কচুরিপানা জলজ উদ্ভিদ ও এই সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য।

কচুরিপানা বা Water hyacinth হলো একটি (free-floating perennial aquatic plant)-নিখরচায়িত বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ (বা হাইড্রোফাইট) গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয়।

পাতাগুলি 10-20 সেমি (4-8 ইঞ্চি) জুড়ে একটি কান্ডের উপরে থাকে যা জলের পৃষ্ঠের উপরে তার গোড়ায় বুয়্যান্ট বাল্বের মতো নোডুলের সাহায্যে ভাসমান। তাদের দীর্ঘ, স্পঞ্জি এবং বাল্বস ডালপালা রয়েছে।

এর ইংরেজি নাম water hyacinths। বৈজ্ঞানিক নাম:Eichhornia crassipes । সাতটি প্রজাতি আছে এবং এরা মিলে আইকরনিয়া গণটি গঠন করেছে। কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা।

কচুরিপানা কি ক্ষতিকারক?

ওয়াটার হ্য্যাসিথ (আইছোরিনিয়া ক্র্যাসিপস), দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয়, তবে এখন পুরো বিশ্ব গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে একটি পরিবেশগত এবং সামাজিক মারাত্মক পরিবেশ এবং মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে। এর বেশিরভাগটি ক্ষতিকারক, যদিও অল্প কিছু উপকারীতা এর রয়েছে।

পুরু, চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিপৃষ্ঠের ওপর ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর কান্ড থেকে দীর্ঘ, তন্তুময়, বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়, যার রং বেগুনি-কালো। একটি পুষ্পবৃন্ত থেকে ৮-১৫ টি আকর্ষণীয় ৬ পাঁপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়।

নদীর জলে ভাসমান কচুরিপানা:

কচুরিপানা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। সবচেয়ে পরিচিত কচুরিপানা Eichhornia crassipes রাতারাতি বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রায় দু’ সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যায়।

waterhyacinths

কচুরিপানা দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধের প্রাদেশিক ফুল।

ধারণা করা হয় কচুরিপানার অর্কিড-সদৃশ ফুলের সৌন্দর্যপ্রেমিক এক ব্রাজিলীয় পর্যটক ১৮শ’ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। তারপর তা এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে ১৯২০ সালের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয় কচুরিপানায় ভরে যায়।

নদ-নদীতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে আর জলাভূমির ফসল আমন ধান আর পাট চাষ অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে বাংলার অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার কচুরিপানার দৌরাত্ম্য হ্রাসে বাংলার জলাভূমি আইন, বাংলার মিউনিসিপ্যালিটি আইন, বাংলার স্থানীয় সরকার আইন এবং বাংলার স্থানীয় গ্রাম সরকার আইন সংশোধন করে। ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইন জারি করা হয়, যার মাধ্যমে বাড়ির আশেপাশে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেয়াকে নাগরিক কর্তব্য ঘোষণা করা হয়। আক্রান্ত এলাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা

তাদের নিজ নিজ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কচুরিপানা দমনে কার্যকর অভিযান চালতে আদিষ্ট হন। জনতা এই কাজে উৎসাহের সাথে যোগ দেয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সবগুলো দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপ-মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক নির্বাচনে বিজয় লাভ করে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং কচুরিপানার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালান।

Eichhornia crassipes

কচুরিপানার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের সাফল্য লাভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সার হিসেবে পঁচানো কচুরিপানার উৎকৃষ্টতা। এই গুণের কারণে ভূমিহীন কৃষকরা কচুরিপানা জমিয়ে ভাসমান কৃষিজমি তৈরি করতে শুরু করে। অবশেষে ১৯৪৭ এর মধ্যে বাংলার জলাশয়গুলো কচুরিপানা-বদ্ধতা থেকে মুক্তি লাভে সক্ষম হয়। তবে এখনও বাংলার জলাশয়ে কচুরিপানা বহাল তবিয়তেই আছে।

কচুরিপানা এখন প্রধানত সার হিসেবেই অধিক ব্যবহূত হয় এবং বর্ষাকালে বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলে গবাদি পশুর খাদ্য যোগায়। এছাড়া হাওর অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় বাঁশ দিয়ে আটকে রেখে ঢেউয়ের আঘাত থেকে ভিটে-মাটি রক্ষায় ব্যবহূত হয়।

সূত্রঃ

https://en.wikipedia.org/wiki/Eichhornia_crassipes