কোয়েল পাখির ডিম শক্তি বর্ধক, উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও মস্তিষ্ক এর জন্য ভালো।
কোয়েলের ডিম বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে, হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে, শ্বাসতন্ত্রের জন্যও উপকারী। কোয়েলের ডিম মুরগির ডিমের বিকল্প হিসাবে খাওয়া হয়।
এগুলি মুরগির ডিমের মতো অসাধারণ স্বাদযুক্ত তবে আকারে ছোট।
সাধারণত একটি মুরগির ডিমের আকারের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। আকারে ছোট হলেও কোয়েলের ডিম পুষ্টিতে ভরপুর।
এই পাখি এশিয়া এবং ইউরোপে পাওয়া যায়। যার ইংরেজি নাম Common quail এবং বৈজ্ঞানিকভাবে Coturnix coturnix নামে পরিচিত।
বর্তমানে আমাদের দেশে কোয়েল পাখির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আর এর জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে কোয়েল পাখির ডিমের চাহিদা। তবে কোয়েল পাখির মাংসও খাওয়া হয়।
কোয়েল পাখির ডিমের চাইদা মেটাতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে বানিজ্যিক ভাবে কোয়েল পালন শুরু হয়েছে। অনেক বাসাবাড়িতেও এখন কোয়েল পাখি পালন করতে দেখা যায়।
এই ডিমগুলি আশ্চর্যজনকভাবে পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। একটি কোয়েল পাখির ডিম আপনার দৈনিক ভিটামিন বি 12, সেলেনিয়াম, রিবোফ্লাভিন এবং কোলিনের চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করতে পারে।
সেলেনিয়াম এবং রিবোফ্লাভিন হল গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যা আপনার শরীরকে খাবার ভেঙ্গে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। সেলেনিয়াম স্বাস্থ্যকর থাইরয়েড ফাংশন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি 12 এবং আয়রন স্বাস্থ্যকর স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা প্রচার করে এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে।
এছাড়াও, কোলিন আপনার শরীরকে অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরি করতে সাহায্য করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাসিটাইলকোলিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা আপনার স্নায়ুতন্ত্র থেকে আপনার পেশীতে বার্তা পাঠায়।
কোয়েল এর ডিমে পুষ্টি উপাদান
কোয়েল পাখির ডিম একটি সুপারফুড। কোয়েল পাখির ডিম বেশিরভাগ লোকের কাছে সহজলভ্য।
কোয়েলের ডিম ছোট, তাই তিন থেকে চারটি মোটামুটিভাবে একটি মুরগির ডিমের সমান। একটি কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ১৪
- প্রোটিন: ১ গ্রাম
- কোলিন: ৪% (DV)
- রিবোফ্লাভিন: ৬% (DV)
- ফোলেট: ২% (DV)
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড: ৩% (DV)
- ভিটামিন “এ”: ২% (DV)
- ভিটামিন B12: ৬% (DV)
- আয়রন: ২% (DV)
- ফসফরাস: ২% (DV)
- সেলেনিয়াম: ৫% (DV)
কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কোয়েলের ডিম পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ যা অ্যালার্জির লক্ষণগুলি কমাতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোয়েল পাখির ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিঙ্ক ১ ঘন্টার মধ্যে হাঁচি, ভিড় এবং সর্দির মতো লক্ষণগুলির উন্নতি হয়েছে।
৫টি কোয়েলের ডিমে আমাদের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ১০ শতাংশ ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –
বিপাক উন্নত করে:
এই ডিম হজমের সমস্যা কমাতে পারে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়েটে কোয়েলের ডিম যোগ করলে শরীর খাবার হজম করতে এবং হজম প্রক্রিয়ার মান উন্নত হবে।
একটি উচ্চ হজমের কার্যকলাপ দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। কোয়েলের ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “বি” থাকে, যা আমাদের মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে।
শক্তি বর্ধক:
কোয়েলের ডিম আমাদের শরীরের শক্তির উৎস। এই ডিম প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ যা শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিড, যা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে এবং হরমোন, কোলাজেন ও এনজাইম উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
নতুন রক্ত তৈরিতে আয়রনের ভূমিকা বেশ কার্যকরী। শরীরে আয়রনের অভাব হলে অ্যানেমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়, যার ফলে ঘন ঘন ক্লান্তি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা দেখা যায়।
হাড়ের শক্ত করে:
হাড়ের বিকাশের জন্য সর্বাধিক পরিচিত পুষ্টি হল ক্যালসিয়াম। এছাড়া অ্যামিনো অ্যাসিড যেমন লাইসিন, দীর্ঘস্থায়ী হাড়ের শক্তির জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি এগুলো কোয়েলের ডিমে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
কোয়েলের ডিম অস্টিওপোরোসিস বা হাড় দুর্বল রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কোয়েলের ডিম খেলে হাড় মজবুত হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে:
কোয়েলের ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেলেনিয়াম শরীর থেকে টক্সিন অপসারণ করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে। সেলেনিয়াম প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
চোখের জন্য ভালো:
বার্ধক্যজনিত সমস্যার মধ্যে একটি হল দৃষ্টিশক্তি। কোয়েলের ডিমে অনেকগুলি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের চোখকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েলের ডিমে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট চোখের রেটিনাতে জমা হয়ে চোখকে ক্ষতিকারক সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করে।
কোলিন আছে:
কোলিন এমন একটি পুষ্টি যা বেশিরভাগ লোকেরা এটা সম্পর্কে জানে না। অবিশ্বাস্যরূপে গুরুত্বপূর্ণ কোলিন এবং প্রায়শই বি ভিটামিন অন্তর্ভুক্ত।
কোষের ঝিল্লি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কোলিন এবং মস্তিষ্কে সংকেত অণু তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে ভূমিকা রাখে। কোয়েলের ডিম কোলিনের একটি দুর্দান্ত উৎস।
হার্টের রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়:
আমাদের শরীরে HDL (ভালো কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি করে কোয়েলের ডিম। যাদের শরীরে HDL উচ্চ মাত্রাই রয়েছে তাদের হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে।
মস্তিষ্ক এর জন্য ভালো:
এমন কিছু ভিটামিন এবং খনিজ থাকে কোয়েলের ডিমে যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়।
প্রতিদিন কোয়েলের ডিম খেলে মেধা বিকাশে সহায়তা করবে। কোয়েলের ডিম কোলিনের একটি ভালো উৎস।
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ:
১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে ২৬% প্রোটিন রয়েছে।
আমাদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণের প্রোটিন থাকলে ওজন হ্রাস পায়, রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কোয়েলের ডিম রাখা উচিত।
সতর্কতা
অনেকের কোয়েলের ডিমও অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলারা কোয়েলের ডিম্ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। যা খাবেন পরিমান মতো খাবেন। অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না।
আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভিতর দিয়ে যান তাহলে খাবার আগে অবশ্যাই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।