গর্ভাবস্থাকালীন স্ট্রেচ মার্ক দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।
গর্ভাবস্থাকালীন স্ট্রেচ মার্ক গর্ভবতী অবস্থায় দেখা দেয়। বিশেষ করে পেটে ও পেটের আশেপাশে এবং স্তনে। গর্ভধারণের সময় নারী শরীরে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন আসে। তারমধ্যে একটি পরিবর্তন হচ্ছে স্ট্রেচ মার্ক। গর্ভাবস্থায় ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন বাড়লে স্ট্রেচ মার্ক হতে পারে। মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষেরও স্ট্রেস মার্ক হতে পারে।
গর্ভাবস্থাকালীন স্ট্রেচ মার্ক মুলত বাড়তি ওজনের কারণে হয়। শরীরের আয়তন বেড়ে গেলে ত্বক বাড়তি আয়তন ঢাকতে প্রসারিত হয়। ফলে এই দাগের সৃষ্টি হয়। আমাদের ত্বকের মধ্যে যে একটা টান টান ভাব থাকে তা কোলাজেন এর কল্যানে। এই কোলাজেন ঠিকমতো তৈরি হতে না পারলে বা ভেঙে গেলে এই ধরনের দাগ দেখা যায়।
নিচে গর্ভাবস্থাকালীন স্ট্রেচ মার্ক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় দেওয়া হলো –
এক্সফোলিয়েশন:
স্ট্রেচ মার্ক দূর করার একটি সহজ উপায় হল নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন। এটি আপনার দেহ থেকে অতিরিক্ত মৃত ত্বক এবং প্রসারিত চিহ্নগুলি সরিয়ে দেয়।
ভিটামিন “এ”
ভিটামিন “এ” রেটিনয়েড হিসাবে উল্লেখ করা হয়। রেটিনয়েড ত্বককে মসৃণ এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরণের ক্রিমে রেটিনয়েড ব্যবহার করা হয়।
তবে শুধু মাত্র ত্বকে ভিটামিন “এ” ব্যবহার করলেই হবে না এটি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়ও রাখতে হবে। গাজর এবং মিষ্টি আলু জাতীয় কিছু খাবার ভিটামিন “এ” এর মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
চিনি:
স্ট্রেচ মার্কের দাগ তুলতে চিনি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে চিনির সাথে নারকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি দাগের জায়গায় ঘষুন। সপ্তাহে চারবার এভাবে ব্যবহার করলে দাগ অনেক টা কমে যাবে।
অ্যালোভেরা:
স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে অ্যালোভেরা জেলের কোনও বিকল্প নেই। অ্যালোভেরা হল প্রাকৃতিক নিরাময়কারী এজেন্টই। এটি স্ট্রেচ মার্ক দূর করার জন্য এটি একটি আদর্শ ঘরোয়া প্রতিকার। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে তাতে ৫ টা ভিটামিন “এ” ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই মিশ্রণটি স্ট্রেচ মার্ক এর উপরে লাগিয়ে ততক্ষণ মাসাজ করতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণটি একেবারে শুকিয়ে যায়।
Hyaluronic অ্যাসিড:
কোলাজেন হল আপনার ত্বকের এমন প্রোটিন যা ত্বকের আকার বজায় রাখতে সহায়তা করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মুখ এবং আমাদের দেহে কোলাজেন হ্রাস পায়। গ্লাইকোলিক এসিডযুক্ত টোনার বা ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। গ্লাইকোলিক এসিড ফাটা দাগ দূর করতে সাহায্য করে। স্ট্রেচ মার্কে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
ডিমের সাদা অংশ:
ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। তাই ডিমের সাদা অংশ ত্বকের জন্য একটি সুপারফুড। ডিমের সাদা অংশ ভাল করে ফেটিয়ে স্ট্রেচ মার্কসের ওপর লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এপরপর অলিভ অয়েল দিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এই নিয়ম মেনে চললে কয়েকদিনের মধ্যেই দাগ হালকা হয়ে যাবে।
নারকেল তেল
ত্বকের যত্নে নারকেলের তেল খুবই কার্যকরী। নারকেল তেল স্ট্রেচ মার্ক দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। তেল ভালো করে ম্যাসাজ করে স্ট্রেচ মার্কের উপর লাগান। এজন্য খাঁটি নারকেলের তেল বেছে নিন।
শসা এবং লেবুর রস:
শসা এবং লেবুর রস প্রাকৃতিক অম্লতা নিরাময় এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রেখে শীতল প্রশান্তি প্রদান করে। লেবুর রস এবং শসার রস সমান অংশে মিশিয়ে নিন এবং মিশ্রণটি ত্বকে লাগান। লাগানোর ১০ মিনিটের পরে ধুয়ে ফেলুন।
আলুর রস:
আলুর রসে স্ট্রেচ মার্ক দূর হয়ে যায়। প্রতিদিন স্নানের আগে সামান্য আলুর রস স্ট্রেচ মার্কসের ওপর হালকা করে লাগিয়ে কিছু সময় ম্যসাজ করে জায়গাটা শুকাতে দিন। এরপর পাঁচ থেকে দশ মিনিট রেখে দিন তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
পাতিলেবুর রস:
স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে পাতিলেবুর রসও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। প্রতিদিন স্ট্রেচ মার্কের উপর পাতিলেবুর রস মাখিয়ে দিন। তারপর অন্তত ১০ মিনিট রেখে উষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে মশ্চারাইজার লাগান। স্ট্রেচ মার্ক ধীরে ধীরে হালকা হয়ে মিলিয়ে যাবে।