স্ট্রোক ও হার্ট এট্যাক সাধারণত সকালে এবং বাথরুমেই বেশি হয়ে থাকে কেন?
স্ট্রোক, স্ট্রোক, স্ট্রোক। অমুকের স্ট্রোকে মুখ বেঁকে গেছে। তমুকের স্ট্রোকে শরীরের বামসাইড অকেজো হয়ে গেছে। শুনতে শুনতে আর ভালো লাগে না। এদিকে আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রোক ও হার্ট এট্যাক সকাল বেলা ও বাথরুমে বেশি ঘটে থাকে এবং কেনো হয় এই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
মলত্যাগের সময় ঘটে যাওয়া বেশিরভাগ স্ট্রোক অস্বাভাবিক বসে থাকার ভঙ্গির ফল। যদি কেউ মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে, এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যার ফলে মৃত্যু হতে পারে।
এটি অনুমান করা হয় যে, সমস্ত তীব্র ইস্কেমিক স্ট্রোক (AIS) এর ৪০-৫০% সকালের সময় ঘটে। যদি আপনার হার্ট ফাংশন আগে থেকে দূর্বল হয়, এটি হঠাৎ বাথরুমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জন্য একটি কারণ হতে পারে। বাথরুমে যাওয়াও ভাসোভাগাল রেসপন্স নামে কিছু ট্রিগার করতে পারে।
ভাসোভাগাল সিনকোপ এমন একটি অবস্থা যেটি ঘটলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। একে নিউরোকার্ডিওজেনিক সিনকোপ বা রিফ্লেক্স সিনকোপও বলা হয়। এটি অজ্ঞান হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। আমাদের স্নায়ু, হার্ট এবং রক্তনালীর সাথে সংযুক্ত থাকে।
স্ট্রোক দুইভাবে প্রধানতঃ ঘটে থাকে। মস্তৃষ্কে রক্ত প্রবাহের অভাবে যাকে ইস্কিমিক স্ট্রোক বলে এবং রক্তক্ষরণের কারণে যাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলে।
মস্তিষ্কে দুর্বল রক্ত প্রবাহের ফলে কোষের মৃত্যু ঘটে, মস্তিষ্কের কিছু অংশ সঠিকভাবে কাজ করে না। আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রক্ত জমাট বাঁধলে বা রক্তনালী ছিঁড়ে রক্ত জমাট বাঁধলেও মস্তিষ্কের কিছু অংশ সঠিকভাবে কাজ করে না।
স্ট্রোকের লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে থাকতে পারে শরীরের একপাশে চলাফেরা বা অনুভব করতে না পারা, বুঝতে বা বলতে সমস্যা, পৃথিবী ঘুরছে এমন অনুভূতি, অথবা একদিকে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস। স্ট্রোক হওয়ার পরপরই লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়।
অনেকেরই প্রিয়জন বাথরুমে স্নান বা মল-মূত্র ত্যাগ করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। জানেন, কেন বাথরুমেই বেশিরভাগ সময় হার্ট অ্যাটাক হয়।
আপনি অনেকদিন ধরেই উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধও খাচ্ছেন। কিন্তু হয়না যেমনঃ আলসেমি বা কিছুদিন গুরুত্ব না দিয়ে বা ওষুধ আনতে বা কিনতে অপারগতা। ব্যাস স্ট্রোক হয়ে গেলো। এছাড়া জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থ্যতা চলছে। প্রেসার লো হয়ে গেলো। বুঝতে পারলেন না। হটাৎ স্ট্রোক করে বসলো।
যে সব মানুষদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা থাকে তাঁদের বাথরুমে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মার্কিন সংস্থা NCBI-এর একটি রিপোর্ট বলছে, ১১ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক হয় বাথরুমে। হার্ট স্পেশালিস্টদের অনেকেই বলেন, বাথরুমে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেশি হয়।
চিকিৎসকদের একাংশ বলেন, জলের তাপমাত্রা বড় ফ্যাক্টর। শীতকালে খুব ঠাণ্ডা জলে স্নান করলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে। অনেকেরই আগে থেকে হার্টের সমস্যা থাকে। তাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে খুব চাপ প্রয়োগ করলে সমস্যা হয়। বাড়ে বাথরুমে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা।
হেল্থলাইন ডট কম জানাচ্ছে, বাথরুমে হার্ট অ্যাটক হওয়ার আরেকটি কারণ দুশ্চিন্তা। স্নান বা মলত্যাগের সময় যে কোনওরকম দুশ্চিন্তা এড়িয়ে যেতে হবে। বাইরে করুন বা ঘরের বাথরুমে, প্রকৃতিকে উপভোগ করুন। গান করুন বা গান শুনুন। মূলকথা হলো: মন ভালো রাখুন ও হাঁসিখুশি থাকুন।
বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের চাহিদা ও ভোগ বিলাস যেমন প্রচুর পরিমানে বেড়ে গেছে তেমনি বেড়ে গেছে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও টেনশন। আর তাই স্ট্রোক ও হার্ট এট্যাক বেড়ে গেছে। স্নান, প্রস্রাব, পায়খানা ছাড়াও ফ্রেশ হতে আমারা দিনের অনেকটা সময় বাথরুমে কাটায়।
যাইহোক, এটি একটি বেশ আশ্চর্যজনক সত্য যে, অনেক স্ট্রোক বাথরুমে ঘটে থাকে। কেন কিছু লোক স্নান করার সময় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক (মস্তিষ্কের আক্রমণ) বিকাশ করে? এটা কি শুধুই কাকতালীয় না স্নান প্রক্রিয়ার মধ্যে এমন কিছু আছে যা এই সম্ভাব্য গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে?
