চা এবং কফির মধ্যে পার্থক্য। কোনটি বেশি উপকারী ?
চা ও কফি দুটোই অত্যন্ত জনপ্রিয়। কেউ চা পছন্দ করে, আবার কেউ পছন্দ করে কফি। তবে সবার মাঝে একটা প্রশ্ন থেকে যায় চা ও কফির মধ্যে কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।
অথবা চা এবং কফির মধ্যে পার্থক্য কি? চা ও কফি দুটোরই আছে উপকারী গুণ। প্রধান পার্থক্য হলো ক্যাফেইনের মাত্রা। কফিতে চায়ের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে।
উপকারিতা
চা ও কফি দুটোতেই রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে কিংবা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে।
উভয় পানীয়তে রয়েছে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন পারকিনসন্স নামক মস্তিষ্কের রোগ প্রতিহত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পারকিনসন রোগ (ইংরেজি: Parkinson’s disease) হল এক প্রকারের নিউরো-ডিজেনারাটিভ বা স্নায়বিক রোগ বা স্নায়ু-অধঃপতনজনিত রোগ।
প্রতিদিন ২-৩ কাপ কফি বা দিনে ৪ কাপের বেশি চা পান করার ফলে অ্যালঝাইমার এবং পার্কিনসন এর মতো মস্তিষ্কের অসুস্থতার ঝুঁকিও ২৮–৬০% হ্রাস পায়।
দুটোই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে শরীর ও মনকে সতেজ করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যাফেইন অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ক্লান্তি হ্রাস করতে পারে।
স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কফি, গ্রিন টি ও লাল চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পাশাপাশি চা এবং কফি শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক করে। ত্বক মসৃণ করে ও ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে ব্ল্যাক কফি, গ্রিন টি, লাল চা খেলে শরীর ভালো থাকে। যদি চা ও কফির সঙ্গে দুধ ও চিনি মিশিয়ে খাওয়া হলে এটি শরীরের উপকার থেকে অপকার বেশি করে।
এভাবে চা ও কফি খেতে সুস্বাদু হলেও এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ক্যাফেইন এর পরিমান
এক কাপ কফিতে ৯৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। এক কাপ লাল বা কালো চায়ে ৪৭-৯০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন থাকতে পারে।
গ্রিন টিতে ২০-৪৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। তবে মনে রাখতে হবে বেশি পরিমাণ ক্যাফেইন থেকে হতে পারে নানা শারীরিক সমস্যাও।
কফির তুলনায় চায়ের দাম অনেক কম। তাই অনেকে মনে করেন চায়ের তুলনায় কফি হয়তো একটু বেশি উপকারী।
কিন্তু বিষয়টি তা নয়। দুটিই উপকারী। তবে চায়ের তুলনায় কফিতে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি ক্যাফেইন থাকে।
ক্যাফেইন হল বিশ্বের সর্বাধিক খাওয়া একটি উদ্দীপক। ক্যাফেইন গ্রহণ করলে কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা, মেজাজ এবং মানসিক উন্নত হয়।
ক্যাফিন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জন্য একটি শক্তিশালী উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। অন্যদিকে ক্যাফিন ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কফি পান টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
মাঝারি ক্যাফেইন গ্রহণ ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার রোগ, বিপাকীয় সিনড্রোম এবং নন-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে৷
চা এবং কফির মধ্যে পার্থক্য কি?
- কফি এবং চা স্বাদ, প্রস্তুতি ভিন্ন। কফি এবং চা, উভয়েই ক্যাফেইন থাকে, তবে প্রস্তুত আকারে কফিতে ক্যাফেইনের পরিমাণ বেশি থাকে। শুষ্ক আকারে চায়ে ক্যাফিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
- কফি পারকিনসন্স রোগ এবং হাঁপানিতে উপকারী যেখানে চা ক্যান্সার এবং হৃদরোগে ভালো প্রভাবের জন্য পরিচিত। চা কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্ত জমাট বাঁধা কমায়।
- কফির উৎপত্তি আফ্রিকান যেখানে চা গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে জন্মায়।
যেহেতু কফিতে ক্যাফিনের পরিমান বেশি তাই আপনি যদি ক্যাফিন গ্রহণ কমাতে চান তাহলে চা দুর্দান্ত।