বাঘ ও শিয়ালের গল্প।
এক বনে এক বুড়ো বাঘ ছিল। এক সময় বাঘটি রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুখে পড়ে প্রায় মরার মতো অবস্থা, একটি গাছের নিচে শুয়ে শুয়ে কান্না করছিল। তখন সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক শিয়াল। বাঘ শিয়ালকে দেখে আকুতি মিনতি করে ডাকতে লাগল একটু কথা শোনার জন্য।
শিয়াল বলল, মামা, যা বলার তুমি দূর থেকেই বল। তোমার কাছে যেতে আমার ভয় লাগে।
বাঘ বলল, বিশ্বাস কর শিয়াল আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না, এই কথা দিচ্ছি। শিয়াল বলল, মামা, তুমি কথা দিলেও আমার ভয় হয় তোমার কাছে যেতে! বাঘ বলল, আমি বুড়া হয়ে গেছি। অসুখে বিসুখে ভুগে মারা যেতে বসেছি। মারা যাবার আগে দীর্ঘজীবনে যা দেখেছি শুনেছি তা তোমাকে বলে যেতে চাই। তুমি বুদ্ধিমান।
তুমি আমার জীবনের এই কথা অন্য পশুদের বলবে। তাতে তারা তাদের জীবনে অনেক উপকার পাবে। মৃত্যুর আগে এই আমার শেষ ইচ্ছা। আমি আমার পিতা-মাতার নামে শপথ করে বলছি, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আমার সেই শক্তি আর নেই।
অবশেষে অনেক ভেবেটেবে শিয়াল বাঘের কাছে গেল। তারপর প্রশ্ন করল, এবার বল শুয়ে শুয়ে একা কেন কাঁদছিলে?
বাঘ বলল, মনের দুঃখে মনের দুঃখে। এই বুড়ো বয়সে অসুখে ভুগে আজ সাতদিন ধরে গাছের নিচে পড়ে আছি। দলের বাঘরা আমাকে ফেলে চলে গেল। তারপর বনের কত পশুকে ডাকলাম আমাকে সাহায্য করার জন্য। কেউ সাহস করে এগিয়ে এলো না।
এই বুড়ো বয়সে অপরের সাথে কথা-গল্প করতে পারলে মনে বড় শান্তি লাগে। কত পশু-পাখিকে অনুরোধ করলাম, কেউ আমাকে বিশ্বাস করল না। কেউ ফিরে তাকাল না! তাই আমার জীবনের কিছু কথা তোমাকে বলে যেতে চাই। “ক্ষমতার ওপর ভর করে খুব বেশি দিন কাউকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।
ক্ষমতা কোন সম্পদ নয়- জ্ঞানই প্রকৃত সম্পদ। জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষকে সবাই ভালবাসে।
তুমি জ্ঞানী-বুদ্ধিমান। তাই তোমাকে সবাই ভালবাসে- শ্রদ্ধা করে। শান্ত ভদ্রকেও সবাই ভালবাসে- আদর করে। হরিণ শান্ত-ভদ্র। তাই সবাই তাকে ভালবাসে- আদর করে। যারা ক্ষমতার দাপট দেখায় তাদের ভয় করে, ঘৃণা করে। তাই আজ আমার এ অবস্থা।”
উপদেশ: ক্ষমতা দিয়ে খুব কম সময়ই দমিয়ে রাখা যায়।