চিয়া বীজ বা চিয়া সিড ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
চিয়া বীজকে প্রায়শই একটি “সুপারফুড” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। চিয়া বীজ (Chia seeds) সালভিয়া হিস্পানিকা নামক উদ্ভিদের বীজ।
এটি মূলত মেক্সিকো এবং গুয়াতেমালার প্রধান খাদ্য ফসল ছিল। এই বীজ গুলো দেখতে অনেকটা তোকমা দানার মতো। চিয়া বীজ সাদা ও কালো রঙের এবং তিলের মতো ছোট আকারের।
এখন আমরা আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাবার ও খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। এসব স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবারের তালিকায় ‘চিয়া সিড’ অনেক জনপ্রিয়।
চিয়া বীজ ছোট দেখতে হলে কি হবে, পুষ্টিগুণে অবিশ্বাস্যভাবে সমৃদ্ধ। এই বীজ হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে, হাড় শক্তিশালী করে, ক্ষুধা ও ওজন কমানো, ট্রাইগ্লিসারাইড কমানো এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করে।
খাদ্য ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহারের জন্য চিয়া বীজ অ্যাজটেক (Aztecs) এবং মায়ানদের দ্বারা প্রথম চাষ হয়। চিয়া বীজ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাদের অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধার কারণে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
চিয়া বীজের পুষ্টি উপাদান
নিচে ২৮ গ্রাম বা ২ টেবিল চামচ চিয়া বীজের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো:
- ক্যালোরি: ১৩৮
- প্রোটিন: ৪.৭ গ্রাম
- আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড (ALA): ৫ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১১.৯ গ্রাম
- ফাইবার: ৯.৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৪% (DV)
- আয়রন: ১২% (DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: ২৩% (DV)
- ফসফরাস: ২০% (DV)
- জিঙ্ক: ১২% (DV)
- ভিটামিন বি1 (থায়ামিন): ১৫% (DV)
- ভিটামিন B3 (নিয়াসিন): ১৬% (DV)
চিয়া বীজের উপকারিতা
চিয়া বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান। নিচে চিয়া বীজের উপকারিতা দেওয়া হলো –
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:
চিয়া বীজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি চমৎকার উৎস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল আমাদের শরীরের বার্ধক্য এবং ক্যান্সারের মতো রোগের জন্য দায়ী।
চিয়া বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মধ্যে রয়েছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, ক্যাফেইক অ্যাসিড, মাইরিসেটিন, কোয়েরসেটিন এবং কেমফেরল।
এই সবগুলি উপাদান হার্ট এবং লিভার সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অ্যান্টিক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
চিয়া বীজে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২৮ গ্রাম চিয়া বীজে প্রায় ১০ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ ওজন এবং স্থূলতা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া চিয়া বীজে থাকা প্রোটিন ক্ষুধা এবং খাদ্য গ্রহণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৯০ জন অতিরিক্ত ওজনের লোকের এক গবেষণায়, ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম চিয়া বীজের সম্পূরক গ্রহণ করায় শরীরের ওজন কমে পাশাপাশি রক্তচাপও কমে।
হার্টের ঝুঁকি কমাতে পারে:
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা -3 রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
এতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার রক্তের LDL (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে। পরিবর্তে, যা হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
এছাড়া চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
হাড়ের জন্য ভালো:
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম।
গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে হাড়ের শক্তি ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত চিয়া বীজ গ্রহণ হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে:
চিয়া বীজ খাওয়া রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, সম্ভবত তাদের ফাইবার সামগ্রী এবং অন্যান্য উপকারী যৌগগুলির কারণে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। এটি খাবারের পরে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে।
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:
চিয়া বীজ হজমের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কারণ এতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য দুর্দান্ত।
এতে দ্রবণীয় ফাইবার এবং পলিফেনল রয়েছে যা প্রিবায়োটিক হিসাবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে যার ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে চিয়া বীজ খেতে পারেন। আর যারা ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়ামের ১ ঘণ্টা পর চিয়া সিড খেতে পারেন।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আতা ফল খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।