মেনোপজের লক্ষণগুলো কি কি? মেনোপজের পর খাদ্যাভাস। কোন খাবারগুলি আপনাকে ভালো রাখবে।
মেনোপজের সাথে যুক্ত কিছু ঝুঁকির কারণ এবং লক্ষণ পরিবর্তন না করা গেলেও একটু সচেতন হলে সমস্যাটি সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ভাল পুষ্টি মেনোপজের সময় এবং পরে যে কিছু শারীরিক সমস্যা উদ্ভূত হতে পারে তা প্রতিরোধ বা মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।
ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে মেনোপজ হয়। এ হরমোনই এত দিন নারীর হৃদ্রোগ প্রতিরোধ করে আসছিল। কাজেই মেনোপজের পর সেই সুরক্ষা আর থাকে না। নারীরা মুটিয়ে যেতে থাকেন, রক্তে চর্বি বাড়ে, বাড়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
একই সঙ্গে শুরু হয় অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়। হঠাৎ গরম লাগা, ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা ও অনিদ্রা। কাজেই এ সময়টাতে জীবনাচরণ পদ্ধতি নিয়ে সচেতন হতে হবে।
মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। কোনো কারণে Uterus failure বা জরায়ু ফেইলিউর হলে সময়ের আগেই অর্থাৎ অল্প বয়সেই মেনোপজ হতে পারে।
নারীদের শরীরে এ পরিবর্তন আসার পেছনে মূল কারণ ইস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন। এ হরমোন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যচক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে প্রতি মাসে যে ডিম্ব তৈরি হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর শরীর যেভাবে প্রস্তুত হয়, তার পেছনেও রয়েছে এ হরমোনের ভূমিকা।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এ হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বের পরিমাণও কমতে থাকে। ফলে কমতে থাকে মাসিকের পরিমাণও। এরই ধারাবাহিকতায় মেনোপজ হয়। অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
মেনোপজের ১০টি সাধারণ লক্ষণ:
১২ মাস বা এক বছর ধরে পিরিয়ডের অনুপস্থিতি।
গরম ঝলকানি অর্থাৎ শরীরে গরম গরম ভাব।
রাতের বেলা ঘাম.
মেজাজের পরিবর্তন এবং বিরক্তি।
ঘুমাতে অসুবিধা।
মেমরি এবং একাগ্রতা নিয়ে সমস্যা যাকে জ্ঞানীয় পরিবর্তন বলে( যেমনঃ নাম, দিকনির্দেশ মনে রাখতে অসুবিধা, মনোযোগ হারানো/চিন্তায় মগ্ন বাসে,ট্রেনে ইত্যাদি)
যোনি শুষ্কতা/যৌনসঙ্গমের সময় যোনি শুষ্কতা এবং অস্বস্তি।
যোনি/ভালভার চুলকানি। কম সেক্স ড্রাইভ (কামনা)
মেনোপজের জন্য প্রাথমিক খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা:
মেনোপজের সময়, আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি পেতে বিভিন্ন ধরণের খাবার খান। যেহেতু মহিলাদের শরীরে প্রায়ই আয়রন এবং ক্যালসিয়াম ঘাটতি পড়ে, তাই এই নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করুন:
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান:
দিনে দু-চারটি দুগ্ধজাত দ্রব্য(দুধ, দই, ছানা বা চীজ) এবং পালংশাক অর্থাৎ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। ক্যালসিয়াম দুগ্ধজাত পণ্য, হাড় সহ মাছ (যেমন সার্ডিন এবং টিনজাত সালমন), ব্রোকলি এবং লেগুমে পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১,২০০ মিলিগ্রাম পাওয়ার লক্ষ্য।
লৌহ বা আইরন জাতীয় খাবার খান:
দিনে অন্তত তিনটি পরিবেশন করুন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। চর্বিহীন লাল মাংস, হাঁস-মুরগি, মাছ, ডিম, সবুজ শাকসবজি, বাদাম এবং সমৃদ্ধ শস্যজাত পণ্যে আয়রন পাওয়া যায়। বয়স্ক মহিলাদের জন্য লোহার জন্য প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকাগত মাত্রা দিনে ৫ মিলিগ্রাম।
পর্যাপ্ত ফাইবার জাতীয় খাবার খান:
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের জন্য নিজেকে সাহায্য করুন, যেমন পুরো শস্যের রুটি, সিরিয়াল, পাস্তা, ভাত, তাজা ফল এবং সবজি। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের প্রতিদিন প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার পাওয়া উচিত।
ফল ও সবজি খান:
প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ১/২ কাপ ফল এবং ২ কাপ শাকসবজি খান। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য দেশি ফল অর্থাৎ যে মৌসুমে যে ফল বেশি পাওয়া যাই, সেই ফল বেশি করে খান।
প্রচুর পানি পান করুন:
একটি সাধারণ নিয়ম হিসাবে, প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস জল পান করুন। এটি বেশিরভাগ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে।
একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন:
যদি আপনার ওজন বেশি হয়, তাহলে খাবারের পরিমান কমিয়ে ফেলুন এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খান। যদিও খাবার এড়িয়ে যাবেন না। একজন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান বা আপনার ডাক্তার আপনাকে আপনার আদর্শ শরীরের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারেন।
যেদিকে নজর রাখবেন:
নিম্নলিখিত খাবারগুলি হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং মেনোপজের লক্ষণগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারে:
গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বিশেষ করে পালং শাক
দই।
পনির।
দুধ।
মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকেরেল এবং টুনা।
শণ এবং চিয়া বীজ।
ব্রকলি এবং ফুলকপি।
ব্লুবেরি এবং অন্যান্য রংয়ের বেরি।
মেনোপজের আগে থেকেই হাড়ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। এ সময় দৈনিক প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৮০০ ইউনিট ভিটামিন ডির চাহিদা থাকে। তাই প্রতিদিন দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, পনির, সয়াবিন, কাঁচা বাদাম, আখরোট, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার বিষণ্নতা, অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।
সেলেনিয়াম হট ফ্লাশ কমায়। কলিজা, টুনা মাছ, টমেটো, পেঁয়াজ, ব্রকলি, রসুন ইত্যাদিতে সেলেনিয়াম আছে। সয়াসমৃদ্ধ খাবার ও বিনস হট ফ্লাশ কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে গরম ও মসলাদার খাবার, চা–কফি হট ফ্লাশ বাড়ায়। এ বয়সে অতিরিক্ত চুল পড়া ও ত্বকের লাবণ্যহীনতা কমাতে ভিটামিন ই-যুক্ত খাবার, যেমন সয়াবিন, বাদাম, অঙ্কুরিত সবজি, ডিম ইত্যাদি খাওয়া উচিত।