সুন্দরবন প্রকৃতির এক বিস্ময়। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট।
সুন্দরবন কি এবং কোথায় অবস্থিত?
সুন্দরবন খুলনা জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেসে অবস্থিত প্রকৃতির নিজের হাতে গড়ে তোলা সবুজের এক বিপুল সমারোহ। এ শুধু বাংলাদেশের নয়-এই পৃথিবীর সকল দেশের বিস্ময়। প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল ভান্ডার এই সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট। সেকারণে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের পাশাপাশি প্রাণী বৈচিত্র্যেরও অভূতপূর্ব সমাহার ঘটেছে এখানে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার
উটের কথা বললে যেমন গরম মরুময় আরব ও আফ্রিকার কথা মনে পড়ে, ক্যাঙ্গারুর কথা বললে যেমন মানসপটে অস্ট্রেলিয়ার ছবি ভেসে ওঠে, তেমনি রয়েল বেঙ্গল টাইগার-এর নাম উচ্চারণ করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের কথা। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলার এই বাঘ-এর শিকারক্ষিপ্রতা, হিংস্রতা ও রাজকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য সারা বিশ্বে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নাম পরিচিত।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
লক্ষ-কোটি সুন্দরী, গরান, গেওয়া বৃক্ষের ছড়াছড়ি অর্থাৎ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য সবুজ বৃক্ষের সমারোহ এবং এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে শান্ত স্বভাবের সুদৃশ্য চিত্রা হরিণের উপস্থিতির পাশাপাশি হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে।
বনের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা অসংখ্য ছোট্ট নদী, খাল এবং এর জলের তলায় অসংখ্য মাছ ও কুমিরের বসবাস। এত বিচিত্র ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর একই স্থানে সহাবস্থান পৃথিবীর খুব কম স্থানেই চোখে পড়ে। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় যেন শিল্পীর হাতে আঁকা একটি ছবি।
ভ্ৰমণপিপাসু মানুষ যারা ঘুরতে ভালোবাসেন, যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, প্রকৃতির নীরবতা, সবুজ, শান্ত, পরিবেশে ধ্যানমগ্নতা অর্থাৎ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ জায়গা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মিলিতস্থান বঙ্গোপসাগরের কোলে গড়ে ওঠা এই সুন্দরবন।
সৃষ্টির আদি থেকে দেখা যায় মানুষ এক জায়গায় আবদ্ধ থাকতে পারে না। মানুষের অনুসন্ধিৎসু মন সবসময় অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে আর অদেখাকে দেখতে চায়। তৃষ্নার্ত মানুষ তার অদম্য আকাঙ্খাকে নিবৃত্ত করার জন্যই চিরচেনা পরিবেশ ছেড়ে বাইরে পারি জমায়।
এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যায় অনন্ত রহস্যের সন্ধানে। আর যে দেশ বা যে এলাকা যত বেশী ব্যাতিক্রমধর্মী ও আকর্ষণীয়, সে দেশ তত বেশী পর্যটনপ্রিয়। এক্ষেত্রে সুন্দরবন বাংলাদেশের এক অনন্য পর্যটন সম্পদ।প্রতিবছর বহু পর্যটক শত সহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
সুন্দরবনের আয়োতন
মোট সুন্দরবনের আয়োতনের তিনভাগের দুইভাগ (২/৩) বাংলাদেশ অংশে এবং একভাগ (১/৩) ভারতের। মোট ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার (৬০০০ বর্গ কি.মি ) এর মধ্যে ২০০০ বর্গ কি.মি.জলাভূমি। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার প্রায় তিন হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এই বন বিস্তৃত।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র
এই সুন্দরবনে ৩৫-প্রজাতির সরীসৃপ, ২৭০-প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৮ প্রজাতির এমফিবিয়ানস, ২৫০- প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। সুন্দরবন এক অসাধারণ প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদ। সুন্দরবনই বাংলাদেশের পিরামিড, সুন্দরবনই বাংলাদেশের আইফেল টাওয়ার।
প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এটি গড়ে তুলেছেন। সুন্দরবনের এই জৈব বৈচিত্র্য (bio-diversity) শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়- সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলা হয় সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন হতে পারে একটা অন্যতম জীবন্ত গবেষণা কেন্দ্র।
বৃক্ষাচ্ছাদিত নয়নাভিরাম দৃশ্যপট, সবুজের সমারোহ, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ ও প্রাণী সব মিলিয়ে এ এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিরল লীলাভূমি, অসাধারণ রহস্যের আধার।