ডুমুর আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য খুব উপকারী।
ডুমুর অনেকে হয়তো চেনেও না আর অনেকে হয়তো ভুলতে বসেছে। বহু শতাব্দী ধরে ডুমুর বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। আমাদের দেশে এটা চাষ না হলেও বাইরের দেশে এটা চাষ করা হয়।
গ্রামে রাস্তার পাশে বা ঝোপ ঝারে ডুমুর গাছ দেখা যায়। পাকা ডুমুর পাখির খুবই পছন্দের একটি খাবার। হালকা মিষ্টি স্বাদ এবং পুষ্টিকর ডুমুর ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য পর্যন্ত বিভিন্ন চিকিৎসা করতে সহায়ক হতে পারে।
বাজারে গিয়ে অন্যান্য সবজি কিনলেও এই ফলটির খোঁজ আমরা করিই না। ডুমুরভাজি অথবা ভর্তা এছাড়া ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুর দিয়ে ঝোলও রাঁধা হয়।
এছাড়া ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাঁকা ডুমুর, বাকল, মূল প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডুমুর কাঁচা অবস্হায় সবুজ আর পেঁকে লাল রসালো ফল হয়ে ওঠে। সাথে যোগ হয় পাঁকা ডুমুরের সুমধুর ঘ্রান।
এই সবজি বা ফলে ক্যালোরি কম থাকে এবং এতে কোনও ফ্যাট থাকে না। একটি বড়, কাঁচা ডুমুরের মধ্যে মাত্র ৪৭ ক্যালোরি রয়েছে। কাঁচা এবং শুকনো ডুমুর দুটোই আমাদের জন্য ভাল।
এক আউন্স শুকনো ডুমুরের মধ্যে ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। ডুমুর কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
ডুমুর ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা অস্টিওপোরোসিসের দূর করতে পারে। ২০০৫ সালের একটি স্টাডি ট্রাষ্ট ট্রাস্ট উৎস অনুসারে, শুকনো ডুমুর “উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে।”
ডুমুরের পুষ্টি উপাদান
এতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো-
- ভিটামিন “বি”,”এ”,”সি”
- ভিটামিন “কে”
- পটাসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- জিঙ্ক
- কপার
- ম্যাঙ্গানিজ
- আইরন
ডুমুরের উপকারীতা
নিচে ডুমুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা দেওয়া হলো –
চুলের জন্য:
ডুমুর চুলের জন্য খুবই ভালো। এটি চুলকে মজবুত এবং ময়শ্চারাইজ করার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিও করে।
চুলের জন্য ডুমুরের উপকারীতা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অভাব থাকলেও এর কিছু প্রমাণ রয়েছে যে, ডুমুরে থাকা কিছু ভিটামিন এবং খনিজ চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
একটি স্টাডি ট্রাস্টেড সোর্স বলেছে চুল পড়ার ক্ষেত্রে জিঙ্ক এবং কপার এর ভূমিকা রয়েছে।
পরবর্তী স্টাড ট্রাস্টেড সোর্স গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে, ডুমুরের বেশ কয়েকটি পুষ্টিউপাদান চুলকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে।
ত্বকের জন্য:
পুষ্টিকর, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কাঁচা ডুমুর ফেস মাস্ক তৈরি করতে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে ডুমুরের পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। সাথে ১ টেবিল চামচ দই যোগ করুন।
মাস্কটি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। অ্যালার্জি থাকলে ত্বকে ডুমুর ব্যবহার করবেন না।
পেস্ট করা ডুমুর ব্রণর জন্য জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। এছাড়া ডুমুর ফোঁড়া ও চর্মরোগ নিরাময়ে বেশ কাজ করে।
ডায়াবেটিসের জন্য:
অনেকের কাছে ডুমুর অবহেলিত হলেও এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারীতা রয়েছে। ডুমুর গাছের পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
2016 এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ডুমুরের পাতা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে।
২০০৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমুর রক্তের ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন “ই” এর স্তরকে স্বাভাবিক করে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অবদান রাখে।
ওজন কমায়:
প্রাকৃতিকভাবে ডুমুরে ডায়েটরি ফাইবার বেশি, যারা ওজন কমাতে চান তাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভালো খাবার হতে পারে।
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারগুলি সবসময় আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে ক্ষুধা এবং খাদ্যাভ্যাস কমায়।
ডুমুর মধ্যে জৈবিক উপাদান রয়েছে, যা অন্ত্রে বিদ্যমান ভাল ব্যাকটিরিয়াকে সমর্থন করে এবং হজম সুস্থ্যতা উন্নত করে।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যতা দূর করে:
এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ রয়েছে। যা কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে পাচন সিস্টেম ঠিক রাখে।
শুকনো এবং কাঁচা ডুমুরে ভিটামিন “কে” বেশি থাকে। মাত্রা অতিরিক্ত ভিটামিন “কে” না খাওয়াই ভালো। তাই ডুমুর খাওয়ার সময় পরিমাণ মতো খেতে হবে।
যাতে প্রতিদিন আমাদের শরীরে ভিটামিন “কে” গ্রহণ চাহিদার তুলনায় বেশি না হয়ে যায়। প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর খাবার খান সুস্থ্য থাকুন।