চুলের জন্য কোন ভিটামিন গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
স্বাস্থ্যউজ্জ্বল কালো ঝলমলে চুল আমরা সকলেই পছন্দ করি। আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের চুল যেন ঘন ও লম্বা হয়। কিন্তু মুখ থেকে বললেই তা সম্ভব হয় না এর জন্য চুলের যত্ন নেওয়া জরুরী।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, চুলের জন্য কোন ভিটামিন গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ –
ভিটামিন “ই”:
চুলের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হলো ভিটামিন “ই”। ভিটামিন “সি” এর মতোই, ভিটামিন “ই” ও একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ফ্রি রেডিকেল কমিয়ে চুল বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন “ই” ৩৪.৫% পর্যন্ত চুলের গ্রোথ বাড়ায়।
সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, পালং শাক, ব্রকলি, অলিভ অয়েল, মিষ্টি কুমড়ার বীজ এবং অ্যাভোকাডো ভিটামিন “ই” এর ভালো উৎস।
ভিটামিন “এ”:
চুল মানবদেহে দ্রুত বর্ধমান টিস্যু। ভিটামিন “এ” চুলকে ময়শ্চারাইজড রাখতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন “এ” ত্বকের গ্রন্থিগুলিকে সেবুম (Sebum) নামে একটি তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করতে সহায়তা করে। সেবুম মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
মিষ্টি আলু, গাজর, কুমড়ো, পালংশাক, দুধ, ডিম এবং দইতে আছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারটিন যা পরবর্তীতে ভিটামিন “এ” তে রূপান্তরিত হয়। তাই ভিটামিন “এ” আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন “বি”:
চুলের বৃদ্ধির জন্য অন্যতম পরিচিত ভিটামিন হল বায়োটিন নামক একটি “বি” ভিটামিন। বায়োটিনের ঘাটতি থাকার করণে চুল পরে বা কমে যেতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন “বি” লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে যা মাথার ত্বকে এবং চুলের গ্রন্থিতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি বহন করে।
এই প্রক্রিয়াগুলি চুলের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মাংস, কলিজা, ডিমের কুসুম, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ভিটামিন “বি” এর একটি ভালো উৎস।
ভিটামিন “সি”:
কোলাজেন চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোলাজেন তৈরির জন্য ভিটামিন “সি” প্রয়োজন এবং চুলকে বার্ধক্য থেকে রোধ করতে সহায়তা করে। ভিটামিন “সি” খুবই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিক্যাল ধংস করে চুলের বৃদ্ধিকে ঠিক রাখে।
এছাড়াও ভিটামিন “সি” আমাদের শরীরে আয়রন শোষিত করতে সহায়তা করে, যা চুল বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। স্ট্রবেরি, মরিচ, পেয়ারা, আমলকি, কমলালেবু, জাম্বুরা সহ টক জাতীয় সকল মৌসুমি ফল ভিটামিন “সি” এর ভালো উৎস।
ভিটামিন “ডি”:
ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতির কারণে চুল ঝরে পড়ে যাওয়া। ভিটামিন “ডি” মাথার ত্বকের ক্ষুদ্র ছিদ্র থেকে নতুন চুল বের হতে সাহায্য করে। সূর্যের এক্সপোজারের মাধ্যমে বা নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেয়ে আমাদের শরীরে ভিটামিন “ডি” এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলা যায়।
ভিটামিন “ডি” এর ভালো উৎস গুলোর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, সয়াবিন, পনীর, চিংড়ি, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
আয়রন:
আয়রন চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ আয়রন দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এর সরবরাহ করে, যা চুলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়েরাই রক্তস্বল্পতায় ভোগে যা চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ।
লাল মাংস, ডিম, পালংশাক, পাটশাক, কচুশাক, লালশাক, পেঁপে, ধনেপাতা, ফুলকপি পাতা, ছোলা, কচুর মুখী, কলিজা ও গুড় আয়রনের ভালো উৎস।
প্রোটিন:
মানুষের চেহারার সৌন্দর্য বা মাধুর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো চুল। চুলের ৮০ ভাগই প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তাই প্রোটিন চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম, ওটস, মুসুর ডাল, সয়াবিন প্রোটিনের ভালো উৎস।
অনেক মানুষ তাদের চুল এবং চুলের রং তাদের সর্বশ্রেষ্ট সৌন্দর্য সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে। তাই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি তেলের পরিচর্যা তো চাই। সঙ্গে দরকার প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খান, চুলের যত্ন নিন।