ব্রেকফাস্টে প্রতিদিন সাদা পাউরুটি খাচ্ছেন। উপকারীতা ও অপকারীতা জেনে নিন।
ব্যস্ত কর্মময় জীবন। হাতে সময় কোথায়। বর্তমান সভ্যতায় আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকুরীজীবি। ব্যস্ত জীবনে হাতে সময় নিয়ে প্রাতরাশ বা সকালের খাবার বানানোর সুযোগ আর মেলে কই?
তাই হাতের কাছে সহজেই পাওয়া যায় এমন জিনিসের উপর ভরসা করেই সারতে হচ্ছে সকালের খাওয়া। এই তালিকায় মাখন মাখিয়ে ময়দার পাউরুটি সবার উপরে। মাখন মাখিয়ে পাউরুটি খেতেও সুস্বাদু আবার সময় লাগে একেবারে কম।
দুই-এক পিস পাউরুটির সঙ্গে মাখন ও জেলি খেয়েই অনেকেই কর্মব্যস্ত জীবন শুরু করেন। প্রাতঃরাশ আসলে ব্যাক্তির রুচি ও অবস্থান দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।
দেশে নাস্তার বিভিন্নতা মূলত আপনি কোথায় থাকেন এবং আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে। শহরে, প্রাতঃরাশে আভিজাত্য এবং ক্যালোরি বোঝাই হয়ে থাকে। এর বিপরীতে স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি গ্রামীণ অঞ্চলের খাবারে পাওয়া যায়।
আবার অনেকেই ভাবেন পাউরুটি খেলে ওজন কমানো সম্ভব, সেকারণে নিয়মিত ২ বেলা পাউরুটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু পাউরুটিকে যতটা স্বাস্থ্যকর খাবার বলে ধারণা করা হয় ঠিক ততোটা স্বাস্থ্যকর খাবার নয় এই পাউরুটি।
পাউরুটি বা স্লাইস ব্রেড তৈরির সময় অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান বাদ দেয়া হয়। এতে পরিমিত ফাইবারও থাকে না। সাদা পাউরুটিতে আরও অনেক বেশিমাত্রায় পুষ্টি উপাদান অনুপস্থিত থাকে। বাসায় বানানো সাধারণ রুটি অনেক বেশি পুষ্টিকর।
চিকিৎসকদের মতে, ময়দা নয় লাল বা বাদামি আটার পাউরুটি বা slice bread যোগ করুন রোজের খাদ্যতালিকায়। আটায় ফাইবার বেশি। সোডিয়াম কম।
দিনে কত টুকরো বা কত পিস পাউরুটি স্বাস্থ্যকর?
প্রমানের সিংহভাগই সর্বশেষ ইউএস ডায়েটরি গাইডলাইনগুলিকে সমর্থন করে, যা বলে যে একটি স্বাস্থ্যকর 1,800 থেকে 2,000-ক্যালোরি ডায়েটে প্রতিদিন ছয় টুকরো রুটি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে – তবে এটি রিফাইন্ড-শস্য অর্থাৎ সাদা ময়দার রুটি হলে তিনটি থেকে চার পিচের বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
পাউরুটিতে উপকারীতা ও অপকারীতা দুটোই আছে, জেনে নিন:
দিনের ব্যস্ততার শুরু হয় পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ভোরবেলা থেকেই। কোনোরকম খাবার মুখে দিয়েই ছুটতে হয় কাজে। যে খাবারটি সহজেই মেলে, তার প্রতি আমাদের নির্ভরতা।
তাইতো প্রতিদিন সকালের খাবারে পাউরুটি যেন অনেকটাই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু রোজ সকালে যে হোয়াইট ব্রেড বা ময়দার পাউরুটি খাচ্ছি সেটা কি স্বাস্থ্যের জন্য পুরোপুরি ভালো?
