“আপেল সিডার ভিনেগার” ওজন কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ও ত্বক ভালো রাখে।

ওজন হ্রাসের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার কি কাজ করে? আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমানোর জন্য কতটুকু কার্যকর এটা অনেকেই জানতে চান।আপেল সিডার ভিনেগারের প্রবক্তারা দাবি করেন যে, এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকার রয়েছে এবং খাওয়ার আগে অল্প পরিমাণে পান করা বা পরিপূরক গ্রহণ করা ডায়াবেটিস কমাতে এবং মেদ পোড়াতে সহায়তা করে।

অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো আমরা কিছুদিন রেখে ফার্মেন্টেড করে অর্থাৎ গাঁজন প্রক্রিয়া শেষে খাই। খাবারটি কিছুদিন রেখে দিলে এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা অন্ত্রবান্ধব ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয়। তেমনই একটি খাবার হলো আপেল সিডার ভিনেগার।

আপনি আপেল সিডার ভিনেগার তো দেখেছেন। ঘোলাটে বাদামি একটি তরল। কখনো কি ভেবেছেন ঘোলাটে এই তরলের মধ্যে মেঘমালার মতো কি ভেসে বেড়াচ্ছে। গবেষণা বলছে যে, এর ভেতরকার Mother(মাদার)- কনটেন্ট হলো প্রাকৃতিক প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া এবং এসিটিক অ্যাসিড।

আপেল সিডার ভিনেগারের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না। শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। শারীরিক সমস্যা বোধ করা শুরু করলাম। একদিন গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সাহেব আরো অনেক উপদেশের পাশাপাশি আপেল সিডার ভিনেগার লিখে দিলেন। উনার পরামর্শমতো খাওয়া শুরু করলাম। তিন মাস পর থেকে দেখলাম ওজন ভালোই কমতে শুরু করেছে।

আমার এক বন্ধুরও একই সমস্যা। কিন্তু ওর আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে ওজন তেমন কমলো না। কেন এমন হলো? কারণ সে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ যেমন কমায়নি তেমনি অফিসে বসে কাজ নড়াচড়া কম। মনে রাখবেন, ওজন হ্রাস করার জন্য কোনও ম্যাজিক বুলেট নেই। ক্যালোরি হ্রাস না করা বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ না বাড়িয়ে  বা ব্যায়াম না করে ওজন হ্রাস করতে পারে বলে কেউ দাবি করলে এমন কোনও পদ্ধতির বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান হোন।

ওজন কমানোর জন্য কখন আপনার আপেল সিডার ভিনেগার পান করা উচিত? ওজন হ্রাস করার জন্য ব্যবহৃত আপেল সিডার ভিনেগার পরিমাণটি প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ (১৫-৩০ মিলি)  পান করুন। খাবারের আগে এটি পান করা ভাল তবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সাদা পাতিত ভিনেগার আমাদের তথা ভারতীয় উপমহাদেশে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি রান্নাঘরের অবিচ্ছেদ্য, সকলের পছন্দের সাদা বিশুদ্ধ ভিনেগার। খাঁটি ইথানল বা ইথাইল এলকোহল থেকে তৈরি। এটির তীব্র টক স্বাদ রয়েছে। দুধ থেকে ছানা বা পনির তৈরি, ক্যাচআপ, স্যালাড ড্রেসিংস এবং আচার জাতীয় রেসিপিগুলিতে ব্যাপকভাবে এটি ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার যেমন বেড়েছে  তেমনি এর রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যসুবিধা।

আপেল সিডার ভিনেগার বা সিডার ভিনেগার হল ফার্মেন্টেড আপেলের রস থেকে তৈরি ভিনেগার এবং সালাদ ড্রেসিংস, ম্যারিনেশন, ভিনাইগ্রেটস, ফুড প্রিজারভেটিভস এবং চাটনিতে ব্যবহৃত হয়। এটি আপেল পিষে তৈরি করা হয়।

অ্যাপল সিডার ভিনেগার কী?

আপেল পিষে রস বের করা হয়।এই রসে yeast  যোগ করা হয়। ইস্ট আপেলের রসের চিনিকে অ্যালকোহলে পরিণত করে। এটি ফারমেন্টেশন বা গাঁজন নামক একটি প্রক্রিয়া। পরবর্তী বা দ্বিতীয় গাঁজন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটিরিয়া অ্যালকোহলকে এসিটিক অ্যাসিডে পরিণত করে। যার ফলে এটির তীব্র টক স্বাদ এবং শক্ত গন্ধ আমরা পেয়ে থাকি।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধাঃ

