কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ ও লক্ষণ।
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল বৃক্ক বা কিডনি। শরীরের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে কিডনির যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর কিডনি ভাল রাখতে আমাদের কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ। আমাদের শরীরের রক্ত পরিশোধনের অঙ্গ কিডনি।
শরীরে জমে থাকা অনেক রকম বর্জ্যও পরিশোধিত হয় কিডনির মাধ্যমে। কিডনির নানা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া। কিডনিতে পাথর বা রেনাল ক্যালকুলি স্ফটিক দিয়ে তৈরি শক্ত পাথর। কিডনি ছাড়া মূত্রাশয়, মূত্রনালীতে হতে পারে। ক্যালসিয়াম যখন অক্সালেটের সাথে মিলিত হয় তখন পাথর দেখা দেয়। এই পাথর ইউরিক অ্যাসিড থেকেও হতে পারে।
প্রস্রাবে দ্রবীভূত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ফসফেট, ইউরিক এসিড প্রভৃতি পদার্থ প্রস্রাবের সঙ্গে কিডনিতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। এভাবে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর পাথরের আকার ধারণ করে এবং দিন দিন বড় হতে থাকে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ
২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। নিচে কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ দেওয়া হলো –
- পানিশূন্যতা
- স্থূলত্ব
- উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, লবণ বা গ্লুকোজ গ্রহণ
- গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি
- অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যা ক্যালসিয়াম শোষণকে বাড়িয়ে তোলে
- ক্যালসিয়াম ভিত্তিক ঔষধ গ্রহণ করা
কিডনি রোগের ইনস্টিটিউট অনুসারে মহিলাদের চেয়ে বেশি পুরুষ কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লক্ষণ:
কিডনি, মূত্রথলি বা মূত্রনালিতে পাথর হলে সাধারণত
- কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে
- প্রস্রাব করলে ব্যথা হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তলপেট বা ঊরুর ভেতরের দিকেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে
- রক্তবর্ণের লাল প্রস্রাব, ব্যথা, জ্বালাপোড়া থাকতে পারে।
- ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে।
- ঘোলাটে এবং দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা অল্প একটু হয়েই আর না হওয়া।
- জ্বর এবং সর্দি
পাথর সৃষ্টি প্রতিরোধে
কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে আবার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হবে।
- দুধ, পনির ও উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।
- আমিষ জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ পরিমিত রাখুন।
- সোডিয়াম বাই কার্বোনেট অথবা সাইট্রেট গ্রহণ করতে হবে।
- রুবার্ব বা পীতমূলি, স্ট্রবেরি, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, স্পিনিজ, আলুবোখারা, অ্যাসপ্যারাগাস প্রভৃতি অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।
- সালফারসমৃদ্ধ খাবার, যেমন—ডিম, গোশত বা মাছ সীমিত করতে হবে।
- কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
- ক্যাফেইন এবং সোডা এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত কফি পানে কিডনির অবস্থা আরো খারাপ হবে।
- প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- বারবার ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে এর ঠিকমতো চিকিত্সা করান।
- কিডনিতে পাথর হওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত না হলেও অ্যালকোহল কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া অ্যালকোহল কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট করে।
- কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি সীমিত করার প্রয়োজন নেই। কারণ এগুলো পাথর তৈরি করে না।