ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা।
অ্যালোভেরা “অমরত্বের উদ্ভিদ” হিসাবে সুপরিচিত। এটি বেশ কয়েকটি ত্বকের সমস্যা সমাধানে একটি অলৌকিক এবং যাদুকরী চিকিৎসা হিসাবে সুপরিচিত। অ্যালোভেরার জেল মুখের দাগ, ব্রণ, পিম্পল এবং রোদেপোড়া কালো দাগ দূর করে। এছাড়া মুখ শীতল করতে, উজ্জ্বল করতে এবং ত্বকের যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে সহায়তা করে।
অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের জন্য একটি দুর্দান্ত ময়েশ্চারাইজার। এটি যেমন একদিকে রুপচর্চায় ভূমিকা রাখে তেমনি এর রয়েছে নানা ঔষধী গুণ। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা পর্যন্ত অ্যালোভেরার ভূমিকা রয়েছে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার কার্যকারিতা বা উপকারিতা গুলো কি কি-
ত্বকের মৃত কোষ দূর করে:
ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে অ্যালোভেরাই হল এর একমাত্র সমাধান। সেক্ষেত্রে, এক চা চামচ ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল, এক চা চামচ ওটমিলের গুড়া ও ১/২ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এই মাস্ক মুখে আর গলায় ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন৷ এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করুন।
ঠোঁটের রং উজ্জ্বল করে:
ঠোঁটের রঙ উজ্জ্বল, নরম আর মসৃণ করতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট হবে উজ্জ্বল। এছাড়া ১ চামচ চালের গুঁড়ো আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করে:
ব্রণ ও ব্রণের দাগ হতে সহজে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরার মধ্যে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে যা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিসে ভরপুর থাকায় ত্বকের ব্রণ ও ব্রণের দাগ সহজেই দূর করে থাকে।
ব্রণের দাগ দূর করতে ১ চামচ মধু ও ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন।
ত্বক উজ্জ্বল করে:
অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে লাগালে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সুন্দর। তাছাড়া হলুদ, মধু ও অ্যালোভেরার জেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানাতে পারেন। এই পেস্ট ব্যবহারে আপনি পেতে পারেন উজ্জ্বল ত্বক। এছাড়া নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করলে ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
শুষ্ক ত্বকের যত্নে:
রুক্ষ ও প্রাণহীন ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা অনন্য। শুষ্ক ত্বককে স্বাভাবিক করতে এবং বলি রেখা, ব্রণ এবং কালো ছোপ করতে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন এবং ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে:
মুলতানি মাটির সাথে মধু, লেবুর রস ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার মাস্কটি ব্যবহারে মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ততার সমস্যা দূর হবে।
রোদেপোড়া দাগ দূর করে:
অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বকের রোদেপোড়া দাগ দূর করতে পারে। একটি কাঁচা টমেটোর মাঝখান থেকে শুধু শাঁসটুকু নিন। এবার মসুর ডালের পেস্টের সাথে অ্যালোভেরা জেল ও টমেটোর শাঁস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে, গলায় এবং হাত-পায়ে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মাস্কটি ধুয়ে ফেলার পর ভেজা ত্বকেই কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল ও দুধের মিশ্রণ লাগিয়ে নিবেন। এতে করে ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকবে।
ত্বক সতেজ রাখে:
অ্যালোভেরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানে সমৃদ্ধ। এর জেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং এর ভিটামিন “এ”, “বি, সি” ও “এ” উপাদান ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
দুই চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে প্যাক তৈরি করে পুরো মুখে লাগান এবং শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের বলিরেখা দূর করে:
অ্যালোভেরায় রয়েছে ভিটামিন “সি”, “ই” ও বেটা-ক্যারোটিন যা ত্বকের যত্নে অতুলনীয়। এটি বলিরেখা দূর করে টানটান করে ত্বক। এজন্য শুকনো কমলালেবুর খোসার গুঁড়া, চালের গুঁড়া, মধু ও তুলসী পাতার মিশ্রণের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মুখটা।