কয়েক শতাব্দী ধরে, আপেল সিডার ভিনেগার বহু স্বাস্থ্যরোগের পাশাপাশি একটি জীবাণুনাশক, প্রাকৃতিক খাদ্য সংরক্ষক। ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়। আজ, এটি অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে ওজন হ্রাস এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের জন্য এর ব্যবহারের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

সমর্থকরা দাবি করেন যে আপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্নভাবে আপনার স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিজ্ঞান এরকম কিছু দাবিকে সমর্থন করে।

এটি হজমের উন্নতি করে:

অন্যান্য উত্তেজক খাবারের মতো, আপেল সিডার ভিনেগারে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া রয়েছে। অন্ত্রে-বান্ধব ব্যাকটিরিয়া যা আপনার হজম সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। বদহজম বা অম্বল বা বুকজ্বলার মতো পেটের সমস্যাগুলির জন্য সাইডার ভিনেগার তাদের ত্রাণ সরবরাহ করতে পারে।এর কারণ এটি পেটের অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে। আর অ্যাসিটিক অ্যাসিড ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ওজন কমায়:

আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও যেটা একেবারে জলের মতো পরিষ্কার সেটা হলো এটি ওজন কমায়। আপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে রয়েছে বেশি পরিমানে এসিটিক অ্যাসিড। অন্যান্য ধরণের ভিনেগারের মতো, আপেল সিডার ভিনেগারের মূল উপাদান হল এসিটিক অ্যাসিড। অ্যাপল সিডার ভিনেগারে অন্যান্য উপাদান যেমন: ল্যাকটিক, সাইট্রিক এবং ম্যালিক অ্যাসিডও  রয়েছে। এই এসিডগুলিই ভিনেগারকে তীব্র টক স্বাদ দেয়। টক স্বাদযুক্ত এই এসিডগুলিই চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে।

এটি আপনার ত্বককে উন্নত করতে:

প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন  আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং নখের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে:

ভিনেগারের এসিটিক অ্যাসিড এনজাইমগুলিকে অবরুদ্ধ করে যা আপনাকে স্টার্চ হজমে সহায়তা করে।এর ফলে পাস্তা বা রুটির মতো স্টার্চি খাবারের পরে রক্তে শর্করার পরিমাণ কম হয়।

ডায়াবেটিস গবেষণা ও ক্লিনিকাল অনুশীলনে প্রকাশিত অধ্যয়নগুলির একটি পর্যালোচনা ঠিক এটাই প্রস্তাব করেছিল যে, খাবারের সাথে ভিনেগার গ্রহণের পরিমাণ বাড়লে ইনসুলিন এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা হ্রাস করতে পারে।

আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে সিডার ভিনেগারে পাওয়া এসিটিক অ্যাসিড উপকারী হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, উচ্চ-কার্ব খাবারের আগে  ভিনেগার পান করা রক্তে শর্করার স্পাইকগুলি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা গেছে যে টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের একটি গ্রুপে ভিনেগার রক্তে শর্করার এবং ইনসুলিনের মাত্রাকে উন্নত করে।
টাইপ 1 ডায়াবেটিসযুক্ত লোকদের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপেল সিডার ভিনেগার আপনার পেট থেকে আপনার অন্ত্রের দিকে গতিশীল  খাবারের গতির হার ধীর করে দেয়। ধীরে ধীরে হজম আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া মারতে সাহায্য করতে পারে:

ভিনেগারের প্রধান পদার্থ-এসিটিক অ্যাসিড ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া হত্যা করতে বা তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি থেকে রোধ করতে পারে। এটি একটি জীবাণুনাশক এবং প্রাকৃতিক সংরক্ষণকারী হিসাবে ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে। ভিনেগার ব্যাকটিরিয়া সহ প্যাথোজেনগুলি মারতে সহায়তা করতে পারে। মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে পরিষ্কার এবং জীবাণুনাশক(ছত্রাক, উকুন, মুরগি এবং কানের) সংক্রমণের জন্য ভিনেগার ব্যবহার করেছেন।

আধুনিক ওষুধের জনক হিপ্পোক্রেটস ২০০০ হাজারেরও বেশি বছর আগে ক্ষত পরিষ্কার করতে ভিনেগার ব্যবহার করেছিলেন।ভিনেগার একটি খাদ্য সংরক্ষণকারীও, এবং অধ্যয়নগুলি দেখায় যে এটি খাদ্য বৃদ্ধি এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে ই কোলির মতো ব্যাকটিরিয়াকে বাধা দেয়। আপনি যদি নিজের খাবার সংরক্ষণের জন্য কোনও প্রাকৃতিক উপায়ের সন্ধান করে থাকেন তবে আপেল সিডার ভিনেগার সহায়তা করতে পারে।

জাপানি বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে ভিনেগার পান করা স্থূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ

6 Health Benefits of Apple Cider Vinegar, Backed by Science