শিশু পানিশূন্যতায় ভুগছে? কিভাবে বুঝবেন।

ডিহাইড্রেশন অর্থ শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত তরল বা পানির অভাব রয়েছে। গরমের শুরুতেই শিশুরা ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়ে থাকে। শিশুরা পানিশূন্যতা সমস্যায় ভুগছে এটা যদি প্রাথমিক অবস্থায় অভিভাবকরা বুঝতে না পারে তাহলে শিশুর মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

শিশুরা সারা দিন অবিচ্ছিন্নভাবে ঘামের মধ্যে পানি হারাতে থাকে। এছাড়া শিশু চরম তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসায় অথবা বমি ও ডায়রিয়ার কারণে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়।

দিনের বেলায় ঘাম, প্রস্রাব, মল এবং অশ্রুর মাধ্যমেও শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর থেকে তরল ও লবণ একটু বেশি বের হয়।

যদি এ সময় আপনার শিশু অসুস্থ থাকে এবং জ্বর, ডায়রিয়া বা বমি হয় তবে এটি ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। আবার যখন কোনো শিশু বেরিয়ে যাওয়া তরলের পরিবর্তে পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করে না; তখন জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি হয়, কারণ তারা তুলনামূলকভাবে খুব দ্রুত তরল হারায়। ডিহাইড্রেশন পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে, তাই শিশুর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন।

ডিহাইড্রেশন হালকাভাবে নেওয়ার মতো কিছু নয়। এটি যখন ঘটে তখন দেহে সঠিকভাবে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত তরল এবং পানি থাকে না। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডিহাইড্রেশন মস্তিষ্কের ক্ষতি বা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

বাচ্চা কি ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিতে রয়েছে?

যখন একটি বাচ্চা পানি কম খাবে আর যতটুকু পানি পান করছে তার থেকে বেশি পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায় তখন ডিহাইড্রেশন ঘটে। শিশুরা বয়স্ক, কৈশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে ডিহাইড্রেশনে বেশি ভোগে কারণ তাদের শরীরটা ছোট। তাদের শরীরে পানির পরিমাণ কম রয়েছে।

ডিহাইড্রেশনের কারণ:

কিছু শিশুরা পানিশূন্যতাই পড়ে কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে না। সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ যা বমি বা ডায়রিয়ার কারণ হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে রোটাভাইরাস, নরওয়াক ভাইরাস এবং অ্যাডেনোভাইরাস।

কখনও কখনও বাচ্চার মুখের ঘা (কোনও ভাইরাসজনিত কারণে) এটি খাওয়া বা পান করা কষ্টদায়ক করে তোলে যা ডিহাইড্রেশন এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া নিচে আরও কিছু কারণ দেওয়া হলো –

  • জ্বর হলে শিশুরা ডিহাইড্রেশনে পরে
  • বমি হলে
  • ডায়রিয়া হলে
  • অত্যাধিক ঘামা
  • কোনও অসুস্থতার সময় তরল খাবারের পরিমাণ কম খেলে
  • গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার সংস্পর্শে

শিশুদের ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ

সময়ের সাথে সাথে ডিহাইড্রেশন খুব ধীরে ধীরে ঘটতে পারে বা হঠাৎ করে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। শিশুদের ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো –

  • গাঢ় দুর্গন্ধযুক্ত হলুদ প্রস্রাব
  • শিশুকে দুর্বল দেখাবে মনে হন ঘুম ঘুম
  • ৬-৭ ঘণ্টা প্রস্রাব না করা
  • শুকনো ঠোঁট এবং একটি খসখসে মুখ
  • তৃষ্ণার্ত থাকা
  • মাথা ব্যথা এবং মাথা ঘুরতে পারে
  • কান্নার সময় কোনও অশ্রু নেই
  • দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস বা হৃদস্পন্দন
  • সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষেত্রে, আপনার বাচ্চা প্রলাপ বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

ডিহাইড্রেটেড শিশুর চিকিৎসা-

ডিহাইড্রেশন কার্যকরভাবে চিকিৎসার একমাত্র উপায় হল প্রচুর তরল গ্রহণ করা। যদি আপনার বাচ্চাদের ডায়রিয়া, বমিভাব বা জ্বর হয় বা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা যায় তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিন।

  • ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন হলো ডিহাইড্রেশনের জন্য শিশুর আদর্শ পানীয়। যা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পরপর শিশুকে খাওয়াতে হবে। এছাড়া ফলের রস, পাতলা দুধ এবং লবণ ও চিনি দিয়ে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়াতে পড়েন।
  • অতিরিক্ত গরম লেগে যেন শিশুর ঘাম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • গরমে হালকা পোশাক পরাবেন শিশুকে।
  • ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কখনই কম্বল বা সোয়েটারে জড়িয়ে রাখবেন না।
  • হাতের কাছে সব সময় তরল কিছু রাখুন এবং মাঝে মাঝে বাচ্চাকে খাওয়ান।
  • বাচ্চাদের খেলার বা ব্যায়মের আগে ও পরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে উৎসাহিত করুন।

আপনার শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠছে না বা আরও পানিশূন্য হয়ে উঠছে তখন দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া ডায়রিয়া কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়
এবং বাচ্চার মল বা বমির সাথে রক্ত ​​থাকলে।

রেফারেন্স: