বিলুপ্তির পথে কাকজাম বা আমঝুম বা ভূতিজাম।উপকারীতা জেনে নিন।

ছোট বেলায় অনেক খেয়েছি। ফলটি দেখলে অনেকেই এই কথা বলে থাকে। আসলে আগে বসতবাড়ি, বাগানে, রাস্তার ধারে আমঝুম বা কাকজামের গাছ অনেক দেখা যেত।

বিরল মিষ্টি রংধনু ফলের বীজ (লেপিস্যান্থেস রুবিগিনোসা)  মেরতাজাম লেপিসানথেস রুবিগিনোসা একটি চিরসবুজ ঝোপঝাড় বা ছোট গাছ, প্রায়শই কেবল ২ – ৩ মিটার লম্বা হয়। তবে কখনও কখনও মালয়েশিয়ায় ১৬ মিটার পর্যন্ত এবং এটি ভারতে আরও বড় গাছ রয়েছে বলে জানা যায়।

প্রতি বছরের মতোই এবারেও বাগানে ফলেছে বাংলার হারিয়ে যেতে বসা একটি ফল, যাকে পুর্ব-মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়ার গ্ৰামাঞ্চলে বলে রাখাল ফল। রাখালজাম, কাকফল, কাকজাম ইত্যাদি নামেও পরিচিত কোনো কোনো জায়গায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম– Lepisanthes rubiginosa. Family Sapindaceae.

ইংরেজি: Rusty sapindus। বাঙালি: কাকজাম(Kakjam), মালয় ভাষায়: বুহ তেরাজং, কালাজু, কেলাত লেউ, কি লেটু, কুলায়ো, মেরতাজাম, তেরাজং।

অঞ্চলভেদে এটির বিভিন্ন নাম থাকতেই পারে এবং সেটা জানার চেষ্টা একান্ত প্রয়োজনীয়। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বাংলায় যে নাম কটি পাওয়া গেছে, সেগুলো এরকম- ছাগলনাদি, ছাগলবড়ই, ছেরাবেরা, টাট‌ই, কাউয়াঠুটি, আমঝুম, খেজুরজাম, ভূতিজাম ইত্যাদি।

পাতার গড়ন আম পাতার মতো তবে অনেক নরম। এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাস পর্যন্ত রাখাল ফল পাওয়া যায়। গুচ্ছ গুচ্ছ থোকা ফল। কাঁচায় সবুজ , আধপাকা অবস্থায় গোলাপি-লাল, পাকলে উজ্জ্বল কালো।

দেখতে জামের মতো, কিন্তু আকারে অনেক ছোট, অনেকটা ছাগল নাদির মতো। আধপাকা অস্থায় ফল ভীষণ কষাটে, পাকলে কষাটে ভাবটা অনেক কেটে যায় ও বেশ মিষ্টি হয়। রাখাল ফল রুচিকর, ক্ষিধে বাড়ায়, মলসঞ্চারক, জিভ ও মুখের ঘা এবং রক্তহীণতা দূর করে।

উদ্ভিদটি খাদ্য, ওষুধ এবং কাঠের স্থানীয় উৎস হিসাবে বন থেকে কাটা হয়। এটি মাঝে মাঝে এর ভোজ্য ফলের জন্য চাষ করা হয়।

ব্যাপ্তি:

পূর্ব এশিয়া – উত্তর ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া

আবাসস্থল:

পাতলা বনগুলিতে; অল্প বয়স্ক অরণ্য, ঝোপঝাড়, বন প্রান্ত বরাবর, রাস্তার ধারে, নদীর তীরে, ম্যানগ্রোভ জলাভূমির অভ্যন্তরীণ দিকটি ৩০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায়, মাঝে মাঝে ১২০০ মিটার অবধি।

ফল:

পাকা ফল খেতে মিষ্টি। মুখে রুচি আনে।

কাঁচা ফল একটি সাবসিড গন্ধ, তবে কিছুটা তাৎপর্যপূর্ণ।  ডিম্বাকৃতি ফলটি প্রায় ১৫ মিমি লম্বা এবং আঙুরের মতো থোকায় থোকায় হয়।

তরুণ পাতা শাক হিসাবে রান্না করা হয়।

ওষধি গুণাগুণ:

উদ্ভিদটি ঔষধিরূপে ব্যবহৃত হয়। পাতাগুলি এবং শিকড়গুলির একটি ডিককোশন এবং কখনও কখনও ফল এবং বীজগুলি জ্বরের বিরুদ্ধে চিকিৎসা  হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

সিদ্ধ রুট কাশির বিরুদ্ধে চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

মালয়েশিয়ায়, লেপিস্যান্থেসের রুবিগিনোসার শিকড় দিয়ে বানানো ডিককশন  জ্বর প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয় এবং ত্বকের রোগের চিকিৎসার জন্য পাতাগুলি ব্যবহৃত হয়। ইন্দোনেশিয়ায়, তরুণ কান্ডগুলি ঘুম প্ররোচিত করার জন্য খাওয়া হয়।

গাছটিকে সযত্নে সংরক্ষিত করা প্রয়োজন, কারণ আমঝুম গাছ এখন আর প্রায় চোখেই পড়ে না।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাবেন না। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর যান তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

 

https://www.seeds-gallery.shop/en/home/rare-rusty-sapindus-seeds-lepisanthes-rubiginosa.html