যেদিন হাসলাম না, সে দিনটি নষ্ট করলাম। দেহের যন্ত্রনা থেকে তাই মুখের ঠোঁটকে সবসময় আলাদা রাখি।
চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত উক্তি। সর্বদা হাসিখুশি একটি মানুষ। অন্য আর দশটা মানুষের মতো জীবনে অনেক দুঃখ যন্ত্রনা তারও ছিল কিন্তু সেটা নিয়ে টেনশন করে নিজেকে কষ্টের সাগরে না ভাঁসিয়ে সর্বদা হাঁসিখুশি থেকে কষ্টকে উড়িয়ে দিতেন।
হাসি বা laughing বা smiling অর্থাৎ হাঁসিখুশি থাকার অনেক উপকারীতা রয়েছে এটা আমরা কমবেশি অনেকেই জানি তারপরও কেন জানি দুঃখ-কষ্টের সাগরে হারিয়ে যাই আমরা। সারাদিনে একবারও প্রাণ খুলে হাঁসি না।
বর্তমান ইট পাথরে ঘেরা ব্যস্ত শহরে, রোগ, ব্যাধি, দুর্যোগ, মহামারীময় এই পৃথিবীতে মুখের হাসি যেনো কোথায় হারিয়ে যাচেছ।
হাসি একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। প্রাকৃতিক ব্যথানাশক। তাই আমরা চাই হাসতে। দেহের যন্ত্রনা দেহেই থাক, ঠোঁট দুটো থাক আলাদা। দেহের যন্ত্রনা দেহেই থাক মুখটা বা মাথাটা থাক আলাদা।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাসলে এন্ডোরফিন, অন্যান্য প্রাকৃতিক ব্যথানাশক এবং সেরোটোনিন নির্গত হয়। এই মস্তিষ্কের রাসায়নিকগুলি আমাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভাল বোধ করায়। এগুলি কেবল আপনার মেজাজকে উন্নত করে না, তারা আপনার শরীরকে শিথিল করে এবং শারীরিক ব্যথা হ্রাস করে।
কেনো আপনাকে হাসতে হবে বা হাসি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
হাসি কেন গুরুত্বপূর্ণ? হাসি শুধু মেজাজ বাড়ায় না আমাদের দেহে কর্টিসোল এবং এন্ডোরফিন নি:সরণে সাহায্য করে যা অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে: রক্তচাপ হ্রাস ও ধৈর্য বৃদ্ধি।
হাসি আপনার চাপ, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে সুখী মানুষ হিসাবে তৈরি করে। এটি আপনার আত্মবিশ্বাসও উন্নত করতে পারে।
যে দিনটি হাসলাম না সে দিনটি কেনো নষ্ট করলাম অর্থাৎ হাসির উপকারীতা:
আত্নবিশ্বাস জন্মানো:
একজন ব্যক্তির নিজের যোগ্যতার উপর বিশ্বাস হারানো খুবই ভয়ংকর। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ এটাও মানুষ হিসাবে একজনকে বুঝতে হবে। মুহূর্তেই রেগেও যায় না আবার কারো সাথে ঝগড়াও করি না। হাসিখুশি থাকি সর্বদা। আত্নবিশ্বাসও আমার তুঙ্গে। এটাই হাসি খুশি থাকার সবথেকে বড় একটি পাওয়া।
শান্ত ও চাপমুক্ত রাখে:
হাসির বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে স্ট্রেস হরমোন কমানো এবং আপনার শরীর জুড়ে শারীরিক উত্তেজনা হ্রাস করা। এটি আপনার রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে যা আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ছুটির দিনে বা আপনার সকালের যাতায়াতের সময় অথবা সন্ধ্যায় হাঁটার সময় একটি মজার পডকাস্ট শোনার চেষ্টা করুন।
হাসির নাটক বা মুভি দেখা বা টেলিভিশনে আপনি মিস্টার বিন, হাঁসো বা মীরাক্কেলের মতো মজার ও হাসির অনুষ্টান দেখতে পাগল। এটা ভালো। এটা শুধু আপনার মেজাজ উন্নত করে না বরং হাসি আপনার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে আপনার পেশীগুলিকেও শিথিল করে। সুতরাং আপনি যত বেশি হাসবেন, ততই আপনি শান্ত এবং চাপমুক্ত বোধ করবেন।
সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় করে:
হাসি খুশি মানুষ ব্যক্তি, দল সকল ক্ষেত্রে সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাসিখুশি মানুষকে মানুষ বেশি পছন্দ করে। সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সে।
রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে:
উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক ব্যাধি। যার হাসি খুশি মন তার রক্তচাপ কম। গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাসি খুশি থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্যালোরি ক্ষয় হয়। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সম্পর্ক উন্নয়ন:
আপনি হাসিখুশি তাই আপনার সাথে সবাই সম্পর্ক গড়তে চায়। হাসি মনের মানুষ ওপরের দোষ ত্রুটি কম দেখে। কাউকে আঘাত করে না। সবাই ভাবে এই মানুষটা খুব ভালো মনের নরম মানুষ। এর ভেতর কোনো চাতুরতা, কৌটিল্য নেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
হাসি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ওই যে আগেই বলা হয়েছে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের কথা। হরমোন নিঃসরণ হলে শরীরে এন্টিবডি তৈরী হয়। এন্টিবডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো ও আপনাকে সতেজ দেখাবে:
হাসি খুশি থাকার প্রথম শর্ত–মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি। Feel Good Hormone নিঃসরণ দূরে রাখে টেনশন, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার মানসিক স্বাস্থ্য কেন ভালো থাকবে? আপনার এখনো বুড়ো হওয়ার বয়স হয়নি কিন্তু আপনাকে বয়সের তুলনায় বুড়ো দেখায়। অবশ্যই আপনি এটা চাইবেন না। তাই আর দেরি নয়। প্রাণখুলে খুলে শব্দ করে হাঁসতে থাকুন।
সূত্রঃ
https://www.envolvehealth.com/news/five-health-benefits-of-smiling-and-laughing.html
https://www.brightspringhealth.com/blog/7-health-benefits-of-smiling/