দাঁত ও মাড়ি সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে যেসব খাবার।
দাঁত ও মাড়ি সুস্থ্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমরা যদি ঠিক মতো দাঁত ও মাড়ির যত্ন না করতে পারি তাহলে বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।
দাঁত ও মাড়ির রোগ যেসব ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়, সেটি শুধু মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
নিয়মিত দুইবার ব্রাশ করা, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, কার্বনেটেড পানীয় থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি আমাদের কিছু খাবারের দিকে নজর দিতে হবে।
কিছু কিছু খাবার আছে যেসব খাবার দাঁত ও মাড়ি সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। নিচে এমন কিছু খাবার দেওয়া হলো –
গাজর:
ভিটামিন “সি” থাকায় গাজর দাঁত ও মাড়ির সুস্থ্যতা বজায় রাখে। মাড়ি ফোলা ও দাঁত থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা সমাধানে গাজর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও মুখের মধ্যে প্লাক জমতে দেয় না ফলে দাঁত আর মাড়ি ঠিক থাকে।
আপেল:
আপেল মিষ্টি ফল হলেও দাঁতের জন্য খুব ভালো। সাধারণত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়, আপেলের রস ৮০% পর্যন্ত দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।
পাশাপাশি আপনার দাঁতকে করে তুলবে সাদা ও উজ্জ্বল।
পেয়ারা পাতা:
দাঁতে ব্যথা হলে কিছু কঁচি পেয়ারা পাতা ছিড়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে চাবাতে থাকুন দেখবেন ব্যথা কমে গেছে। পেয়ারা পাতা প্রদাহ বিরোধী এবং মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
পেয়ারা পাতার চাতে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যর কারণে দাঁত ব্যথা, মাড়ি ফোলা এবং ওরাল আলসার এর জন্য দুর্দান্ত ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে কাজ করে।
এই সমস্যা নিরাময়ের জন্য পাতা পিষে মাড়ি এবং দাঁতে লাগাতে পারেন।
আখ:
আখ চিবানো ছোট বাচ্চাদের কাছে খুবই মজার একটি বিষয়। যদি দাঁত ক্ষয় রোধের পাশাপাশি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আখ চিবিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া প্রতিকার।
আখে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মত খনিজ উপাদান থাকে যা দাঁতের এনামেল গঠনে সাহায্য করে।
শসা:
দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসায় শসা দারুণ কাজ করে। আস্ত শসা চিবিয়ে খেলে দাঁতে প্লেক জমতে পারে না ও মাড়ি সুস্থ্য থাকে।
শসার সাইটোকেমিক্যাল এর মধ্যে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে আপনার মুখের জীবাণু ধ্বংস করবে। সজীব হয়ে উঠবে আপনার নিঃশ্বাস।
কিসমিস:
১/২ কাপ কিসমিসে প্রায় ৪৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিশালী দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
২০০৯-এর একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে যে, কিসমিসে ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা স্বাস্থ্যকর দাঁত এবং মাড়ির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যষ্টিমধু:
যষ্টিমধু হচ্ছে একটি মাল্টিপারপোজ হার্ব, যা আপনার দাঁত ও মাড়িকেও সুস্থ রাখতে পারে।
জার্নাল অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যষ্টিমধুতে দুটি কার্যকরী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ ঠেকাতে পারে।
হরিতকী:
হরিতকী পেস্ট বা গুড়ি এবং দই দিয়ে তৈরি পেস্ট মুখের আলসার এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করতে পারেন, দাঁতে ব্যথা বা মাড়ির সমস্যা থাকলে।
দাঁত ঝকঝকে করতে দাঁত বা মাড়িতে পেস্টটি লাগাতে পারেন। এটি দিনে দুবার দাঁতে লাগান। এটি দাঁত ঝকঝকে বা পরিষ্কার করে দাঁতকে শক্তিশালী করবে।
আমড়া:
ভিটামিন “সি” ও ক্যালসিয়াম থাকার কারণে দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখে। পাশাপাশি স্কাভি, দাঁত ও মাড়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা:
দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগগুলি খুব সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা দূর করার সর্বোত্তম উপায় হল দাঁতের প্লেগ বা ব্যাকটিরিয়া তৈরিতে বাধা দেওয়া।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা দাঁতের সমস্যা দূর করতে পারে।
ডালিম:
ডালিমে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া এবং এন্টি-ফাংগাল এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাঁতের প্লেক তৈরি করতে বাধা দেয়।
দাঁতের মাঝে বাদামি ও হলুদ রঙের যে ব্যাকটেরিয়া জন্মে তাকে দাঁতের প্লেক বলে। এছাড়াও মুখের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
পেয়ারা:
দাঁত ও মাড়ি সুস্থ্য রাখতে পেয়ারা চিবিয়ে খাওয়া খুবই কার্যকরী। এতে দাঁত পরিষ্কার থাকে দাঁতে প্লেক জমে না।
পেয়ারার শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যর কারণে দাঁত ব্যথা, মাড়ি ফোলা এবং ওরাল আলসার এর জন্য দুর্দান্ত ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে কাজ করে।
যেহেতু পেয়ারা সারা বছর জুড়ে পাওয়া যায় তাই মাঝে মধ্যে আস্ত পেয়ারা চিবিয়ে খাবেন।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার:
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, দই এবং চীজ। এতে চিনির পরিমাণ কম এবং ক্যালসিয়াম বেশি।
এছাড়া দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে কেসিন রয়েছে যা একটি প্রোটিন যা দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
পনিরের মতো দুধও মুখে অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করে, যা দাঁতে ক্ষয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে সহায়তা করে।
দইতে ক্যালসিয়াম এবং প্রোবায়োটিক রয়েছে যা গহ্বর, মাড়ির রোগ এবং এমনকি মুখের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করে।
পানি:
খাবার খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। খাবার কণা দাঁতের কোণায় আটকে থাকে ও ব্যাক্টেরিয়ায় সৃষ্টি করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে এসব আটকে থাকা খাবারের কণা দূর হয়ে যায় ও সংক্রমণের সৃষ্টি হয় না। পানি কিন্তু স্যালিভা বা লালা তৈরি করার প্রাথমিক উপাদান।
এছাড়া পানি মাড়িকে আর্দ্র রাখে। এতে মাড়ি ভালো থাকে।