যেসব খাবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
খাদ্য যেমন শরীরের উপকারি, তেমনই সমান ভাবে অপকারিও। কারণ বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন আপনাকে উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী করে তুলতে পারে, ঠিক তেমনই অনায়াসেই ত্বক খারাপও করে দিতে সক্ষম। যেমন আমরা অনেকেই জানি বেশি তেল জাতীয় খাবার আমাদের শরীর এবং ত্বক উভয়ের জন্যই খুব একটা ভালো নয়।
অতিরিক্ত তেল খাওয়ার ফলে মুখে ব্রণ হতে পারে। আবার ঠিক তেমনই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ত্বকের ওপর বলিরেখা সৃষ্টি করতে সক্ষম। দেহের ও মুখের ত্বক ভালো রাখতে কী কী আমাদের খাওয়া উচিত তা আমরা কম বেশি সবাই জানি।
কিন্তু কোন কোন খাবার গুলো আমাদের ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো ও কোনগুলো ভীষণ খারাপ তা আমরা অনেকেই জানি না।
যেসব খাবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর
চলুন তাহলে জেনে নিই, কোন খাবার গুলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর-
প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি খাবার:
ছোটবেলায় চকলেট, ক্যান্ডি খেতে কতই না মজা লাগত! কিন্তু বড় হয়ে তো অনেক অভ্যাসই আমাদের বাদ দিতে হয়। বড়রাও যদি নিয়মিত ক্যান্ডিতে অভ্যস্ত থাকেন তাহলে শরীরে প্রক্রিয়াজাত চিনির মারাত্মক চাপ পড়বে। প্রক্রিয়াজাত চিনি ত্বকের জন্য এক বড় সমস্যা। অতিরিক্ত চিনির কারণে কোলাজেন নষ্ট হয়ে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে যেতে পারে।
দুধের তৈরি খাবার:
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে দুধ, পনির, দই ইত্যাদি খাবার ত্বকের কোনো উপকারেই আসে না। এসব খাবারে এমন কিছু উপাদান আছে যা হরমোনের উপর প্রভাব রেখে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তেল উৎপাদন যত বেশি হবে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। যা ত্বকের জন্য হানিকর।
‘স্কিম্ড মিল্ক’ বা সর তোলা দুধ ত্বককে ব্রণ প্রবণ করে ফেলে। যদি খাবার থেকে দুধের তৈরি খাবার বাদ দিতে না পারেন তাহলে সাধারণ দুধ, সয়া বা কাঠ বাদামের দুধ পান করুন। মাখনও মুখে বলিরেখার সৃষ্টি করে। তাই মাখন খাওয়ার পরিমাণ কম হওয়াই ভালো।
ভাজাপোড়া খাবার:
ফ্রাইড স্ন্যাকস বা ভাজাপোড়া খাবার যাই বলেন না কেন, এসব খাবারের আসক্তিটা আপনাকে ছাড়তেই হবে। এসব খাবারে থাকা প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের জন্য খুবই খারাপ। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবারে আপনার ত্বকে ব্রণ বা ফুসকুড়ি পড়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
সোডা জাতীয় পানীয়:
সোডা বা নানা ধরনের কোমল পানীয় পানে অনেকেরই অভ্যস্ততা আছে। কিন্তু এ জাতীয় পানীয় ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এসব পানীয়ে থাকা অতিরিক্ত মাত্রার প্রক্রিয়াজাত চিনি আপনার ত্বকের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া ত্বক না চাইলে সোডা জাতীয় পানীয়ের অভ্যাস ছাড়ুন।
কার্বোহাইড্রেইট:
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট ভরপুর খাবার যেমন: মিষ্টি, রুটি, ক্যান্ডি, পাস্তা, সোডা, জুস ইত্যাদি খাবার বেশি খাওয়ার ফলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা হতে পারে। এই খাবারগুলো খাওয়ার ফলে ত্বকে শর্করার মাত্র বেড়ে যেতে পারে।
তাছাড়া এতে ত্বকে এক ধরণের হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা ত্বকে তেল নিঃসৃত করে। ফলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে ও বয়সের আগেই বলিরেখার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এসব সমস্যা এড়িয়ে চলতে চাইলে সবজি, অপরিশোধিত শস্যজাতীয় খাবার ইত্যাদি খেতে হবে।
অতিরক্ত লবণ:
অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের ফলে চোখের নিচে ফোলাভাব এবং চোখের চারপাশে কালি পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের ফলে মুখের ত্বক ফুলে যেতে পারে। কারণ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে মুখে পানি জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তাছাড়া আয়োডিনযুক্ত লবণ অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা হতে পারে। লবণ গ্রহণের পরিমাণে লাগাম টানতে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তাছাড়া টিনজাত খাবার খাওয়ার আগে তা ভালোভাবে ধুয়ে নিলে লবণের পরিমাণ কমে আসবে অনেকটা।
জাঙ্ক ফুড:
কারণ নিশ্চয়ই আছে, নইলে খাবারকে ‘জাঙ্ক ফুড’ বলা হবে কেন। অতিরিক্ত মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার মতো নানা উপাদানে ঠাসা থাকে এসব খাবার। খেতে যত মজাই হোক আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এগুলো খুবই ক্ষতিকর। জাঙ্ক ফুডের বদলে ফল-মূল-শাক-সবজি খাবারদাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়ান।
লাল মাংস:
অতিরিক্ত লাল মাংস খেলে ত্বকে বিরূপ প্রভাব পড়ে। লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং ত্বকের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়।
ক্যাফেইন আসক্তি:
ক্যাফেইনে আসক্তি আছে অনেকেরই। এক কাপ কফিতে চাঙা হয়ে ওঠা একটা দারুণ ব্যাপার। কিন্তু এই আসক্তিতে মজে গিয়ে একের পর এক কফি পান করতে থাকা কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপার। ক্যাফেইন আপনার ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। অতিরিক্ত কফি নির্ভরতায় ত্বক শুকনো খটখটে হয়ে যেতে পারে। ফলে ত্বকের ভালো চাইলে এ আসক্তি কমান।
সিগারেট ও নেশা জাতীয় দ্রব্য:
ধূমপান আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর তা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু ধূমপানের ফলে আপনার ত্বকের যে কি পরিমান ক্ষতি হচ্ছে তা কি আপনার জানা আছে? এর কারণে ত্বকের ক্যান্সার হতে শুরু করে খুব জটিল চর্মরোগও হতে পারে।
তাছাড়া এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নেশা করে থাকেন যেমন- অ্যালকোহল, হিরোইন, গাজা ইত্যাদি। এই নেশা দ্রব্য গুলো তিল তিল করে দেহের ভিতরে ও বাহিরের অনেক ক্ষতি করে। তাই সুস্থ থাকতে ও ভালো ত্বকের জন্য ধূমপানসহ সব ধরনের নেশা দ্রব্য ত্যাগ করুন।
মুখের স্বাদে আমরা অনেক খাবারই খাই। সুস্বাস্থ্যের জন্য ও ত্বকের পরিচর্যায় খাদ্যাভ্যাসের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। তাই উপরের খাবারগুলি ত্বকের সুরক্ষায় এড়িয়ে চলা উচিত।