কোন লক্ষণগুলি দেখে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে।

হয়তো আপনার মধ্যে ডায়াবেটিস আছে কিন্তু আপনি জানেন না। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে করতে একদিন আপনার ডায়াবেটিস বা রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিল। তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন আপনার ডায়াবেটিস আছে। অবাক হয়ে গেলেন, মনে করবেন কিছুই বুঝতে পারলাম না। কি করে হলো।

আসলে এই রোগটা এরকমই লক্ষণ বোঝা যায় খুব কম। কারণ ডায়াবেটিস শুরু হয় টাইপ-2 থেকে। টাইপ-2 ডায়াবেটিসের শুরু ধীরে ধীরে হয়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ বোঝা কস্টকর।

অনেক লোক বুঝতে পারে না যে তাদের টাইপ-2 ডায়াবেটিস রয়েছে। পরে এটি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে টাইপ-1 এ পরিণত হয়।

আমাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে ডায়াবেটিস কি, কতপ্রকার ও কি কি এবং যাদের লক্ষণ কি। চলুন আমরা প্রথমে জেনে নি ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস কি বা কাকে বলে?

যখন আমাদের রক্তের গ্লুকোজ অর্থাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় তখন সেটাকে আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি। রক্তের গ্লুকোজ আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। আমরা যেসব খাবার খাই সেসব খাবার থেকেই এই গ্লুকোজ পেয়ে থাকি।

ইনসুলিন একটি হরমোন যেটা অগ্ন্যাশয়(pancreas) থেকে উৎপন্ন হয়। এই ইনসুলিন খাবার থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজকে ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করে যা, আমাদের শরীরের কোষ দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

ডায়াবেটিস রোগের প্রকারভেদ

ডায়াবেটিস তিন ধরনের:

  • টাইপ-1 ডায়াবেটিস
  • টাইপ-2 ডায়াবেটিস
  • এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

টাইপ-1 ডায়াবেটিস

টাইপ-1 ডায়াবেটিস, যা একসময় কিশোর ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিস হিসাবে পরিচিত। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যাতে অগ্ন্যাশয় অল্প পরিমাণে ইনসুলিন বা ইনসুলিন তৈরি করে না।

টাইপ-1 ডায়াবেটিসের লক্ষণ

নিচের টাইপ-1 ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি দেওয়া হলো:

  • নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে লাগা
  • প্রচণ্ড ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
  • বার বার গলা বুক শুকিয়ে যাওয়া অর্থাৎ পানি পিপাসা পাওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

টাইপ-2 ডায়াবেটিস

যখন দেহ ইনসুলিনের প্রতিরোধী হয় বা অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে অক্ষম হয় তখন টাইপ-2 ডায়াবেটিস বিকাশ ঘটে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও প্রাথমিক অবস্থাতে সনাক্ত করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করলে এর জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।

টাইপ-2 ডায়াবেটিসের শুরু ধীরে ধীরে হয়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ বোঝা কস্টকর। এজন্য অনেক লোক বুঝতে পারে না যে তাদের টাইপ-2 ডায়াবেটিস রয়েছে।

টাইপ-2 ডায়াবেটিসের লক্ষণ

নিচে এর কয়েকটি লক্ষণ দেওয়া হলো –

  • ধীরে ধীরে ক্ষত নিরাময়
  • বার বার গলা বুক শুকিয়ে যাওয়া অর্থাৎ পানি পিপাসা পাওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে লাগা
  • দীর্ঘায়িত উচ্চ রক্তের শর্করার সাথে জড়িত এমন জটিলতা যেমন- পায়ের পাতাতে অসাড়তা
  • হার্টের সমস্যা
  • ডায়াবেটিস বহু বছর ধরে বিকাশ করতে পারে এবং সতর্কতার লক্ষণগুলি সূক্ষ্ম হতে পারে
  • প্রচণ্ড ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা

টাইপ-1 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কাদের মধ্যে বেশি?

তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে টাইপ-1 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কাদের মধ্যে বেশি?

আপনার বয়স ৪০ বা তার বেশি, ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে বা ওজন বেশি হলে আপনার টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, যাদের অস্বাভাবিক ট্রাইগ্লিসারাইড বা এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা রয়েছে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যারা ধূমপান করেন তাদের টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।

যেসব মহিলার গর্ভবতী হওয়ার আগে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকে তবে আপনার টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য সমস্যা

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর নিম্নলিখিত স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে:

  • হার্টের রোগ হতে পারে
  • কিডনীর রোগ
  • চোখের সমস্যা
  • দাঁতের রোগ
  • নার্ভ ক্ষতি
  • পায়ের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে

চিকিৎসা

ডায়াবেটিস বিভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা যায়। আপনার যদি টাইপ-1 ডায়াবেটিস হয় তবে আপনার সারা জীবন ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে। কারণ টাইপ-1 ডায়াবেটিস হলে আপনার শরীর ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না।

যদি টাইপ-2 ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনার জীবনযাত্রার পরিবর্তন, যেমন ডায়েট এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে টাইপ-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন বা ঔষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধ

ডায়াবেটিস সব ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা যায় না। টাইপ-1 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায় না। পরিমিত খাবার গ্রহণ করার মাধমে এবং নিজেকে সক্রিয় রাখার মধ্যেমে আপনি টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারেন। তবে জেনেটিক্স এবং অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলি আপনার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

রেফারেন্স: