গোপালের ভাইপো।
কৃষ্ণ নগরের রাজা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ সভার ভাঁড় ছিল গোপাল। গোপাল ছিল বিশেষ বুদ্ধি সম্পন্ন। তার বুদ্ধির সঙ্গে স্বয়ং মহা রাজ ও পেরে উঠত না। অনেক বিপদে আপদে গোপাল মহা রাজকে বুদ্ধি দিয়ে বাঁচিয়েছে। আর এজন্য তিনি সবার কাছে খুব প্রিয় মানুষ ছিল।
গোপালের ছিল এক ভাইপো। সে ও ছিল গোপালের মতোই সেয়ানা। তবে গোপালের মত বুদ্ধি করে এত পয়সা রোজগার করতে পারত না।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আর্থিক আনুকুল্যে গোপাল পাকাবাড়ি তুলেছিল কিন্তু তার ভাইপোর পক্ষে তখনও পাকাবাড়ি তোলা সম্ভব হয়নি।
কুঁড়েঘরেই বাস করতে হতো তাকে।
লোক দেখানো বুদ্ধি কম থাকার জন্য পয়সা রোজগার করত কম।
গোপাল একদিন তার পাকাবাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে গড়গড়া টানতে টানতে তার ভাইপোকে ডাক দিয়ে বলল, ওরে হাবু, এই অসময়ে বাড়ির ভেতর বসে কি করছিস রে? এদিকে আয় আমি ছাদে বসে আছি। তোকে একটা জিনিস দেখাব।
গোপালের ভাইপো হাবু বাড়ির ভেতরেই ছিল। গোপালের ডাক শুনতে পেয়েও সেদিন বাড়ির বাইরে বেরোয়নি বা গোপালের ডাকে সাড়াও দেয়নি।
কারণ সে বুঝতে পেরেছিল যে, তার কাকা তাকে সহসা ডাকে না। নুতন পাকা বাড়ির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্যই এখন ডাকাডাকি করছে।
নইলে যে কাকা সচরাচর কোনও খোঁজ নেয় না, সে কেন দরাজ গলায় ডাকছে এই অসময়ে।
গোপাল কাকার খোঁজ নেওয়ার কোন প্রয়োজন ভাইপোর নেই। ভাইপো এই সিদ্ধান্ত মনে মনে নিয়ে নিঃসাড়ে চুপচাপ রইল। গোপালের কথায় কান দিলোনা বা ছাদে ও গেল না।
এই ঘটনার প্রায় দুবছর পরে গোপালের ভাইপো নিজের চেষ্টায় পাকাবাড়ি তৈরি করল অনেক কষ্টে টাকা রোজগার করে।
তার নতুন পাকাবাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সে গোপালকে বললে, ও গোপাল কাকা দুবছর আগে ছাদে দাঁড়িয়ে আমায় যেন কি বলেছিলে? তুমি আমার ছাদে এসো বলছি।
গোপাল সেদিন বুঝতে পারল যে তার ভাইপো বোকা নয়- তার মতই সেয়ানা হয়েছে দেখছি। নইলে দুবছর পরে কেউ আবার সাড়া দেয়? গোপাল তখন মনে মনে তারিফের হাসি হাসতে লাগল তার ভাইপোও বেশ সেয়ানা হয়েছে দেখে।