পাউরুটিতে অনেক বেশিমাত্রায় লবণ থাকে:
কিছু খাবার আছে যা দেখলে খেতে ইচ্ছে করে বা জিভে জল চলে আসে। পাউরুটি তেমন একটি খাবার। পাউরুটিতে অনেক বেশি মাত্রায় লবন থাকে কি থাকে না এটা আসলেই একটা পরীক্ষার বিষয়। অনেকেই বলেন আমি পাউরুটি খেয়ে ভালো আছে। তেমন ক্ষতি কিছু বুঝি না।
অনেকেই বলে থাকেন বাজারে যে সব পাউরুটি পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলোতেই থাকে অনেক লবণ এবং সোডিয়াম যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বাসায় বানানো রুটি অনেক বেশি ভালো স্বাস্থ্যের জন্য।
পাউরুটি খেলে ওজন বাড়ে:
কথাটি শুনতে আশ্চর্যজনক শোনালেও সত্যি যে, পাউরুটি খেলে ওজন বাড়ে। কারণ পাউরুটিতে রয়েছে লবণ, রিফাইন্ড চিনি, প্রিজারভেটিভস। আসলে যতটা মনে করা হয় ততটা হয়তো ওজন বাড়ায় না। মধ্যস্ততায় বা পরিমিত আহার সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। শরীরের অবস্থা বুঝে পরিমিত পরিমানে খাবেন।
যারা ওজন কমানোর আশায় পাউরুটি খান তারা Whole Grain বা আটা দিয়ে বাড়িতে পাউরুটি তৈরি করে খান।
পাউরুটি ক্ষুধা কমায়:
Whole grain বা পুরো শস্য দিয়ে বানানো পাউরুটিতে ফাইবার বেশি থাকে। এটি আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে। বার বার ক্ষুদার উদ্রেক কমে। কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।
কিন্তু সকালের প্রাতরাশে রিফাইন করা সাদা ময়দায় বানানো ১/২ টুকরো পাউরুটি খেলে খুব দ্রুত তা হজম হয়ে যায়। সুতরাং, এটি খুব দ্রুত ক্ষুধার উদ্রেক করে।
শহরের নানা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও দোকানে ব্রাউন ব্রেড মিললেও গ্রাম বা মফস্বলে অত সহজলভ্য নয় আটার পাউরুটি। বরং সাদা পাউরুটির চটজলদি জোগান রয়েছে। তাই অনেকেই সেই পাউরুটির উপর ভরসা করতে বাধ্য হন। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাদা পাউরুটি মোটেও অতটা স্বাস্থ্যকর নয়, যতটা ব্রাউন ব্রেড বা বাদামি রুটি।
সতর্কতাঃ
পটাশিয়াম ব্রোমেট বা সাধারণভাবে ব্রোমেট বলা হয়, একটি অক্সিডাইজার যা ময়দা শক্তিশালী করতে এবং এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি রুটি একরূপ বা সর্বদা সমান এবং সাদা রুটি বেক করতে সহায়তা করে। তবে, যদি খুব বেশি পরিমাণে অ্যাডিটিভ ব্যবহার করা হয় এবং রুটিটি যথেষ্ট পরিমাণে বেকড না করা হয় বা একটি উচ্চ পর্যায়ের তাপমাত্রায় রাখা না হয় তবে অবশিষ্ট পরিমাণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পটাসিয়াম ব্রোমেট মানুষের মধ্যে একটি কারসিনোজেন হতে পারে যেহেতু এটি প্রাণীতে কিডনি, থাইরয়েড এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সারের কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, কোনও কার্সিনোজেনের সংস্পর্শের কোনও নিরাপদ স্তর নেই। এই জাতীয় পদার্থগুলি মানুষের মধ্যে প্রজনন ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। অতিরিক্ত পাউরুটি খেলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের উপর। ফলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। জেনে নেওয়া যাক, অতিরিক্ত পাউরুটি খেলে আমাদের শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে:
প্রতিদিন পাউরুটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে। আর ডায়াবেটিস হলে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যাও বাড়ে।
সূত্রঃ
https://www.fob.uk.com/nutrition-and-health/