বেগুনী মুখরোচক, স্বাদবর্ধক ও সকলের পছন্দের পুষ্টিকর একটি খাবার।

ভোজনরসিক বাঙালির সারাবছর জুড়ে খাবারের থালাতে বেগুনের বিভিন্ন মজাদার পদ দেখা যায়। রমজান মাসের ইফতারিতে তেমনি মজাদার একটি পদ হলো বেগুনী।

বেগুনী বাংলা উচ্চারণ:বেগুনি। একটি জনপ্রিয় বাঙালি খাবার যার উংপত্তি বাংলাদেশে এবং এটি ভারতেও প্রচলিত। এটা বেগুনের ফালিকে বেসনে ডুবিয়ে তেলে ভেজে তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশে রমজান মাসে ইফতারির খাবার হিসেবে বেগুনী অত্যন্ত জনপ্রিয়। এসময় রাস্তার পাশে অস্থায়ী ভাবে যেসব খাবারের দোকান বসে তাতে পেঁয়াজু ও আলুর চপ, ছোলা ও অন্যান্য খাবারের সাথে বেগুনীও প্রচুর পরিমানে বিক্রি হয় ।

ইউরোপে অবারজিন ফ্রিটার্স নামে একই ধরনের একটি খাবার প্রচলিত আছে। বেগুনী সাধারনত নাস্তা হিসেবে পরিবেশিত হয়। বেগুনীর আর আরো একটি কদর রয়েছে আর সেটি হলো খিচুড়ির সাথে বেগুনী।

বেগুন Solanaceae পরিবারের সদস্য। এটি Brinjal, Eggplant এবং Aubergine নামে পরিচিত। সমগ্র বিশ্বে বেগুন খুবই সমাদৃত এবং এটি প্রায় সারাবছর জুড়ে পাওয়া যায়।

প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস, ডায়েটারি ফাইবার এবং অন্যান্য যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ হিসাবে পরিচিত, বেগুন-এর প্রচুর স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের সুবিধা রয়েছে। এর সাথে বেসন এবং তেলেরও রয়েছে অনেক গুনাগুন। শুধু আপনাকে পরিণামতো খেতে হবে।

বেসন এমনই একটি পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যা শুধু মুখরোচক খাবার তৈরিতেই সাহায্য করে না, পাশাপাশি দেহে পুষ্টিও যোগায়। এমনকি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানও করে। কোলেস্টেরল কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হার্টের অবস্থার উন্নতি, ওজন কমানো, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হাড় মজবুতসহ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। এছাড়া তেল শরীরে তাপ ও শক্তি যোগায়।

বেগুন কি একটি সবজি না ফল?

বেগুন একটি ফল। সবজির মতো ব্যবহার হলেও এটি একটি ফল। টমেটো যেমন আমরা সবজির মতো ব্যবহার করি কিন্তু টমেটো হলো একটি ফল। তেমনি বেগুনও হলো একটি ফল।

নীচে উল্লেখ করা হল বেগুনীর উপকারীতা:

হার্টের জন্য ভাল:

বেগুনে ভিটামিন “বি” 6, ভিটামিন “সি”, পটাসিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে এবং এটি সামগ্রিক হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। বেগুন ভাল কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বৃদ্ধি এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) হ্রাস করে আমাদের দেহের কোলেস্টেরল স্তর বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে:

বেগুনের পলিফেনল রয়েছে যা ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব প্রদর্শন করে। বেগুনে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিনস এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসাবে কাজ করে এবং এইভাবে ক্যান্সারের প্রভাবগুলিতে লড়াই করতে সহায়তা করে।

হজমে সহায়তা করে:

বেগুনে কোলেস্টেরল বা ফ্যাট খুব কম থাকে। এটি ডায়েটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ। এই ফাইবার আমাদের মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থের কার্যকর নির্মূলকরণে সহায়তা করে। বেগুনে ফাইবারের পরিমাণ ভাল থাকার কারণে হজম প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যকর এবং সুরক্ষিত থাকে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও দূর হয়।

ওজন কমাতে সহায়তা করে:

আপনি যদি ওজন হ্রাস করতে আগ্রহী হন তবে আপনি আপনার ডায়েটে বেগুন অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। বেগুনের কোনও কোলেস্টেরল থাকে না, চর্বি থাকে না এবং ক্যালরি খুব কম থাকে। ফাইবার সমৃদ্ধ এই সবজিটির ব্যবহার ঘেরলিন নামক হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়। আমাদের আবার ক্ষুধার্ত বোধ করতে এই হরমোন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফাইবার আমাদের পেট ভরাট রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।

হাড়ের জন্য ভাল:

ভিটামিন “কে” এবং কপার সমৃদ্ধ বেগুন অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে, হাড়ের শক্তি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এই উদ্ভিদে উপস্থিত কোলাজেন সংযোগকারী টিস্যু হাড় গঠনে সহায়তা করে।

রক্তাল্পতা নিরাময়ে সহায়তা করে:

রক্তাল্পতাজনিত লোকেরা মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং হতাশা ইত্যাদিতে ভোগেন। বেগুন আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উত্স, রক্তাল্পতা এবং এর ফলাফলের লক্ষণগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। বেগুনে কপার রয়েছে যা আয়রনের সাথে একসাথে লাল রক্ত ​​কোষের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে:

বেগুন ফাইবার এবং কম দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেটের একটি খুব সমৃদ্ধ উৎস। এইভাবে তারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং গ্লুকোজ শোষণ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী।এটি টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সেরা বিকল্প খাবার হিসাবে গণ্য করা হয়।

ক্রোনিক স্ট্রোক দূর করে:

বেগুন কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা হ্রাস করে। বেগুনে ভাল পরিমাণে ভিটামিন “সি” রয়েছে যা এটিকে কার্যকর অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়।

কিছু জায়গায় বেগুনকে প্রায়ই ‘সবজির রাজা’ বলে উল্লেখ করা হয় এবং এটি বিনা কারণেই হয় না। এটির স্বাস্থ্য সুবিধার বিস্তৃত তালিকা রয়েছে। এটি আপনাকে শক্তিশালী হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।

বেগুনি তৈরির উপকরণ:

বাংলাদেশের ইফতারিতে পরিবেশিত বিভিন্ন খাবারের সংগে বেগুনী যেভাবে তৈরি হয়:

বেগুন, ছোলার ডালের বেসন, ময়দা,ধনে গুঁড়া, আদা বাটা, রসুন বাটা, বেকিং পাউডার, কর্ণ ফ্লাওয়ার, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, লবণ, পানি ও তেল।

প্রস্তুত প্রণালী:

প্রথমে বেসনে সব উপকরণ শুধু বেগুন ও তেল বাদে এক সাথে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। বেগুন লম্বা লম্বা করে কেটে ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এতে বেগুন কালো হয় না। এখন লম্বা করে কাটা বেগুন বেসনের গোলায় ডুবিয়ে গরম ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে টিসু্তে তুলে কিছুক্ষন রেখে দিন।

সতর্কতা:

বাড়িতে বেগুনি তৈরি করে খান। এটি দোকানের বা বাইরের খোলা জায়গার থেকে স্বাস্থ্যকর।

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। যাদের বয়স বেশি, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ তাদের না খাওয়াই ভালো। যতটা সম্ভব তেলটা নিংড়ে খাবেন।

ফুড কালার দিয়ে বেগুনি ভাঁজলে কোনো ক্ষতি নেই। খেয়াল করবেন কেমিকাল বা আর্টিফিশিয়াল রং ব্যবহার না করে।