ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে কি কি করণীয়?

ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল রোগ যা বেশিরভাগই বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বর একটি বেদনাদায়ক রোগ যা এডিস প্রজাতির মশা দ্বারা বিস্তৃত হয়। পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর ২০০০ সালে প্রথম বাংলাদেশে দেখা দেয় এবং পরিস্থিতি বেশ বিপদজনক ছিল। ডেঙ্গু জ্বর সারা বিশ্বে বিস্তৃত – বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ণ দ্বারা ডেঙ্গু ভাইরাস প্রভাবিত হয়।

ডেঙ্গুজ্বরের জন্য দায়ী হলো এডিস মশা। এই জেন্টেলম্যান সাধারণতঃ সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে তৎপর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেশী এবং এ বছর দেশের অন্যান্য জেলাতেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত দুই থেকে তিন সপ্তাহে ১০-১২ জন মারা গেছেন যাদের মধ্যে চিকিৎসকও রয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। ভয় পাবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিন। গত কয়েকদিনে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশ বেড়ে গিয়েছে। ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গু জ্বরে।

এডিস মশা ভদ্র মশা হিসাবে পরিচিত। এরা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না।

সাধারণতঃ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। কারণ এই সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল এগিয়ে এসেছে।

এবার জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বর শুরু হয়ে গেছে।ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট বা রক্ত কণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় :

  • বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এসময় অধিক সতর্ক থাকুন।
  • ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। পুরানো টায়ার, টিউব, প্লাস্টিকের যেকোনো পাত্র, মটকা, ব্যাটারির সেল, চিপসের প্যাকেট, ডাবের খোলে পানি জমতে দিবেন না। অফিস, ঘরের আশেপাশে এবং ঘরের ভিতর ফুলদানি, টব, ফ্রিজের তলায় পরিষ্কার পানি জমতে দিবেন না।
  • যেকোনো পাত্রে জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিন। অনেক সময় ঘরের বাথরুমে পানি জমে থাকে। বাথরুমের জমানো পানি ৩-৫ দিনের বেশি যেন না থাকে। নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি জমেও ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। তাই এদিকেও খেয়াল রাখুন।
  • অনেকেরই বাড়ির ছাদে টবসহ অনেক অব্যাবহৃত পাত্র পড়ে থাকে। এগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে। বাগানের টব, মাটির পাত্র, ড্রাম, কৌটা এগুলোতেও যেন পানি জমতে না পারে।
  • এডিস মশা মূলত দিনের বেলা কামড়ায়। তাই এই সময় শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। এডিস মশা সাধারণতঃ সূর্যোদয়ের আধা ঘন্টার মধ্যে ও সূর্যাস্তের আধা ঘন্টা আগে কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকি। তবে রাতে উজ্জ্বল আলোতেও এডিস মশা কামড়াতে পারে। প্রয়োজনে মশার কয়েল, স্প্রে, লোশন, ক্রিম, ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে বাচ্চাদের লম্বা পোশাক পরিধান করান।
  • দিনে ঘুমানোর ক্ষেত্রে মশারী ব্যবহার করুন।
  • বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাঁড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখুন।
  • পাখি, পোষা প্রাণী এবং গবাদি পশুর ব্যবহৃত পাত্রের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করুন।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ তীব্র জ্বর। তাপমাত্রা উঠানামা করতে পারে। এই দেখছেন জ্বর। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাচ্ছে। আবার জ্বর আসতে পারে। এর সাথে —

  • মাথা ব্যাথা
  • মাংসপেশিতে ব্যাথা,
  • শরীরে লালচে দাগ
  • তবে এবছর ডেঙ্গুরোগের লক্ষণ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে বুঝতে পারছেন না ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি করে ফেলছেন। উপরের লক্ষণগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

symptom dengue

সাবধানতা বা জ্বর হলে করণীয়

  • জ্বরে প্যারাসিটামল বাদে অন্য ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
  • রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ান। জ্বরে পেঁপে, আনারস, চিকেন স্যুপ ভালো কাজ দেয়। ডাবের পানি, লেবুর সরবত, ফলের জুস, খাবার স্যালাইন যেটিই খাওয়ান অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াবেন।
  • জ্বর সেরে গেলেও সতর্ক থাকুন।
  • জ্বর হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ও ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করান।

মশা তাড়ানোর ঘরোয়া পদ্ধতি :

  • প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়াতে কর্পূর ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। দরজা জানালা বন্ধ করে কর্পূর জ্বালিয়ে রুমের ভিতর কিছুক্ষন রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর দেখবেন মশা একেবারেই চলে গেছে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এটি ব্যবহার করুন।
  • জানালার পাশে তুলসীগাছ লাগানো যেতে পারে। এই গাছে এমন উপাদান রয়েছে যা মশা তাড়াতে ভূমিকা রাখে।

আসুন আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজ আঙ্গিনা, ঘরের চারপাশ, রাস্তাঘাট সর্বত্র পরিষ্কার রাখি এবং সবাই মিলে সুস্থ্য থাকি।

 

মেয়র, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর একে অপরকে দোষ না দিয়ে সরকারের সবাই আমরা একসাথে কাজ করি। কারণ এটি একটি জাতীয় সমস্যা।