কলমি শাক রক্ত শূন্যতা দূর করে, হাড় শক্ত করে, চোখ ও ত্বকের জন্য ভালো।
গ্রামে অবহেলিত শাক কলমি। আমাদের দেশে পুকুর, নদী, ডোবা, হাওর ও খাল-বিলে অযত্নে অবহেলায় পুষ্টির ভান্ডার নিয়ে বেড়ে ওঠে এই কলমি শাক।
দামে সস্তা অথচ পুষ্টিগুণে অনন্য এমন খাবারের নামের তালিকার প্রথমে উঠে আসবে কলমি শাকের নাম। এই শাক মালয়শিয়ান ও চীনা খাবারে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ভারতে এটি সাধারণত “পানি পালক” নামে পরিচিত। আমাদের দেশে সাধারনত কলমি শাক ভাজি ও পাকড়া করে খাওয়া হয়।
কলমি শাক একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এতে রয়েছে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, ক্যালসিয়াম, আয়রন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
এই শাককে বসন্ত রোগের প্রতিষেধক বলা হয়। কলমি শাকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন তাদের খাদ্য তালিকায় উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ কলমি শাক রাখতে পারেন।
কলমি শাকের পুষ্টিগুণ:
কলমি শাক যেন পুষ্টি পাওয়ার হাউস। এটার রসও খুব উপকারী। কলমি শাকে অনেক উপকারী উপাদান আছে। উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেওয়া হলো:
- পানি: ৯০% (RDA)
- প্রোটিন: ৪.৫% (RDA)
- ফাইবার: ৫.৫% (RDA)
- কর্বোহাইড্রেট: ২% (RDA)
- ভিটামিন “সি”: ৯২% (RDA)
- ভিটামিন “এ”: ২১০% (RDA)
- আইরন: ২১% (RDA)
- ম্যাগনেশিয়াম: ১৮% (RDA)
- সোডিয়াম: ৭.৫% (RDA)
- ক্যালসিয়াম: ৮% (RDA)
কলমি শাকের উপকারীতা:
কলমি শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। নিচে কলমি শাকের উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে:
যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হয় না তখন সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্যতা (Constipation) বলে থাকি। অনেক সময় ১-২ দিন পরপর মলের বেগ আসে।
ডাক্তারদের মতে, কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করে তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কলমি শাকে ৫.৫% ফাইবার আছে। তাই নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হবে।
হাড় মজবুত করতে:
কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে বলে এ শাক হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের খাদ্য তালিকায় কলমি শাক রাখা উচিত।
ফোড়া ফাটতে সাহায্য করে:
ফোড়া ফাটতে সাহায্য করে কলমি শাক। এক্ষেত্রে কলমী পাতা তুলে একটু আদাসহ পাটায় বেটে ফোড়ার চারপাশে লেপে দিয়ে মাঝখানে খালি রাখতে হবে।
দুই এক দিন এইভাবে লেপে দিলে ফোড়া ফেটে যাবে এবং পুঁজ বেরিয়ে শুকিয়ে যাবে।
চোখের জন্য ভালো:
যেকোনো শাক সবজি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কলমি শাকে প্রচুর ভিটামিন “এ” আছে। প্রতি ১০০ গ্রামে ২১০% ভিটামিন “এ” আছে। তাই এটা চোখের জন্য খুবই ভালো।
পোকা-মাকড়ের কামড়ের যন্ত্রণা কমায়:
কলমি শাকের ডিটক্সাইফাইং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ত্বকের চুলকানি, পিঁপড়া, মৌমাছি, বিছা বা কোন পোকা-মাকড় কামড়ালে কলমী শাকের পাতা ডগাসহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।
ত্বকের জন্য ভালো:
কলমি শাক চুল ও ত্বকের জন্য ভালো।
কলমি শাকের রস পান করলে শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে আমাদের ত্বককে করে তোলে তারুণ্যময়।
এছাড়া ত্বকের পিম্পলস এবং ব্রণ নিরাময়ে সহায়তা করে।
জল বসন্ত রোগে:
বসন্তরোগ বা জলবসন্ত বা চিকেনপক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এটি ভাইরাস বাহিত একটি রোগ। কলমি শাক জল বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
রক্ত শূন্যতা দূর করে:
সুস্থ জীবনযাপনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। কলমি শাক রক্ত শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ এতে ২১% আয়রন আছে।
এছাড়া কলার মোচা, বিট, লেটুস, ব্রকোলি ইত্যাদি রক্ত শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে:
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে কলমি শাক বেশ কার্যকরী। জন্মের পর শিশু ঠিক মতো মায়ের বুকের দুধ না পেলে, মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
নিয়মিত সবুজ শাক সবজি খেলে রোগ প্রতিরোধ শক্তিশালী হয়। কলমি শাকে প্রচুর ভিটামিন “সি” রয়েছে। যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সর্দি কাশির জন্যও উপকারী।
আমাশয় রোগীদের জন্য উপকারী:
আমাশয় একটি অতিসাধারণ রোগ, যা মানব অন্ত্রে সংক্রমণের মাধ্যমে ঘটে থাকে।
সাধারণত, অ্যান্টামিবা হিস্টোলাইটিকা কিংবা সিগেলা গণভুক্ত ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণ করে।
কলমির পাতার রসের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত খেলে আমাশয়ের উপশম হয়।
সতর্কতা:
যারা ইউরিক এসিডিটিতে ভুগছেন কিংবা কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
যেহেতু কলমি শাক খুবই উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর তাই আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় মাঝে মাঝে কলমি শাক থাকা জরুরী।
stylecraze, wikipedia