আমাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাই কেন? করোনা ভাইরাসের ভূমিকা অক্সিজেন লেভেল কমাতে।

আপনার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলে তাকে হাইপোক্সেমিয়া বলে। আপনার টিস্যুগুলিতে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকাকে হাইপোক্সিয়া বলে।

ফুসফুসে আক্রমণকারী করোনাভাইরাস ফুসফুসে ঢুকে শরীরের অক্সিজেন মাত্রা কমিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা এখনও করোনা ভাইরাস নামক রহস্যময় ভাইরাস নিয়ে কাজ করে চলেছেন।

সবচেয়ে বড় এবং জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ রহস্যগুলির মধ্যে একটি হল ভাইরাস কীভাবে “নীরব হাইপোক্সিয়া” সৃষ্টি করে। করোনা রোগীদের সব সময়ই যে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে এরকম কোনো কথা নেই।

সংক্রমণের মাত্রা অল্প হলে সামান্য জ্বর, সর্দি কাশি, স্বাদ গন্ধ চলে যাওয়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিন্তু যে সব রোগীদের শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা হয় তাদেরই অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রক্তে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা:

একটি সাধারণ বা সুস্থ্য মানুষের রক্তে অক্সিজেনের স্তর ৭৫((মিমি এইচজি) থেকে ১০০(মিমি এইচজি) মিলিমিটারের মধ্যে পরিবর্তিত হয়।

একজন মানুষের রক্তে অক্সিজেন স্তর ৬০ মিমি Hg এর নীচে থাকাকে কম হিসাবে বিবেচিত করা হয় এবং ডাক্তারের সিদ্ধান্ত এবং স্বতন্ত্র কেসের উপর নির্ভর করে অক্সিজেন পরিপূরক প্রয়োজন হতে পারে।

যখন স্বাস্থ্যকর ব্যক্তির গড় স্তরের তুলনায় রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম হয়, তখন এটি হাইপোক্সেমিয়া হিসাবে পরিচিত অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। এর অর্থ এই যে, শরীরের সমস্ত কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সমস্যা হয়।

অসুখের কারণেও কারো হাইপক্সিয়া হতে পারে, আবার আচমকাই কারও মধ্যে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডি‌জ়িজ়), অ্যাজ়মার রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপক্সিয়া দেখা যায় বেশি। কারণ এঁদের শরীরে এমনিই অক্সিজেন কম জেনারেটেড হয়।

তাই কোনও কারণে যদি রোগের প্রকোপ বাড়ে তখন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়, সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, অক্সিজেনের লেভেল ৯০-এর নীচে নেমে গিয়েছে, তখন দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

oxygenlow

রক্তে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণ:

  • রক্তাল্পতা,
  • এআরডিএস (তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সঙ্কট সিনড্রোম)
  • হাঁপানি
  • শিশুদের মধ্যে জন্মগত হার্ট ত্রুটি
  • প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে জন্মগত হৃদরোগ
  • সিওপিডি (দীর্ঘস্থায়ী বাধাজনিত ফুসফুস রোগ) বর্ধন – লক্ষণগুলির অবনতি
  • এম্ফিসেমা
  • ফুসফুসের রোগ
  • ওষুধ যেমন: নির্দিষ্ট মাদকদ্রব্য এবং অ্যানাস্থেসিকগুলি, যা শ্বাস প্রশ্বাসকে বাধাগ্রস্ত করে।
  • নিউমোনিয়া
  • নিউমোথোরাক্স
  • ফুসফুসের শোথ (ফুসফুসে অতিরিক্ত তরল)
  • ফুসফুসের এম্বোলিজম (ফুসফুসের ধমনীতে রক্ত ​​জমাট বাঁধা)
  • পালমোনারি ফাইব্রোসিস (ক্ষতিগ্রস্থ ফুসফুস)
  • নিদ্রাহীনতা

করোনাভাইরাস কি শরীরের অক্সিজেন লেভেল হ্রাস করে?:

করোনা ভাইরাসের ভূমিকা অক্সিজেন লেভেল কমাতে খুব মারাত্মক। করোনা শ্বাস প্রশ্বাস জনিত একটি রোগ। করোনা সরাসরি আমাদের ফুসফুসকে (lungs) ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।

রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে দেহের কোষগুলি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না, ফলে দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। এর ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। অক্সিজেন কমে গেলে বুকে ব্যথার মত উপসর্গও দেখা যেতে পারে। এই রকম উপসর্গ দেখা দিলে কখনই তাকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।

তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে হসপিটালে ভর্তি করা ব্যবস্থা করতে হবে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয় ফলে মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ার ফলে ঠোঁটে নীলচে ভাব বা ঠোঁট বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যা সায়ানোসিস (cyanosis) নামে পরিচিত। দেহে অক্সিজেন কমে যাওয়ার ফলে দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।

এই উপসর্গ গুলি দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে হসপিটালে ভর্তিও করতে হতে পারে। যদি বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা যায় তবে তো খুবই ভালো। ঘন ঘন অক্সিমিটার দিয়ে রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে।