ঘি খেলে ওজন কমে, হার্ট ভালো থাকে, জেনে নিন ঘি এর উপকারীতা।

প্রাচীন খুব প্রচলিত একটা প্রবাদ রয়েছে। ঋণ করে হলেও ঘি খাও। ঘি-এর কদর অতীতে যেমন ছিল এখনো তেমনটাই বর্তমান। বর্তমানে বলা যাই, ক্রেডিট কার্ড ভেঙ্গে বা বিকাশের টাকা তুলে হলেও ঘি খাও।

আসলে ঘি এর রয়েছে বিস্ময়কর অনেক উপকারিতা। হালকা হলুদ বা হলুদাভ বাদামি, কখনো দানা যুক্ত ঘি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি নাম শুনলেই যেন মনটা ভরে যায়। সকাল বা দুপুরবেলা গরম ভাতে একটু ঘি হলেই যেন পুরো ভাতটা নিমিষেই খাওয়া হয়ে যায়।

প্রাচীনকাল থেকেই ঘি কে অত্যন্ত পবিত্র সামগ্রী হিসাবে গন্য করা হয়। আয়ুর্বেদ এটিকে অত্যন্ত মূল্যবান এবং আয়ু বৃদ্ধির খাবার হিসাবে উল্লেখ করেছেন। “tongue of the god” ” navel of immortality” অনেক কিছুতে বিশেষিত করা হয়েছে ঘি-কে।

কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ভুল ধারণার কারণে এবং যারা ডায়েটিং করার নামে সারাদিনে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তারাতো ঘি কে কোনোভাবেই খাদ্যতালিকায় রাখতে চান না ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে। কিন্তু এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

ঘিয়ের বহু উপকারিতা তো রয়েছেই, ঘি কিন্তু ওজন কমাতেও সাহায্য করে। জেনে নিন কী কী কাজ করে ঘি।

ঘি তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেশি হলেও তা কিন্তু হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। কারণ ঘি তে উপস্থিত ফ্যাট রক্তে উপকারী HDL কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বাড়ায় এবং ক্ষতিকর LDL এর পরিমাণ কমায়। অর্থাৎ ঘি স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরোল বজায় রাখতে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।

ভাতের সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খেলে শরীরে দীর্ঘক্ষণ শক্তি থাকে ও শরীর গরম থাকে। তাই বলা হয়, শীতকালের আদর্শ খাবার হলো ঘি। আপনার পেট ভরা থাকবে কিন্তু ওজন বাড়বে না।

অনেকেই ঘি খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকেই অপছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না ঘিয়ের উপকারিতা সম্পর্কে। ঘি তখনই শরীরের ক্ষতি করে, যখন তা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়। তাই ঘিয়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রণ মেনে ঘি খেতে হবে।

কিভাবে তৈরি হয় ঘি?

তাপ দিয়ে শোধন করা অর্থাৎ পরিশুদ্ধ মাখন ঘি। তাপে জল এবং মিল্ক সলিড সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত হয়ে মসৃণ, ইউনিক সুঘ্রাণ, তেলের মতো যে অবশিষ্ট পাওয়া যাই সেটাই হলো ঘি।

আয়ুর্বেদ প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে ঘি এর বিভিন্ন উপকারী দিক নিয়ে আলোচনা করে আসছে। ঘি তেল এবং মাখনের পরিবর্তে ব্যবহার করা যাই এবং টোস্ট, কেক, বিস্কুটে ব্যবহার করলে বা মাছ, মাংস, সবজীর সাথে রান্না করলে স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টিগুণ বেড়ে যাই।

কি কি পুষ্টিগুণ আছে?

ঘি- তে ভিটামিন “A”,”D”,”E”,”K” বিদ্যমান। ভিটামিন “A ” (হাড়,দাঁত,immune health), ভিটামিন “D “(ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য), ভিটামিন “E “(চোখ ও ব্রেইন), ভিটামিন “K “(blood clot সারাতে) সাহায্য করে থাকে।

জেনে নিন ঘি এর উপকারীতা

  • খালিপেটে ঘি খেতে পারেন।অল্পবয়সী তরুণ এবং যুবকদের খালিপেটে পরিমাণমতো ঘি খাওয়া ভালো। নিয়মিত ঘি খেলে শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  • ত্বককে সুন্দর করার জন্য ঘি খেতে হবে। ঘি খেলে ত্বকের নিচে কোলাজেন উৎপাদন বেড়ে যায়। তাই বলা হয়, ত্বকের উজ্বলতা বৃদ্ধি করে ঘি।
  • আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ঘি-তে। নিয়মিত ঘি খেলে শরীরে ওমেগা-৩ এর মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরোল-এর মাত্রা কামে যায়।
  • এছাড়া ঘি -তে fatty acid- বিদ্যমান। এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের মেটাবলিজম (metabolism) ফাংশনের উপর যথার্থ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদন, শারীরিক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উপাদান, টক্সিক উপাদান বের করে দেওয়া ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

    এছাড়া এই ফ্যাটি এসিড cognitive ফাংশনের উপর অর্থাৎ ব্রেন সেল-এর কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।

  • Conjugated linoleic acid (CLA) – ঘিতে পাওয়া যায়। এই অ্যাসিড শরীরের ওজন কমিয়ে থাকে। এছাড়া ব্লাড প্রেসার ও ক্যান্সার সেল-এর বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।
  • আয়ুর্বেদিক জগতে ত্বকের প্রদাহ কমাতে এটিকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসাবে (burn,swelling) কমাতে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যকার Bytaric Acid হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • Medium chain fatty acid- থাকায় শরীরে জমে থাকা ফ্যাট সেলকে গলাতে সাহায্য করে। Joint-এর সচলতা বাড়িয়ে দেয় এবং হাড়ের সমস্যা কমে যায়।
  • সর্বোপরি, আমাদের নার্ভ-এরও উন্নতি করে থাকে। তাই দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত অতিরিক্ত নয় পরিমিত ঘি খাওয়া শুরু করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি হাসিখুশি জীবনযাপন করা যায়।
  • এমনকি ঘি একটি ল্যাকটোজ ফ্রি মিরাকল ফুড যা কিনা ফ্যাট সলেবল ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে সমৃদ্ধ। উপস্থিত উপকারী ফ্যাটি এসিড গুলি ত্বক কে নরম ও বলিরেখা মুক্ত করে। ঘি কিন্তু anti অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ তাই ইমিউনিটি রক্ষাতেও এর ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বলা হয় ঘি এর সাথে অশ্বগন্ধা বা ব্রাহ্মীশাক মিশিয়ে খেলে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

পরিশেষে বলা যায়, উপকারী চর্বি, ওজন কমে যাওয়া, কোলেস্টেরোল কমে যাওয়া, ভালো ঘুম হাসিখুশি জীবনের পূর্বশর্ত। তাই খাবারটি আমাদের খাদ্যতালিকায় রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।

Leave a Reply