ত্বকের যত্নে কমলালেবুর খোসার ব্যবহার।

শুনেই অবাক হচ্ছেন এত কিছু রেখে কিনা কমলার খোসা। যা আমরা সবসময় ফেলে দিই। হ্যাঁ ফেলে দেওয়া কমলার খোসা রূপচর্চায় বেশ কাজে লাগতে পারে। স্বাদে তো কমলা অতুলনীয়, এর খোসাও কিন্তু কম যায় না।

ভিটামিনে সমৃদ্ধ কমলা খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও উপকারি। শীত মানেই ত্বকে শুষ্ক ভাব। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় না। যদি আপনি ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার খুঁজেন তাহলে কমলালেবুর থেকে ভাল আর কিছু পাবেন না।

কমলার ভিতরে অংশের চেয়ে খোসায় ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ বেশি থাকে। এমনকি দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজেও কমলার খোসা (orange peel) ব্যবহার করা যায়।

ত্বকের যত্নে কমলালেবুর খোসার ব্যবহার

চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে কমলা লেবুর খোসার উপকারিতা সম্পর্কে-

ব্রনের সমস্যা দূর করতে:

কমলার খোসাতে উপকারী উপাদান মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করে। এক্ষেত্রে একটি কমলার খোসা ১ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে নিন। তারপর পানি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তা দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

স্ক্রাবার হিসেবে:

কমলার খোসা স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি মৃতকোষ দূর করে ত্বকের উজ্জলতা ফিরিয়ে আনে। স্ক্রাবার তৈরি করতে কমলার খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর তা মুখে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করুন।

মসৃণও দাগহীন ত্বক পেতে:

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে ত্বককে মসৃণ ও দাগহীন করে তুলতে চাইলে কমলালেবুর খোসা খুবই কার্যকরী। কমলার খোসার সঙ্গে মুসুরের ডাল বেটে নিন। বেটে মিশ্রণটি ত্বকে লাগান।

ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে:

১ চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো এবং দুধের সর বা টক দই নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর ফেস প্যাকের মতো মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।

বয়সের ছাপ দূর করতে:

ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক টানটান রাখতে বেছে নিন কমলালেবু। কমলায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অ্যান্টিঅক্সিডেন্টরেডিক্যালের রয়েছে যা আপনার ত্বককে ফ্রি রেডিক্যালের হামলা থেকে রক্ষা করে, কাছে ঘেঁষতে দেয় না বলিরেখা ও বয়সের দাগ।

সেক্ষেত্রে কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন, তারপর জল বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করুন।

মুখের মৃত কোষ দূর করতে:

কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে পাউডার করে নিন। মুলতানি মাটি আর মধুর সাথে কমলালেবুর খোসার গুড়ি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। সারা মুখে এই মিশ্রণটা লাগিয়ে আলতো হাতে স্ক্রাব করুন।

এরপর ধুয়ে নিলেই ঝকঝকে হয়ে উঠবে মুখ। এই স্ক্রাবটি মুখের মৃত কোষ তুলে দেবে, অন্যদিকে দাগছোপ হালকা করতেও সাহায্য করবে।

রোদে পোড়া দাগ দূর করতে:

২ টেবিল চামচ কমলার খোসা গুঁড়া, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন। এতে উপকার পাবেন।

ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে:

ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে কমলার খোসার জুড়ি নেই। ১ চামচ কমলার খোসা গুঁড়া, ১ চামচ হলুদ ও ১ চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট পর গোলাপজল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে:

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে কমলার খোসা ও টক দই খুবই কার্যকরী। ১ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ কমলার খোসার গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। হাতে না হাতে ফল পাবেন।

ক্লীনজার হিসাবে:

ত্বক পরিষ্কার বা ফেশিয়ালের সর্ব প্রথম ধাপটি হল ক্লীনজিং। কমলার খোসা দিয়ে খুব কার্যকর উপায়ে ত্বক পরিষ্কার করা সম্ভব। ১টি কমলার খোসা ও ১টি শসা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ড করে হাতের তালুতে নিয়ে ত্বক আলতোভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন।

কমলার খোসা রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডারে গুঁড়া করে নিন। মুখবন্ধ বয়ামে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে এটি। বিভিন্ন ফেস প্যাকে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন কমলার খোসা গুঁড়া। ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ কমলার খোসা ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখতে কার্যকর।