উষ্ণ গরম পানি পানের উপকারিতা।
পানির অপর নাম জীবন। তাই পানি ছাড়া কেউই চলতে পারে না। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন।
চিকিৎসকদের মতে, শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা, শরীরকে সচল রাখা, ত্বক ও চুলকে ঠিক রাখা, কিডনির যত্ন নেওয়া, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পানি খুবই উপকারী।
তবে প্রতিদিন ১ গ্লাস উষ্ণ পানি পান করা বেশি উপকারী। গবেষকরা জানান, প্রতিদিন ১ থেকে ২ গ্লাস উষ্ণ গরম পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
উষ্ণ গরম পানি হজম ক্ষমতা ও রক্ত চলাচলকে উন্নত করে, ওজন কমায় এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এছাড়াও পুষ্টিবিদদের মতে, উষ্ণ গরম পানি খেলে পেট পরিষ্কার থাকে। পেট পরিষ্কার থাকলে শরীরে কোনো রোগ সহজে বাসা বাঁধতে পারে না।
আসুন আবার জেনে নেওয়া যাক, উষ্ণ গরম পানি পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা কি?
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:
উষ্ণ পানি পান হজম সিস্টেমকে সচল রাখতে সহায়তা করে।
পানি পেট এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় হজম অঙ্গগুলোকে আরো ভালোভাবে হাইড্রেটেড করে, যার ফলে বর্জ্যবস্তু শরীর থেকে নিষ্কাশন হয় এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে:
গবেষণা দেখিয়েছে যে প্রচুর পানি পান কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ, পাশাপাশি মেজাজ উন্নত করতে পারে।
এই গবেষণায় দেখা গেছে যে পানীয় মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপকে বাড়িয়ে তোলে এবং তাদের উদ্বেগও হ্রাস করে।
উষ্ণ গরম পানি পান করলে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয় বলে এটি শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকে সচল রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
মাথা যন্ত্রণা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, নারীর ঋতুচক্রের খিঁচুনিতে আরামদায়ক এই গরম পানি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
ডিহাইড্রেশন কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি সাধারণ কারণ। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস করে উষ্ণ গরম পানি পান করুন।
প্রতিদিন আমাদের অন্ত্রের গতিবিধির ঠিক রাখার জন্য অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান প্রয়োজন।
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করে থাকেন তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন বা অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করুন।
এতে করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক থাকার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হবে।
অনিয়মিত পিরিয়ড ও ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়:
নারীদের উষ্ণ গরম পানি পান করার একটি বড় সুবিধা হলো, এটি অনিয়মিত ঋতুস্রাব ঠিক করতে এবং ঋতুস্রাবের ব্যথা থেকে উপশম দিতে সহায়তা করে।
অনেক সময় রক্ত জমাট বেঁধে তা বেরোতে না পারলে ব্যথা হতে থাকে। এ সময় উষ্ণ গরম পানি পান করলে জমাট রক্ত ভেঙে ব্লাড ফ্লো সঠিকভাবে হয়, যা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
দ্রুত মেদ ঝরাতে উষ্ণ গরম পানি অত্যন্ত কার্যকর। এই পানি খেলে শরীরের মেটাবলিক রেট বাড়ে এবং সহজেই অনেকটা ক্যালোরি পোড়ে।
হালকা গরম পানি খিদে বোধ কমিয়ে ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই পানির সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে মেদ ঝরবে দ্রুত।
রক্তচলাচলের গতি ঠিক রাখে:
খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করলে শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়ে তেমনি এই তাপমাত্রা শরীরের শিরা, ধমনীতে রক্তচলাচলের গতিও স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্যকর রক্ত প্রবাহ আপনার রক্তচাপ থেকে শুরু করে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি সমস্ত কিছুকে প্রভাবিত করে।
গরম পানিতে গোসল রক্তচলাচল, ধমনী এবং শিরা সারা শরীর জুড়ে রক্তকে আরও কার্যকরভাবে প্রসারিত এবং বহন করতে সহায়তা করে। গরম পানি পান করার একই প্রভাব থাকতে পারে।
ডিটক্স:
সাধারণ তাপমাত্রার পানির চেয়ে উষ্ণ গরম পানি খেতে পারলে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রাটা সামান্য হলেও বৃদ্ধি পায় এবং ঘাম হয় বেশি।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে শরীরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঘামের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যায়।
এতে শরীর দ্রুত ডিটক্স অথবা ব্যথামুক্ত হয়ে যায়। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
যৌবন ধরে রাখে:
উষ্ণ পানি শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়ার মাধ্যমে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
একই সাথে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ও টানটান ভাব বজায় রাখতেও এটি দারুণ সহায়ক।
সাইনাস ও শ্লেষ্মার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়:
গরম পানি পান করার সময় যে বাষ্প আমরা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি তা সাইনাসগুলি আলগা করতে এবং এমনকি সাইনাসের মাথা ব্যথা উপশম করতে পারে।
এছাড়া শ্লেষ্মা তৈরির কারণে গলা ব্যথা প্রশমিত করতে পারে।