করমচা কি গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের সমস্যা বা ইউরিন ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে?
হ্যা, করমচা গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। এই ফলটি বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মতো ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। কারণ এতে শক্তিশালী অ্যান্টি-হেলমেটিক এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
করমচা , টক জাতীয় বর্ষাকালীন ফলের নাম। কাঁচা ফল সবুজ , পরিণত অবস্থায় যা ম্যাজেন্টা লাল-রং ধারন করে। কাঁটায় ভরা এ গাছটি গ্রাম থেকে এখন শহরেও চাষ হয়। কারও কারও বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দায়ও দেখা মেলে করমচার। করমচা পুষ্টিগুণে যেমন সমৃদ্ধ।
বাইরের দেশে গর্ভাবস্থায় ইউরিন বা প্রস্রাবের ইনফেকশন বা দোষ কমাতে ক্র্যানবেরি জুস খেতে বলা হয়। আমাদের দেশে জৈষ্ঠ্য আষাঢ় মাসে ব্ল্যাকবেরি বা কালোজামের পর পরই আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে করমচা পাওয়া যায় যেটি ক্র্যানবেরি জুইসের মতো কাজ করে ইউরিন ইনফেকশন কমাতে।
কাঁটাযুক্ত গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে। তবে এটা চাষও করা সম্ভব। ঝোঁপের মতো বলে গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বাড়ির সীমানায় বেড়া হিসেবে লাগানো হয়।
করমচা গণভুক্ত কাঁটাময় গুল্মজাতীয় করমচা উদ্ভিদটি এশিয়া , আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পাওয়া যায়। অত্যন্ত টক স্বাদের এই ফলটি খাওয়া যায় , যদিও এর গাছ বিষাক্ত। করমচার ঝোপ দেখতে সুন্দর। টক স্বাদের ফল করমচা।
করমচা টক স্বাদের ছোট আকৃতির একটি ফল। ইংরেজিতে একে Bengal currant বা Christ’s thorn karonda, natal plum বলা হয়। করমচার বৈজ্ঞানিক নাম: Carissa carandas. করমচা পুষ্টিগুণে যেমন সমৃদ্ধ। তেমনি আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
প্রতি ১০০ গ্রাম করমচায় আছে শর্করা-১৪ গ্রাম, প্রোটিন-০.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ-৪০ আইইউ, ভিটামিন সি- ৩৮ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন-০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন-০.২ মিলিগ্রাম, আয়রন-১.৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-১৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম-২৬০ মিলিগ্রাম, কপার-০.২ মিলিগ্রাম।
করমচাতে কোনো ফ্যাট বা কোলেস্টেরল নেই। তাই ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের জন্য এ ফলটি খুব উপকারী।
গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা:
করমচা অবহেলিত হওয়ায় দিনে দিনে এই ফলটি আমাদের সকলের কাছে অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে। অবহেলিত হলেও এর পুষ্টিগুণ কিন্তু মোটেও অবহেলা করার মতো না। নিচে আর উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
হজম উন্নতি করে:
গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে হজম স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুব জরুরি। মায়ের হজম স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কম ওজনের বাচ্চা জন্মানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। করমচাতে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দ্রবণীয় ফাইবার হজম সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। করমোচাতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই ভিটামিন “সি”- এর জুড়ি মেলা ভার। রোগ প্রতিরোধী ব্যাবস্থা শক্তিশালী হলে সহজে রোগবালাই শরীরের ধারে ঘেঁষতে পারে না। তাই বর্ষার সময়ে এই টক ফলটি কেউ মিস করবেন না।
খাবারে রুচি বাড়ায়:
আমাদের বাঙালিদের শেষ পাতে টক বা চাটনি না খেলে যেমন জমে না তেমনি এটি হজম ও খাবারে রুচি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অল্প একটু গুড় বা চিনি ও সর্ষে ফোঁড়ন দিয়ে চাটনী রেঁধে গর্ভবতী মা খেলে মুখের রুচি বৃদ্ধি পাবে। প্রসাবের দোষ কেটে যাবে। পাশাপাশি স্কাভি, দাঁত ও মাঢ়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
জ্বরের জন্য ভালো:
এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” থাকায় বহু দিন ধরে জ্বরের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভিটামিন “সি” অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে তাই করমচা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
চোখের জন্য ভালো:
ভিটামিন “সি” এর পাশাপাশি করমচাতে ভিটামিন “এ” আছে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়া এতে থাকা বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ও গর্ভের বাচ্চার দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
সতর্কতা:
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে করমচা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।