ভিটামিন “ডি” অভাবে বার বার অসুস্থ্য হই, চুল পড়ে যায় ও হাড় ক্ষয় হয়ে যায়।
ভিটামিন “ডি” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা, আমাদের সারা শরীর জুড়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। অন্যান্য ভিটামিনগুলির বিপরীতে, ভিটামিন “ডি” হরমোনের মতো কাজ করে।
ভিটামিন “ডি” একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড। যার কাজ হচ্ছে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা। পাশাপাশি এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে। এই ভিটামিনের সবচাইতে বড় উৎস হল সূর্যালোক। এছাড়াও ভোজ্য উৎস যেমন- মাছ, ডিমের কুসুম ও দুগ্ধজাত পণ্যেও এই ভিটামিন মেলে।
প্রতিদিন আমাদের শরীরে ৪০০-৮০০ IU এর কাছাকাছি প্রয়োজন হয়। অনুমান করা হয় যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন লোকের রক্তে ভিটামিন “ডি” এর অভাব রয়েছে।
যখনই বুঝবেন আপনার শরীরে ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতি ঘটছে, সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে তা পূরণ করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিন। আসুন জেনে নিন কিভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে ভিটামিন “ডি” আর অভাব রয়েছে –
ক্লান্তি বোধ করা:
ক্লান্ত বোধ করা এটা অনেক কারণ হতে পারে যেমন অনেক কাজ করলে, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে ও বিশ্রামের ঘাটতি থাকলে। এছাড়া ক্লান্তি বোধ করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতি। যাদের দীর্ঘকালীন ক্লান্তি এবং মাথাব্যথা রয়েছে তাদের মধ্যে দেখা গেছে রক্তে ভিটামিন “ডি” এর মাত্রা কম ছিল।
হাড় ও পিঠে ব্যথা:
ভিটামিন “ডি” বিভিন্নভাবে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন “ডি” আমাদের দেহের ক্যালসিয়াম শোষণকে উন্নত করে। সাধারণত হাড়ের ব্যথা এবং পিঠের ব্যথা রক্তে ভিটামিন “ডি” এর অভাবে হয়।
তাই প্রায়শই পিঠ ব্যথা বা পেশিতে ব্যথা দেখা দিলে হয়ত আপনার ভিটামিন ডি’র অভাব দেখা দিয়েছে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, যাদের ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতি রয়েছে তাদের পিঠের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতিযুক্ত লোকেরা যাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন “ডি” আছে তাদের তুলনায় পা, পাঁজর বা জয়েন্টগুলিতে ব্যথা ও হাড়ের ব্যথা অনুভব করেছিল প্রায় দ্বিগুণ।
প্রায়শই অসুস্থ্য হওয়া:
ভিটামিন “ডি” এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। ভিটামিন “ডি” সরাসরি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
বেশ কয়েকটি বড় পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতি বার বার অসুস্থ হওয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার মতো শ্বাস নালীর সংক্রমণ হতে পারে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন “ডি” পরিপূরক গ্রহণ করা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
ক্ষত নিরাময় করতে:
যদি অস্ত্রোপচার বা আঘাতের পরে ক্ষতস্থান ধীরে ধীরে নিরাময় হয় তাহলে বুঝবেন শরীরে ভিটামিন “ডি” এর অভাব রয়েছে। একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে, ভিটামিন “ডি” ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়।
ডেন্টাল সার্জারি করা লোকদের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্ষত নিরাময়ে, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে এবং সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে ভিটামিন “ডি” এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
হাড়ের ক্ষয় হয়ে যায়:
ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড় ভালো থাকার জন্য ভিটামিন “ডি” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিরা যাদের হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে তারা মনে করে তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে। তাই তারা মনে করে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ক্যালসিয়াম সংশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভিটামিন “ডি” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া মানে আপনার হাড়ে ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ হ্রাস পেয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে যারা হাড়ের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ক্যালসিয়াম-সহ বেশ কিছু খনিজের অভাব পূরণ করতে বলা হয়, সেই সঙ্গে ভিটামিন-ডি এর দিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়।
চুল পড়া:
প্রায়শই চুল পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে মানসিক চাপকে দায়ী করা হয়। তবে, চুল পড়া যখন গুরুতর হয় তখন এটি কোনও রোগ বা পুষ্টির ঘাটতির কারন হতে পারে।
অ্যালোপেসিয়া অ্যারিটা (Alopecia areata) হল একটি অটোইমিউন রোগ যা মাথা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে চুল পড়া দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অ্যালোপেসিয়া আরাটাতে আক্রান্তদের মধ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে যার শরীরে ভিটামিন “ডি” কম ছিল তার আরও বেশি তীব্র চুল পড়ার সাথে জড়িত ছিল।
মাংসপেশীতে ব্যথা:
ভিটামিন “ডি” এর অভাবে মাংসপেশীতে ব্যথা সৃষ্টি হয়। কিছু প্রমাণ আছে যে, ভিটামিন “ডি” এর ঘাটতি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পেশী ব্যথার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। ভিটামিন “ডি” রিসেপ্টর (receptor) স্নায়ু কোষে উপস্থিত থাকে যাকে বলা হয় নোকিসেপটরস (nociceptors)।
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ মাত্রার ভিটামিন “ডি” পরিপূরক গ্রহণ ভিটামিন “ডি” ঘাটতিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ব্যথা হ্রাস করতে পারে। ভিটামিন “ডি” শরীরের মাংসপেশিকে দৃঢ়তা প্রদান করে, যার ফলে ব্যথা যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
অবসাদ:
ভিটামিন “ডি” এর অভাবে মনে অবসাদের সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অবসাদগ্রস্থ ব্যক্তির ভিটামিন “ডি” এর অভাব পূরণের পরে অনেকটাই সুস্থ্য বোধ করে।