গোসলের কোন যথাযথ ক্রম আছে, যেমন প্রথমে অঙ্গ বা পা ভিজানো, তারপর শরীর, তারপর মাথা? একটি ঠান্ডা ঝরনা ট্রিগার করতে পারে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক? এখানে বিস্তারিত আছে যা আপনি খুঁজছেন
আমাদের অবশ্যই এই ঘটনাগুলোর(হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, স্ট্রোক)-এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বুঝতে হবে।
হার্ট অ্যাটাক:
হার্টে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে এটি ঘটে। এটি একটি সংবহন সমস্যা। একটি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে একটি ধমনীর অবরোধের কারণে যা আপনার হার্টের একটি অংশে রক্ত সরবরাহ করে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট:
এটি ঘটে যখন হৃদযন্ত্রের ত্রুটি ঘটে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে প্রবণতা বন্ধ হয়ে যায়। এটি একটি কম্পনজনিত সমস্যা যা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে। এটি হৃদযন্ত্রকে মস্তিষ্ক সহ শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত পাম্প করা থেকে বিরত রাখে। যেহেতু পেশী প্রসারিত এবং সংকুচিত হয় না, ফলে রক্ত প্রবাহিত হবে না।
হার্ট অ্যাটাকের পর হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
স্ট্রোক:
যখন মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত প্রবাহিত হয় না। সুতরাং, মস্তিষ্কের কোষগুলি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ থেকে বঞ্চিত। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তৃষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধা।
টয়লেট স্ট্রেন:
মলের উপর চাপ দিলে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এটি হার্টে অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের দিকে পরিচালিত করে।
টয়লেটে বসার ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ শৌচাগারের চেয়ে বেশি ট্রিগার করে কারণ এর জন্য বেশি চাপের প্রয়োজন হয়। এটি প্রায়ই বাথরুমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটাতে পারে।
রক্তচাপের আকস্মিক পরিবর্তন:
উচ্চ রক্তচাপের মানুষের জন্য, ক্রমানুসারে গোসল করা, পানির তাপমাত্রা এবং ঋতু বিবেচনা করা উচিত, যেমনটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। হঠাৎ ঠান্ডা জলের এক্সপোজার সহানুভূতিশীল স্বর বৃদ্ধি করে যা ত্বকের তাপমাত্রায় দ্রুত পরিবর্তন ঘটায়। এটি রক্তচাপ বাড়ায়।
স্নান রক্তচাপে আকস্মিক পরিবর্তন ঘটায় বলে সন্দেহ করা হয় যা সেরিব্রাল রক্তনালীতে ইস্কেমিয়া সৃষ্টি করে। এটি বাথরুম বা টয়লেটে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট চালাতে পারে।
স্নান বা গোসল করার সময় প্রথমে মাথা ও চুল ভিজাবেন না। এটি ভুল ক্রম। আমরা সরাসরি আমাদের মাথায় শাওয়ার বা বালতি জল দিয়ে স্নান করার প্রবণতা রাখি। এটি শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত সামঞ্জস্য করে কারণ আমরা উষ্ণ রক্তের। এটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
অনেক ভোরে ওঠা:
বয়স বেশি। উচ্চ রক্তচাপ আছে। এমন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য সকাল হতে পারে দিনের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। সাধারণত, আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট ব্যবহার করি এবং সকালে স্নান বা গোসল করি। গবেষণায় বলা হয়েছে, সকাল ৮ টা থেকে সকাল ১১ টার মধ্যে ইভেন্টের অর্থাৎ স্ট্রোক ও হার্ট এট্যাকের সূত্রপাত বেশি হয়।
সূত্রঃ
https://indusscrolls.com/why-do-strokes-often-happen-in-the-bathroom/