গোপাল বড় সুবোধ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বর্ণপরিচয়।
গোপাল বড় সুবোধ। তার বাপ মা যখন যা বলেন, সে তাই করে। যা পাই তাই খায়, যা পাই তাই পরে, ভাল খাব, ভাল পরিব বলিয়া উৎপাত করে না।
গোপাল আপনার ছোট ভাই ভগিনী গুলিকে বড় ভাল বাসে। সে কখনও তাদের সহিত ঝগড়া করে না, তাদের গায় হাত তুলে না। এ কারণে, তার পিতা মাতা তাকে অতিশয় ভাল বাসেন।
গোপাল যখন পড়িতে যায়, পথে খেলা করে না ; সকলের আগে পাঠশালায় যায় ; পাঠশালায় গিয়া, আপনার জায়গায় বসে ; আপনার জায়গায় বসিয়া, বই খুলিয়া পড়িতে থাকে ; যখন গুরু মহাশয় নূতন পড়া দেন, মন দিয়া শুনে।
খেলিবার ছুটী হইলে, যখন সকল বালক খেলিতে থাকে, গোপালও খেলা করে। আর আর বালকেরা, খেলিবার সময়, ঝগড়া করে, মারামারি করে। গোপাল তেমন নয়। সে এক দিনও, কাহারও সহিত, ঝগড়া বা মারামারি করে না।
পাঠশালার ছুটী হইলে, বাড়ী গিয়া, গোপাল পড়িবার বইখানি আগে ভাল জায়গায় রাখিয়া দেয় ; পরে, কাপড় ছাড়িয়া, হাত পা মুখ ধোয়। গোপালের মা যা কিছু খাবার দেন, গোপাল তাই খায়; খাইয়া, আপনার ছোট ভাই ভগিনিগুলি লইয়া, খানিক খেলা করে।
গোপাল কখনও লেখা পড়ায় অবহেলা করে না। সে পাঠশালায় যাহা পড়িয়া আইসে, বাড়ীতে তাহা ভাল করিয়া পড়ে ; পুরাণ পড়াগুলি দুবেলা আগাগোড়া দেখে। পড়া বলিবার সময়, সে সকলের চেয়ে ভাল বলিতে পারে।
গোপালকে যে দেখে, সেই ভালবাসে। সকল বালকেরই গোপালের মত হওয়া উচিত।
গোপাল যেমন সুবোধ, রাখাল তেমন নয়। সে বাপ মার কথা শুনে না ; যা খুসী তাই করে ; সারা দিন উৎপাত করে ; ছোট ভাই ভগিনী গুলির সহিত ঝগড়া ও মারামারি করে।
রাখাল, পড়িতে যাইবার সময়, পথে খেলা করে ; মিছামিছি দেরি করিয়া, সকলের শেষে পাঠশালায় যায়। আর আর বালকের পাঠশালায় গিয়া পড়িতে বসে।
রাখালও দেখাদেখি বই খুলিয়া বসে ; বই খুলিয়া হাতে ধরিয়া থাকে, এক বারও পড়ে না। লেখা পড়ায় রাখালের বড় অমনোযোগ। সে এক দিনও মন দিয়া পড়ে না এবং এক দিনও ভাল পড়া বলিতে পারে না।
গুরু মহাশয় যখন নূতন পড়া দেন, সে তাহাতে মন দেয় না, কেবল এদিকে ওদিকে চাহিয়া থাকে। খেলিবার ছুটী হইলে, রাখাল বড় খুসী। খেলিতে পাইলে, সে আর কিছুই চায় না। খেলিবার সময়, সে সকলের সহিত ঝগড়া ও মারামারি করে ; এ কারণে গুরুমহাশয় তাহাকে সতত গালাগলি দেন।
ছুটী হইলে, বাড়ীতে গিয়া, রাখাল পড়িবার বই কোথায় ফেলে, কিছুই ঠিকানা থাকে না। কোনও দিন পাঠশালায় ফেলিয়া আইসে ; কোনও দিন পথে হারাইয়া আইসে। রাখালের পিতা, এক মাসের ভিতর, চারিবার বই কিনিয়া দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, এবার বই হারাইলে, আর কিনিয়া দিবেন না।
রাখালকে কেহ ভাল বাসে না। কোন বালকেরই রাখালের মত হওয়া উচিত নয়। যে রাখালের মত হইবে, সে লেখা পড়া শিখিতে পারিবে না।