চুল পড়া কমাতে আমলকি অতুলনীয়। জেনে নিন চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার।

আপনি কি চুল পড়া বা রুক্ষ চুল নিয়ে চিন্তায় আছেন? তাহলে কৃত্তিম প্রোডাক্ট ছেড়ে প্রাকৃতিক কিছু চেষ্টা করুন যা আপনার চুলের জন্য খুবই উপকারী।

যদি আপনি এখনই সচেতন না হন, তাহলে আপনার চুল হয়ে যাবে রুক্ষ, সুখ্য প্রাণবন্ত হীন।

আমলকি, যা অমৃত নামেও পরিচিত, এটি চুলের জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর একটি ঔষধ। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে এবং চুল ঘন এবং শক্তিশালী করে তোলে।

আমলকি চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমলকি শুধু মাত্র চুলের গোড়া মজবুত করে না, চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

হাজার হাজার বছর ধরে যে সকল উপকরন রূপচর্চায় বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে তার মধ্যে আমলকি অন্যতম।

জেনে নিই তবে, চুলের যত্নে আমলকির নানান ব্যবহার সম্পর্কে-

amla

চুল পড়া বন্ধ করে:

চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। চুল পড়া রোধ করতে সর্বোত্তম কার্যকরী উপাদান হল আমলকি। চুলের জন্য আমলকি ‘সুপারফুড’।

এটি ভিটামিন, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফাইটোনিট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ যা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।

চুলের গ্রন্থিকোষগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহের মাধ্যমে, আমলকি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করে দেয়।

এক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ আমলকির রস ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি চুলে ভালোভাবে লাগান এবং পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন।

ম্যাসাজ করার পর ১৫ মিনিট রেখে দিন। ১৫ মিনিট পরে হালকা শ্যাম্পু করে ফেলুন।

চুলের বৃদ্ধিতে আমলকি:

আমলাতে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের থাকে যা চুলকে নরম, চকচকে এবং হালকা করে তোলে। আমলকির উচ্চ আয়রন এবং ক্যারোটিন সামগ্রীর কারণে চুলের বৃদ্ধি করে।

আমলকিতে থাকা ভিটামিন “সি” কোলাজেন তৈরি করে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোলাজেন চুলের মৃত কোষগুলিকে নতুন চুলের কোষের সাথে প্রতিস্থাপন করে।

এক্ষেত্রে একটি পাত্রে দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল নিয়ে হালকা গরম করে নিন। এরপর পাত্রটি নামিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ আমলকির রস মেশান।

আমলকির রস মেশানো হয়ে গেলে মিশ্রণটি ঠান্ডা করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এবং ১ ঘণ্টা পর্যন্ত মাথায় রেখে দিন। পরে হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা ধুয়ে ফেলুন।

amla-amla

চুল কালো করতে:

অসময়ে চুল পাকা কমাতে আমলকি বেশ কার্যকরি। আমলকি একদিকে যেমন চুল ঘন কালো রাখে, তেমনি শুকনো চুলে উজ্জ্বলতাও ফিরিয়ে আনতে পারে।

কিছু আমলকি কেটে পানিতে দিয়ে ৩০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা করে পানি ছেঁকে নিয়ে আমলকির টুকরোগুলো ফেলে দিন।

এবার এই মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হয়ে উঠবে ঘন কালো।

খুশকি দূর করতে:

খুশকি সাধারণত শুষ্কতার ফলস্বরূপ। আমলকি ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ রস যা, শুষ্কতা নিরাময় করে এবং খুশকি দূর করে।

এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি খুশকি হওয়া বন্ধে খুব কার্যকর। সেক্ষেত্রে, আমলা পাউডার বা আমলকির রস এর সাথে ৮-১০ তুলসী পাতা পিষে নিন।

এরপর হাতের সাহায্যে মাথার ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন।

amla amla

কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে আমলকি:

আমলকির রস চুলের গোড়ায় কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

চুলের গোড়ায় আমলকির রস দিয়ে ৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিটে অপেক্ষা করে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

রুক্ষ শুষ্ক চুলের পুষ্টি জোগাতে:

আমলকি রুক্ষ শুষ্ক চুলের পুষ্টি জোগাতে বা চুলের গ্রোথে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। প্রথমে আমলকির রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট রেখে দিন।

৩০-৩৫ মিনিট পরে অল্প শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এভাবে ব্যবহার করতে পারেন।

চুলকে শক্তিশালী করে:

আমলকির রস ত্বক এবং চুল উভয়েরই উপকারী টনিক হিসাবে কাজ করে। এটি চুলের ফলিকেলগুলি শক্তিশালী করে যার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি ও চুল মজবুত হয়।

এছাড়াও চুলের গোড়া শক্তিশালী করে, চুলের রঙ বজায় রাখে। এক্ষেত্রে চুলের গোড়ায় আমলকির রস প্রয়োগ করুন।

amla_amla

চুল মসৃন ও উজ্জ্বল করতে:

আমলকি চুলের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে। আমলকির গুঁড়ো কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিয়ে তারপর সেই মিশ্রণটি পুরো চুলে ম্যাসেজ করে আধা থেকে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে।

তারপর ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে দ্রুত চুলের বৃদ্ধি হবে, আর্দ্রতা বজায় থাকবে, চুল হবে মসৃন এবং উজ্জ্বল। এছাড়া আপনি যদি নিয়মিত আমলকি খান এতে আপনার ত্বক ও চুলের উপকার হবে।

আমলকির যখন সিজন না তখন আপনি চাইলে শুকিয়ে রাখা আমলকি রাতে ভিজিয়ে সকালে রস খেতে পারেন এতেও অনেক উপকারী পাবেন।

প্রাকৃতিক কন্ডিশনার:

প্রাকৃতিক চুলের কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে আমলকি। আমলকি চুলকে পুষ্ট করতে, শক্তিশালী করতে এবং কন্ডিশন করতে পারে।

একটি আমলকি চুলকে ৮১.২% পর্যন্ত আর্দ্র পকরতে পারে।

রেফারেন্স: