ভাষা শহিদদের কথা।
ভাষা শহিদদের কথা
—————————
ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ। ১৯৫২ সাল। ফাল্গুন মাস। কোনো কোনো গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ছে। কিছু কিছু গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। পলাশ ফুল ফুটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। চারদিকে থমথমে ভাব। পুলিশ মিছিল করতে নিষেধ করেছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ছাত্রদের। পাকিস্তান সরকার চায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে। বাঙালির মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু ছাত্র-জনতা তা মানবে না। তারা মিছিল করবে। টগবগে তরুণরা বেপরোয়া। প্রয়োজনে তারা জীবন দেবে। মায়ের ভাষার দাবি ছাড়বে না।
মিছিল বের হলো। পুলিশ গুলি করল। গুলিতে নিহত হলেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে। তাঁরা আমাদের ভাষাশহিদ।
আবুল বরকত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ওই দিন পড়ার টেবিল ছেড়ে ভাষার দাবিতে তিনি ছুটে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন মিছিলে। একসময় মিছিলে গুলি হলো। গুলি এসে লাগলো তাঁর গায়ে। বন্ধুরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করলেন। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হলো না। রাতেই তিনি মারা গেলেন।
রফিকউদ্দিন আহমদ। বাড়ি মানিকগঞ্জে। কলেজের পড়া শেষ না করে এসেছিলেন ঢাকায়। ঢাকার বাদামতলীতে ছিল তাঁর বাবার ব্যবসায়। কিন্তু ওই দিন তাঁর মন ব্যবসায়ে আটকে থাকে নি। তিনিও ভাষার দাবিতে ছুটে এসেছিলেন মিছিলে। পুলিশের গুলি এসে তাঁর মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মারা যান।
আবদুল জব্বার। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে তাঁর বাড়ি। গরিব পরিবারের সন্তান তিনি। লেখাপড়ায় বেশি এগোতে পারেন নি। একসময় চাকরি নিয়ে চলে যান বিদেশে। অনেক দিন পর দেশে ফেরেন। ঢাকা এসেছিলেন অসুস্থ্য শাশুড়ির চিকিৎসার জন্য। ভাষার জন্য তাঁরও প্রাণ কেঁদেছিল। বাংলা ভাষার জন্য তিনিও মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। পুলিশের গুলি এসে লেগেছিল তাঁর শরীরে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁকে বাঁচাতে পারেন নি। রাতেই তিনি মারা গেলেন।
আবদুস সালাম আরেক ভাষাশহিদের নাম। ফেনী জেলায় তাঁর বাড়ি। তিনি ঢাকায় চাকরি করতেন। ভাষার টানে তিনিও গেলেন মিছিলে। একসময় পুলিশের গুলি এসে লাগলো তাঁর শরীরে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা চলল। কিন্তু তাঁকেও বাঁচানো গেল না।
এই ভাষাশহিদেরা মাতৃভাষাকে ভালোবাসতেন। তাঁরা জীবন দিয়ে বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষা করেছেন। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হয়েছে। তাঁদের ত্যাগের কথা ভুলে যাওয়ার নয়। তাঁরা অমর। আমরা কখনো তাঁদের ভুলবো না।