিন একমুঠ বাদাম খেলে আপনি নিশ্চিত ভাবে শরীরের জন্য প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় আঁশ, ভিটামিন, আয়রন এবং আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। ২৫ গ্রাম শুকনা ফল ও বাদাম ২.৮ গ্রাম আমিষ থাকে।

ডাল জাতীয় খাবার:

আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষই তাদের খাদ্য তালিকায় ডাল রাখেন। এই ডাল জাতীয় খাবার সবর্দাই প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম ডালে ২২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই সবসময় খাবারের তালিকায় ডাল রাখতেই পারেন, যদি আপনি নিরামিষ ভোজী হন।

সয়াবিন:

নিরামিষ ভোজীদের জন্য সয়াবিন হচ্ছে প্রোটিনের সেরা উৎস। এটা ফাইবার (আঁশ) উপাদানেও সমৃদ্ধ। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের সেরা উপাদানগুলোর অন্যতম সয়াবিন। ভিটামিন ও প্রোটিনে ভরপুর এই খাবার আদতে সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।

সয়াবিনের প্রধান প্রোটিন গ্লাইসিনিন এবং কংগেলিসিনিন যা সয়াবিনের প্রায় ৮০% প্রোটিন উপাদান তৈরি করে। যে কোনও প্রাণিজ প্রোটিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে সয়াবিন। তাই নিরামিষাশীদের ডায়েটে এই খাদ্য রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

সয়াবিনের প্রোটিন মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সকে সতেজ রাখে, তার কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে সহজে ক্লান্তি আসে না। প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে প্রোটিনের পরিমাণ ৪৩ গ্রাম।

সূর্যমুখীর বীজ:

বীজকে প্রোটিনের পাওয়ার হাউস বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ- সূর্যমুখীর বীজ। এই বীজে প্রতি ১০০ ক্যালরিতে ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও তিলের বীজ, কুমড়োর বীজ প্রোটিনের এক ভালো উৎস।

কাঁঠালের বীজ:

কাঁঠালের বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিনের উপস্থিতি শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শক্ত পেশী গঠনে সহায়তা করে। কাঁঠালের বীজে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে, তা দেহের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

তাই নিরামিষ ভোজীরা তাদের খাদ্য তালিকায় আমিষের চাহিদা পূরণ করতে কাঁঠালের বীজ রাখতে পারেন।

শিমের বীজ:

প্রোটিন বা আমিষ শিমের বীজের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা দেহকে সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিমের বীজে দুই ধরণের প্রোটিনের উৎস: সম্পূর্ণ আমিষ এবং অসম্পূর্ণ আমিষ।

শিমের বীজ নিরামিষ ভোজীদের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ১০০ গ্রাম শিমের বীজে আমিষ আছে প্রায় ২৫ গ্রাম।

দুধ:

দুধ নিরামিষ ভোজীদের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটা খাবার। কারণ দুধ হল আমিষে ভরপুর একটি পানীয়। আমিষ আমাদের দেহে বৃদ্ধি এবং বিকাশ, সেলুলার মেরামত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।

দুধকে একটি “সম্পূর্ণ আমিষ” হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দুধে প্রধানত দুটি প্রোটিন পাওয়া যায়- কেসিন (casein) এবং হুই প্রোটিন (whey protein)। এই দুইটি প্রোটিনই (আমিষ) হলো উচ্চ মানের প্রোটিন।

একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যায়াম করার পরে দুধ পান করলে পেশীর ক্ষতি হ্রাস পাই এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। এক কাপ দুধে ৮ গ্রাম আমিষ ও ১৪৯% ক্যালোরি থাকে।

ব্রকলি:

ব্রকলি হল স্বাস্থ্যকর সবজি যা ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে”, ফাইবার এবং পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ। ব্রকলিতে ফাইটোকেমিক্যালস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসও রয়েছে। ফাইটোকেমিক্যাল এমন একটি রাসায়নিক যা রঙ এবং গন্ধ ধারণ করে। এই ফাইটোকেমিক্যালস ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভাল। এক কাপ ব্রকলিতে ৩ গ্রাম আমিষ ও ৩১% ক্যালোরি রয়েছে।

পনির:

পনির নিরামিষ ভোজীদের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পনিরে ফ্যাট ও ক্যালোরি কম থাকে। এটি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি১২, রিবোফ্লোবিন (ভিটামিন বি২) সমৃদ্ধ। ২২৬ গ্রাম পনির থেকে ২৮ গ্রাম আমিষ এবং ১৬৩% ক্যালোরি পাওয়া যায়।

ওটস:

ওটস খুবই স্বাস্থ্যকর। এতে ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, থায়ামিন (ভিটামিন বি১) এবং অন্যানো বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এক কাপ ওটসে ১১ গ্রাম আমিষ এবং ৩০৭% ক্যালোরি রয়েছে।

রেফারেন্স: