ড্ৰাই ফ্রুটস খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা।
পুষ্টি গুণের পাওয়ার হাউস বলা হয় মিক্সড ড্ৰাই ফ্রুটসকে। বাঙালির রান্নাঘরে অবাধ যাতায়াত শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটসের।
পায়েস থেকে শুরু করে পোলাও কিংবা হালুয়া সবক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ ড্রাই ফ্রুটসের। এছাড়াও পুষ্টিগুণের জন্য ড্রাই ফ্রুটসের চাহিদাও বেশ রয়েছে।
শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয় স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর জুড়ি মেলা ভার। শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটস বিভিন্ন ভিটামিন, এসেন্সিয়াল ফ্যাট এবং অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টির একটি উচ্চ উৎস। পুষ্টিবিদরা বলেছেন, ড্রাই ফ্রুটসে থাকে প্রচুর পুষ্টিগুণ।
ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসে ভরপুর থাকে ড্রাই ফ্রুটস, যা প্রতিদিনের ডায়েটে থাকলে ডায়াবেটিস ও ওবেসিটির মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়া অন্ত্রের সমস্যা বা ক্যান্সার, হার্ট ডিজিস, ডায়াবেটিস, ব্রেন ডিজিসের মতো রোগ থেকেও দূরে রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও মুক্তি মেলে এ খাবার খেলে।
প্রাকৃতিকভাবে ড্রাই ফ্রুটসে চিনি থাকে বলে আলাদাভাবে চিনি খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ খাবার খেলে শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি হয়।
ড্রাই ফ্রুটস কি?
নানা ধরনের ফল যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় খাওয়া যায়, তেমনি শুকিয়েও খাওয়া যায়। ড্রাই ফ্রুটস আসলে তাজা ফলকে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ফলকে সূর্যের তাপে শুকানো হয় অথবা প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুকানো হয়।
যেকোনো সময়ের নাস্তার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত এই ড্রাই ফ্রুটস। এই শুকনো ফল ও বাদামগুলো একত্রে ‘ড্রাই ফ্রুটস’ নামেই পরিচিত। কাঠ বাদাম, কাজুবাদাম, কিসমিস, আখরোট, পেস্তা বাদাম এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ড্রাই ফ্রুটস।
ড্রাই ফ্রুটসে চিনির পরিমান
প্রাকৃতিকভাবে ড্রাই ফ্রুটসে চিনি এবং ক্যালোরি বেশি থাকে। ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। নীচে শুকনো ফলের প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ দেওয়া হলো –
- কিসমিস: ৫৯%
- খেজুরে: ৬৪–৬৬%
- চীনাবাদাম: ৪.৭ গ্রাম
- আখরোট: ০.৭ গ্রাম
এই চিনি সামগ্রীর প্রায় ২২-৫৫% ফ্রুক্টোজ। প্রচুর ফ্রুক্টোজ খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে ওজন বৃদ্ধি, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
নিচে ড্রাই ফ্রুটস এবং উপকারিতা দেওয়া হলো –
বাদাম:
বাদামে রয়েছে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন “ই”, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাংগানিজসহ আরও অনেক উপকারী পুষ্টি উপাদান।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে বাদাম। এছাড়া বাদাম ক্লান্তিভাব দূর করে এনার্জি বৃদ্ধিতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে খুবই কার্যকরী।
এছাড়া বাদাম চুল, ত্বক এবং দাঁতের জন্য দারুণ হওয়ার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে বলে জানা যায়।
কিসমিস:
কিসমিস আঙ্গুর থেকে তৈরি, মিষ্টি এবং সুস্বাদু খাবার উভয় প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।
এগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল এবং অ্যাসিডিটি হ্রাস করতে এবং হজমে সহায়তা করতে পরিচিত। কিসমিস কিছু নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
এতে ফাইবার, পটাসিয়াম এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে। কিসমিসে নিম্ন থেকে মাঝারি গ্লাইসেমিক সূচক মান রয়েছে।
এর অর্থ হল খাবারের পরে কিসমিস ব্লাড সুগার বা ইনসুলিনের মাত্রায় বড় স্পাইক তৈরি করে না।
অধ্যয়নগুলি দেখায় যে, কিসমিস রক্তচাপ কমায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং পেট ভরিয়ে রাখে ফলে টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে অবদান রাখে।
খেজুর:
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে।
ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত পটাশিয়াম সব হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমায়।
খেজুরে উপস্থিত খনিজ এবং ভিটামিন হাড় শক্ত করে, ফলে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এতে গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে যার অর্থ এগুলি খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রায় বড় স্পাইক তৈরি করে না।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৬৯ জন মহিলা যারা তাদের নির্ধারিত তারিখের আগে ৪ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ৬ টি খেজুর গ্রহণ করেছিলেন।
তাদের প্রাকৃতিকভাবে শ্রমে যাওয়ার সম্ভাবনা ২০% বেশি ছিল এবং যারা এগুলি খায়নি তাদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম সময়ের জন্য শ্রমের মধ্যে ছিলেন।
আমন্ড:
কাঠবাদামে আছে অত্যাবশ্যক ফ্যাটি এসিড, ফাইবার এবং প্রোটিন। ব্রণ প্রতিহত করার জন্য কাঠবাদাম অত্যন্ত কার্যকর।
আমন্ড(Almond) এর উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমে আসে ক্যান্সাররোগ দূরে রাখার কথা। Almond অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের একটি চমৎকার উৎস।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে সহায়তা করে, যা আপনার কোষের অণুগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যা ক্যান্সাররের মতো রোগকে প্রতিহত করতে পারে।
এই বাদাম খেলে উচ্চমাত্রার HDL বা ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
এছাড়াও কাঠবাদাম রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি শরীরে লাং এবং স্তন ক্যান্সার সৃষ্টি হতে বাধা দেয়।
আখরোট:
আখরোট মস্তিষ্কের খাবার হিসাবে পরিচিত। মস্তিষ্কের ৬৯% ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দিয়ে গঠিত, যা আখরোটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এই বাদাম ফাইবার, আন্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। আখরোট হার্টের অসুখ হওয়ার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ১০% হ্রাস করতে পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে, এছাড়া আখরোটে থাকা পলিফেনল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
আখরোট ইউরোলিথিন হরমোনজনিত ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে, বিশেষত স্তন এবং প্রস্টেট ক্যান্সার।
কাজুবাদাম:
কাজুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কপার, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের এক দুর্দান্ত উৎস কাজু বাদাম যা, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া এই বাদামটি ওজন কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ও হার্টের জন্য ভালো।
এছাড়া কাজুবাদাম ভিটামিন “ই” এর সমৃদ্ধ উৎস। এটি নিয়মিত খেলে ত্বকের জন্য অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করবে। কাজু বাদাম কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, মাইগ্রেন এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।