কফ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।
ঠাণ্ডা লেগে বুকে শ্লেষ্মা বা কফ জমলে বেজায় অস্বস্তি হয়। সেই সঙ্গে থাকে গলায় বা বুকে ব্যথা।
সর্দি-কাশি ও বুকে কফ বা শ্লেষ্মা জমার সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সমস্যা বলে মনে হলেও সময়মতো এর চিকিৎসা করা না গেলে এটি শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে শ্বাসযন্ত্রে।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রয়েছে প্রচলিত প্রাকৃতিক পন্থা। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে কফ দূর করার প্রাকৃতিক উপায় চেষ্টা করা যেতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ঘরোয়া উপায় যা সর্দি-কাশি, বুকে কফ বা শ্লেষ্মা জমার সমস্যার উপশমে বিশেষ কার্যকরী –
হলুদ:
হলুদে থাকা “কারকুমিন” নামের উপাদান বুক থেকে কফ, শ্লেষ্মা দূর করে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমিয়ে দেয়।
এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান গলা ও বুকের খুসখুসে অস্বস্থি, জ্বালা, ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ পানিতে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিন।
আদা:
এক টেবিল চামচ আদা কুচি এক গ্লাস পানিতে মেশান। এবার এটি একটা কড়াইতে ঢেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে এতে সামান্য মধু দিয়ে দিন।
দিনে অন্তত তিনবার এই পানীয়টি পান করুন। এছাড়া এক চা চামচ আদা কুচি, গোল মরিচের গুঁড়া এবং লবঙ্গের গুঁড়া দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি দিনে তিনবার পান করুন।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার:
এক কাপ সামান্য উষ্ণ পানিতে দুই চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে এই পানীয়টি দিনে অন্তত দুই তিনবার পান করুন।
মোটামুটি ৮-১০ দিন পান করুন। দ্রুত শ্লেষ্মার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
পেঁয়াজ:
একটি পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, মধু এবং পানি একসঙ্গে মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
এবার সামান্য উষ্ণ এই পানি দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার পান করুন। উপকার পাবেন।
গরম পানীয়:
পর্যাপ্ত গরম পানি পান করলে শ্লেষ্মা পাতলা হবে ও কাশির মাধ্যমে সহজে বের হয়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গরম পানীয় বুকের শ্লেষ্মা দূর করে ব্যথা ও অন্যান্য অস্বস্তিকর অনুভূতি প্রশমিত করতে পারে।
গরম স্যূপ, ব্ল্যাক টি বা গ্রিন টি, হার্বাল টি অথবা সাধারণ পানি পানে এই উপকার পেতে পারেন। এখানে গরম পানি বলতে কুসুম গরম পানিকে বোঝানো হচ্ছে।
মধু:
ঘরোয়া চিকিৎসার একটি জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হলো মধু। গবেষণায় পাওয়া গেছে, মধুতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। বুকে শ্লেষ্মা জমলে মধু খেলে কমে যায়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উপসর্গ দূর না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ৩-৪ ঘণ্টায় এক টেবিল চামচ মধু সেবন করতে পারেন। তবে ১২ মাসের কম বয়সি শিশুদের জন্য মধু উপযুক্ত নয়।
লবণ পানি:
বুকের সর্দি, কফ দূর করতে সবচেয়ে সহজ আর সস্তা উপায় হল লবণ পানি। লবণ শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে সাহায্য করে।
এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ পানির সঙ্গে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে দিনে দুই তিনবার গারগেল করুন।
লেবু ও মধু:
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এই পানীয়টি পান করতে হবে।
মধু বুক ও গলায় আরাম দেবে আর লেবুর ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
গরম পানি দিয়ে গড়গড়া:
বুকে জমা কফ ও গলার সমস্যা সারাতে এই পদ্ধতি সবচাইতে বেশি প্রচলিত।
এক গ্লাস গরম পানিতে আধা টেবিল-চামচ লবণ মিশিয়ে এক থেকে দুই মিনিট গড়গড়া করতে হবে। দিনে তিন থেকে চারবার পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে বেশি উপকার মিলবে। তবে এই পানি গিলে ফেলা যাবে না।
লবঙ্গ:
লবঙ্গ কফ বা কাশি দূর করতে খুবই কার্যকরী। তাই কাশি হলে মুখে একটা লবঙ্গ রেখে মাঝেমধ্যে একটু চাপ দিয়ে রস বের করে গিলে ফেলুন।
লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেবে এবং সেই সাথে জীবাণু দূর করবে।
তুলসী পাতা:
তুলসী পাতার রস কফ বা কাশি দূর করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো। তুলসী পাতা থেঁতো করে এতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিন।
এবার এই মিশ্রণটি দৈনিক ২/৩ বার খেলে সজজেই কাশি ভালো হয়ে যায়।
এছাড়াও বুকের অত্যধিক শ্লেষ্মা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। তাই এই সমস্যা এড়াতে অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে মাথাকে উঁচুতে তুলুন।
এর ফলে বুক থেকে শ্লেষ্মা বের হয়ে যেতে পারবে ও কাশি বা অস্বস্তি কমে যাবে। কিছু গবেষণায় এই পদ্ধতি অনুসরণে উপকার পাওয়া গেছে।