নাক ডাকার কারণ ও মুক্তির উপায়।
এরকম কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার নাক ডাকা শুনে ঘুম ভাঙার ঘটনা ঘটেনি। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকলে অন্যদের বিরক্তির কারণের পাশাপাশি নিজেও অস্বস্তিতে পড়তে হয়৷ এই নাক ডাকার জন্য হাসির খোরাক হতে হয়৷ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা হতে পারে নানা কারণে। কিন্তু এ নিয়ে চিন্তিত হবেন না, কারণ এটি কোন স্থায়ী সমস্যা নয়।
চলুন জেনে নেই নাক ডাকার কারণ ও এ সমস্যা দূর করার জন্য কি করা যেতে পারে-
নাক ডাকার কারণ কি?
- শরীরে ওজন বেশি হলে ও পেশি দুর্বল হলে নাক ডাকা হতে পারে।
- মানুষের যত বয়স বাড়ে কণ্ঠনালী তত সরু হতে থাকে। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়।
- সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের শ্বাসনালী সরু হয়। আর এই জন্যেই পুরুষ মানুষের নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
- সাইনাসের সমস্যা থাকলে নাক ডাকা হতে পারে।
- নিয়মিত মদ্যপান, ধূমপান ও ঘুমের ওষুধ খেলে নাক ডাকা শুরু হয়।
- লম্বা টান টান হয়ে শুলেও নাক ডাকে অনেকে।
বুদ্ধিমত্তার ক্রমশ অবনতি, অমনোযোগিতা, মনোনিবেশের অক্ষমতা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, মাথাব্যথা, সকালে মাথা ভার হয়ে থাকা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঘনঘন প্রস্রাব ইত্যাদি নাক ডাকা রোগের প্রধান উপসর্গ।
নাক ডাকা বন্ধের সহজ কিছু উপায় বা করণীয় –
বিছানা পরিষ্কার রাখুন:
বিছানাপত্রে বেশি ধুলাবালি থাকলে, ঘর বেশি ময়লা হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। এ পরিস্থিতিতে নাকের নালিতে ধুলা-ময়লা সংক্রমিত হয়ে নাকের পেশি ফুলে উঠতে পারে এবং নাক ডাকা শুরু হতে পারে। তাই বিছানাপত্র ও ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটা খুবই জরুরি। এটাই স্বাস্থ্যসম্মত এবং এতে ঘুমও ভালো হয়। আর এতে নাক ডাকাও দূর হতে পারে।
শোয়ার ভঙ্গি বদলান:
সোজা ও চিৎ হয়ে শোবার কারণে জিহ্বা এবং নরম তালু পেছনের দিকে হেলে যায়। যার কারণে মুখের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গাটা আটকে যায় ও শব্দের সৃষ্টি হয়। ডান কাতে শোয়া এক্ষেত্রে খুবই ভালো একটি সমাধান। বাম কাতে শোয়ার জন্য বুকের উপর বেশি চাপ পড়তে পারে। তাই সবদিক থেকে ডান কাতে শোয়াটা একটি ভালো উপায়।
অতিরিক্ত ওজন কমান:
অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটা। আপনার ওজন যত বেশি হবে, নাক ডাকার আশঙ্কাও তত বেশি বাড়তে থাকবে। আর অতিরিক্ত মোটা মানুষের নাক ডাকার শব্দটাও কিন্তু বেশি। তাই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। কয়েক কিলোগ্রাম ওজন কমাতে পারলেও হয়তো নাক ডাকা না-ডাকার বিষয়টা আপনার কাছে স্পষ্ট হতে পারে।
মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:
অতিরিক্ত পরিমাণে মসলাযুক্ত খাবার খেলে পাকস্থলীতে বেশি মাত্রায় অ্যাসিডের প্রতিক্রিয়া শুরু হতে পারে। অনেক গবেষণা থেকেই দেখা গেছে, এজাতীয় সমস্যার সঙ্গে নাক ডাকার সম্পর্ক আছে। যদি কিছুতেই নাক ডাকার কারণ খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে খাবারদাবারে মসলার পরিমাণ কমিয়ে বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখতে ক্ষতি কি।
অ্যালকোহলকে না বলুন:
বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল বা মদ-জাতীয় পানীয় পানের কারণে কারও নাক ডাকতে পারে। অ্যালকোহল জিভের পেশিগুলোকে শিথিল করে দেওয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের নালি সংকুচিত হয়ে পড়ে আর এ থেকে নাক ডাকা শুরু হয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করার চেষ্টা চালানো যেতে পারে।
ধূমপান ছাড়তে হবে:
ধূমপানের কারণে এমনিতেই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কিছু জটিলতা তৈরি হয়। আবার ধূমপান থেকে টারবাইনেটস নামে নাকের বিশেষ এক ধরনের টিস্যু স্ফীত হয়ে যেতে পারে এবং এথেকে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ধূমপানের এই দুই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। ধূমপানের বদ-অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলে আপনার আর আপনার সঙ্গীর রাতের ঘুমই শুধু ভালো হবে না, তা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের নাটকীয় উন্নতিতে সহায়ক হবে।
নাসারন্ধ্র খোলা রাখুন:
নাক বন্ধ থাকার জন্যও নাক ডাকার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্যই অনেকে যারা কখনোই নাক ডাকেন না তাদের বিরুদ্ধেও নাক ডাকার অভিযোগ আসে। আপনার যদি ঠাণ্ডাজনিত কারণে নাক বন্ধ থেকে থাকে তাহলে শোবার আগে গরম পানির ভাপ নিয়ে যথাসম্ভব নাক পরিষ্কার করে ফেলুন।
উঁচু জায়গায় শোয়া:
ঘুমানোর সময় একটি বাড়তি বালিশ নিয়ে মাথাটা একটু উঁচু জায়গায় রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। লক্ষ্য রাখুন যেন শুধু মাথাই নয়, বুকের দিকটাতেও যেন সামঞ্জস্য বজায় রাখে। তা না হলে ঘাড়ে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম:
আপনার যদি দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম (৭ থেকে ৯ ঘণ্টা) না হয়ে থাকে তাহলে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে কিংবা হঠাৎ করে শুরুও হতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি শরীরের পেশীগুলোকে অলস করে দেয় যা নাক ডাকার আরেকটি কারণ।