হাট ও বাজার বলতে কি বুঝায়? হাট ও বাজারকে কেনো গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ বলা হয়?

অপ্রাসঙ্গিক হলেও যেহেতু প্রশ্নটি বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে তাই একটু আলোচনা করা হলো। কোনো কোনো সময় দেশি ও বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে। এগুলোকে মিশ্র শব্দ বলে। যেমনঃ হাট + বাজার(বাংলা +ফারসি) = হাটবাজার। হাট-বাজার সমার্থক শব্দযোগে গঠিত সমাস।

সেই সভ্যতার সৃষ্টিলগ্ন থেকে হাট বাজার সংক্রান্ত কর্মকান্ড বা হাট ও বাজার শব্দ দুটির সাথে মানব সমাজ ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ইতিহাস কি বলে? গল্প বা উপাখ্যান যা পাওয়া যায় তাতে এক জায়গায় গুছিয়ে সুন্দরভাবে বর্ণনা বা লেখা না পাওয়া গেলেও অঞ্চলভেদে স্থানীয় লোকমুখে এখনো হাটের ইতিহাস ও ঐতিহ্য টিকে আছে।

হাট বলতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে, নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্ধারিত স্থানে ক্রেতা ও বিক্রেতার একটি সমাবেশ। নির্দিষ্ট দিন ছাড়া অন্যান্য দিন হাটের স্থান সাধারণতঃ ফাঁকা থাকে।

অন্যদিকে, বাজার হচ্ছে দৈনন্দিন পণ্যদ্রব্য বিনিময়ের স্থান। এখানে প্রতিদিন পণ্যদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে।

গ্রামীণ উন্নয়ন বা আঞ্চলিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গ্রামীন হাটের। শত শত বছর ধরে বাংলার বুক জুড়ে অগণিত হাটে বেচাকেনার এই বাণিজ্যে জীবন জীবিকা ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিরাট এক ভূমিকা পালন করে চলেছে। এজন্য হাট ও বাজারকে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ বলা হয়।

পণ্যের হাতবদল ছাপিয়ে স্থানীয় আচার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সংকট আর সভ্যতার নানা ছাপ মেলে সেখানে।

সুরম্য অট্টালিকা, বড় বড় ভবন কিংবা সাজসজ্জার বালাই নেই। তবে অভাব নেই প্রাণস্পন্দনের। আবহমান বাংলার অকৃত্তিম সৌন্দর্য হাতছানি দেয় হাটের পণ্য বেচাকেনার এই কর্মযজ্ঞে। মানুষের কোলাহলে মুখরিত এক ভালোবাসার মিলনমেলায়।

উঠোনের মাচায় ঝুলে আছে লাউ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে, উচ্ছে আরো কতো কি। ঘরের চালে চালকুমড়ো। এগুলো কেটে হাতে করে বা কাঁধে করে দেয় ছুট হাটের দিকে। বাড়ীর গাছের আম বা অন্য যেকোনো ফল ধামায় (বেত দিয়ে তৈরী মজবুত এক পাত্র) ভর্তি করে সোজা দৌড় হাঁটের পথে।

ক্রেতা খুশি বাড়ীর তাজা পণ্য ক্রয় করতে পেরে আর  বিক্রেতা খুশি সব পণ্য বিক্রয় করতে পেরে পকেট ভর্তি টাকার সুখে। বড় বড় গাছের ছায়ায়(বট, অশ্বস্থ, শিরীষ), নদী বা খাল তীরবর্তী স্থানে হাট বসে থাকে। হাটের অপর পাশে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানক্ষেত। নদী, সবুজ প্রকৃতি, রোদ, বৃষ্টি সবমিলিয়ে প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে বসবাস একমাত্র এই বাংলাতেই সম্ভব।

আপনি হয়তো মনে করছেন চাকচিক্যময় দালানে বিশাল বড় এক ঠান্ডা রুমের মধ্যে সাজানো পণ্যের থেকে তাড়াতাড়ি বাজার সম্পন্ন করলাম, এটাই তো ভালো।

কিন্তু বিশ্বাস করুন, গাছপালা কেটে বিল্ডিং তৈরি করে, এসি, ফ্রিজ সেট করে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি না করে প্রবাহমান নদী তীরবর্তী উন্মুক্ত স্থান, গাছপালাময় সবুজ প্রকৃতির নিচে কোনোরকমে ধানের নাড়া বা গোলপাতার ছাউনি দিয়ে বানানো ছোট্ট পরিসরের গ্রামীণ স্বর্গীয় যে পরিবেশ, এটাকেই ফিরিয়ে আনুন। এটা করতে পারলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সুস্থ্য পরিবেশে ইতিহাস, ঐতিহ্য বজায় রেখে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে।