কাচ্চি বিরিয়ানি, পাক্কি বিরিয়ানি ও তেহারি কি এবং এদের পার্থক্য? কাচ্চি শব্দটির মানে কি?
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এর আশপাশের দেশগুলোর সবথেকে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি হলো বিরিয়ানি বা কাচ্চি বিরিয়ানি। কাচ্চি বিরিয়ানি এর উৎপত্তি মধ্য এশিয়ায় হলেও এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে একটি জনপ্রিয় খাবার।
আসলে এই উপমহাদেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাবার হলো ভাত। ভাতের সাথে মাছের মতো মাংস খেতেও সকলে পছন্দ করে থাকে। আর মাংস ও ভাতের সাথে অন্যান্য কিছু সুগন্ধি দ্রব্য মিশিয়ে বিশেষ কায়দায় রান্না করা খাবারটি আস্তে আস্তে একসময় খাবারের হিরো হয়ে উঠেছে।
মাংস এবং চাল বা ভাতকে মেকআপ করিয়ে বা সাঁজিয়ে গুজিয়ে(ঘি/তেল, গরম মশলা, কেওড়া সেন্ট, আতর, গোলাপ জল, জাফরান, কিসমিস, বাদাম ) ইত্যাদি দিয়ে একেবারে বিশ্বসুন্দরী। স্বাদের রানী। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।
এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাধ্যমে প্রসারতা লাভ করে।
আমাদের দেশে বিরিয়ানি মানেই যেন কাচ্চি বিরিয়ানি। পুরান ঢাকার মানুষের কাছে এই কাচ্চির সমাদরটা যেন একটু বেশিই। পুরান ঢাকার কিছু দোকানের কাচ্চি যেমন ঐতিহ্যবাহী ঠিক তেমনি বিশ্ববিখ্যাত। কাচ্চি শব্দটা এসেছে উর্দু শব্দ ‘কাচ্চা’ থেকে যার অর্থ কাঁচা। বিরিয়ানি মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে, কাচ্চি আর পাক্কি।
কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার সময়, হাড়িতে চাল ও কাঁচা আলুর ওপর টকদই ও মশলায় মেখে রাখা কাঁচা মাংসের আস্তরন দেয়া হয়। তারপর ভালো করে ঢাকা চাপা দিয়ে দমে রান্না করা হয়। মূলত খাসির মাংস আর চিনি গুঁড়া চাল দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি রান্না করা হয়।
তেহারি:
তেহারিও বিরিয়ানির মতো একটি খাবার বিশেষ। বিরিয়ানির মতো সুগন্ধি চাল ও মাংস এর প্রধান উপকরণ। বিরিয়ানির সাথে এর মূল পার্থক্য হলো এতে মাংসের টুকরা বেশ ছোট হয়। এক ধরনের তেহারি রান্নায় গোল আলু ব্যবহার করা হয়। তেহারি বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতে খুবই জনপ্রিয়।
পাক্কি বিরিয়ানি:
পাক্কি বিরিয়ানি মানে মাংসটাকে আলাদা ভালোভাবে কষিয়ে তারপর ভাতের সাথে মিশিয়ে দমে রান্না করা হয়। উর্দু শব্দ পাক্কির অর্থ হলো রান্না করা বা পাঁক করা। চালটাকে আগে থেকেই ঘিয়ে ভেজে আধা সেদ্ধ করে নেয়া হয়।
এরপর সব একসাথে মিশিয়ে দমে দিয়ে রান্না করা হয়। পাক্কি মূলত বাসমতি চালে করা হয়। আমরা বাংলাদেশিদের কাছে কাচ্চি বিরিয়ানি ভালোবাসার অপর নাম।
ভারতবর্ষের পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিম অঞ্চল থেকে বঙ্গে বিরিয়ানির আগমন। তবে পলাউ বা পোলাউ অর্থাৎ “পল(মাংস) মিশ্রিত অন্ন ” অথবা পলান্নের চলাচল এই উপমহাদেশে বৈদিক কাল বা তারও আগে থেকেই। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশে বিরিয়ানি প্রচলনের পরে বিভিন্ন অঞ্চলে তা নানা আঞ্চলিক রূপ পায়। হায়্দ্রাবাদ অঞ্চলে “কাচ্চি” বহুল প্রচলিত এবং এখানেই তার সূচনা বলে মনে করা হয়।
কেউ কেউ মনে করেন, কাচ্চি বিরিয়ানির জন্ম মধ্য এশিয়াতে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের লোকেদের পছন্দ ছিলো লাল মাংস (খাসি/ভেড়ার মাংস)। এই লাল মাংস দিয়েই কাচ্চির প্রচলন শুরু করে শীতপ্রধান এই অঞ্চলের মানুষগুলি।
এটা ঠিক যে মশলা মিশ্রিত কাঁচা মাংসের ওপর চালের বিভিন্ন পরত দিয়ে তারপর গোটা হাঁড়ি বা পাত্রের মুখ বন্ধ করে দমে রান্না করা হয় । কাশ্মিরেও এর একটা রূপ দেখতে পাওয়া যায়। পাক্কির প্রচলন মূলত লখনউ থেকে। এই দুই বস্তুই বিরিয়ানি।
কোথায় খাবারটির উৎপত্তি এ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে বেশিরভাগ খাদ্য ইতিহাসবিদ একমত যে দক্ষিণ এশীয় বিরিয়ানির পূর্বসূরী প্রথম পারস্যে আবির্ভূত হয়েছিল, সম্ভবত ভাত এবং মাংসের একটি অবিকৃত মিশ্রণ হিসাবে, এবং বাণিজ্য, তীর্থযাত্রা এবং বিজয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে।
কাচ্চি বিরিয়ানিতে, ম্যারিনেট করা মাংস এবং ভাত একটি সিল করা হান্ডিতে একটি ধীর শিখায় একসাথে রান্না করা হয়। একটি পাক্কি বিরিয়ানিতে, মাংসকে কম সময়ের জন্য ম্যারিনেট করা হয় এবং প্রায় সেদ্ধ করা হয় যখন চাল আধা-সিদ্ধ হয় এবং উভয়ই স্তরে সাজানো হয় এবং বাষ্প করা হয়।
কাচ্চি শব্দটির মানে কি?
কাচ্চি শব্দটির মানে হলো কাঁচা। কাঁচা অর্থাৎ ম্যারিনেট করা মাংসকে পাত্রের নিচে রেখে তার উপরে প্রায় সিদ্ধ ভাত, পেঁয়াজ বেরেস্তা, ধনে পাতা ও পুদিনা পাতা কুচি, দুধে ভেজানো জাফরান, গোলাপ জল, কেউড়া সেন্ট ইত্যাদি দিয়ে অল্প আঁচে দমে রেখে রান্না করাকে কাচ্চি বিরিয়ানি বলে।
কাচ্চি বিরিয়ানির কাচ্চি শব্দটা এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে, যার বাংলা অর্থ কাঁচা। যেহেতু সুগন্ধি চালের সাথে গোশত সরাসরি রান্না করা হয় তাই এর নাম হয়েছে কাচ্চি। এটি হিন্দি এবং উর্দুতেও একই নামে পরিচিত। সেদ্ধ ছাড়া খাসির গোশত টকদই দিয়ে মাখিয়ে তার উপর আলু আর চালের আস্তরণ দিয়ে রান্না করা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি।