কোল্ড ড্রিংক আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি করে।
আমাদের অনেকের প্রিয় কোল্ড ড্রিংক। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে কোল্ড ড্রিংক দ্বারা তৃঞ্চা নিবারণ করতে চান। কিন্তু এই কোল্ড ড্রিংকস আমাদের শরীরের কী ক্ষতি করছে সেটা কি আমরা টের পাচ্ছি?
একেবারে ছোট্ট শিশু বাদে প্রায় সকল বয়সের মানুষ এটি স্বানন্দে গ্রহণ করছেন। তবে এই কোমল পানীয় বা কোল্ড ড্রিংক যে কতটা ক্ষতিকর তা জানলে আমরা এটা খেতাম না।
নীরবে এটি ক্ষতি করে যাচ্ছে আমাদের। কোমল পানীয়তে চিনি ও অম্লীয় উপাদান দুইই প্রচুর পরিমানে থাকে।
কোল্ড ড্রিংক এমন পানি যা অধিক চাপে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের সাথে যুক্ত হয়। CO২-কে চাপ দিয়ে পানির সাথে যুক্ত করা হয়। এটি এমন একটি পানীয় যা বুদবুদ উৎপন্ন করে।
বিয়ে, জন্মদিন বা যেকোনো অনুঠানে বিরিয়ানি, পোলাও, মাংস খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিংক না হলে যেন চলেই না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো আসলেই কি এগুলো উপকারী না সাময়িক তৃপ্তির জন্য আমরা এগুলো খেয়ে থাকি। নাকি চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে হালের ফ্যাশন বজায় রাখার গরিমা।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির নিউ সায়েন্স থেকে জানা গেছে যে, যারা বেশি সোডা পান করে, তাদের হৃদরোগ, স্তন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
গবেষণাটি আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের জার্নাল, সার্কুলেশন-এ প্রকাশ করা হয়েছে এবং এটি এখন প্রমানের দলিল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত যারা কোমল পানীয় পান করছেন তাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
চিনি দিয়ে বা কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে তৈরি এই কোমল পানীয় আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কারণ এসব খাবারের কারণে হৃদরোগ, কিডনি ডিজিজ, কিডনিতে পাথর, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, যকৃতের বিভিন্ন রোগের এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, কোল্ড ড্রিংক আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি করছে-
লিভারের সমস্যা দেখা দেয়:
আধুনিক শহরের জীবনযাপনে খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণে আজকাল অনেকেই ‘ফ্যাটি লিভারে’ আক্রান্ত হচ্ছেন। কোল্ড ড্রিংক ফ্যাটি লিভারের কারণ হতে পারে।
আসলে সব কোল্ড ড্রিংকেই প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। আর চিনি আমাদের শরীরে ওজন বাড়িয়ে দেয়। কোল্ড ড্রিংকের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি খেলে আমাদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়:
কোল্ড ড্রিংক যে শুধু শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় কিংবা দাঁতের ক্ষতি করে তাই নয়, অতিরিক্ত পরিমাণে কোল্ড ড্রিংক খেলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
কোল্ড ড্রিংকে এক ধরনের সোডা থাকে, যা আমাদের খাবার হজমের সাহায্য করে। কিন্তু খাবার হজমের পাশাপাশি এই সোডা আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদের মৃত্যুর পর্যন্ত কারণ হতে পারে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়:
সোডাতে, ফসফরিক এসিডে উচ্চ স্তরের রয়েছে, যা কিডনি পাথর এবং কিডনির অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন দুই বা ততোধিক কোল্ড ড্রিংক খেলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সোডায় সাধারণ শর্করা বা কৃত্রিম শর্করা রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
কিডনি সবসময় আমাদের শরীরে ফিল্টারের কাজ করে যাচ্ছে। একটা অঙ্গ বা ছাঁকন যন্ত্র যাই বলি না কেনো তারও তো একটা লিমিটেশন আছে।
ক্রমাগত যদি তাকে সোডা, অ্যাসিড ফিল্টার করতে হয় তাহলে সেতো একসময় দুর্বল হয়ে পড়বে। এবং কিডনিতে আস্তে আস্তে পাথর জমতে শুরু করবে।
অকাল বার্ধক্য দেখা দেয়:
কোল্ড ড্রিংক খেলে অকাল বার্ধক্য দেখা দিতে পারে। এমনকি মানুষের মনে হিংস্রতাও দেখা দেয়।
কোল্ড ড্রিংক খেলে ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা, হৃদপিণ্ডের সমস্যা, হাঁপানি প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। এজন্য যথাসম্ভব এই পানীয় থেকে বেঁচে থাকাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।
দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়:
কার্বনেটেড পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্তিম মিষ্টি ও সোডা থাকে। এই সোডায় থাকে ফসফরিক অ্যাসিড যেটা এই পানীয়গুলোতে একটি টানযুক্ত ও অ্যাসিডযুক্ত স্বাদ দেয়। এই ফসফরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর ও অন্যান্য রেনাল সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী।
অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে তৈরি কোমল পানীয় দাঁত ক্ষয় সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।
এছাড়া চিনি যুক্ত কার্বনেটেড পানীয় দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে থাকে। এটি স্পার্কলিং ওয়াটার, ক্লাব সোডা, সোডা ওয়াটার, সেল্টজার পানি এবং ফিজি জল হিসাবেও পরিচিত।
কার্বনেটেড সোডাস দাঁতের এনামেল আক্রমণ করার জন্য ফলকে আরও অ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম করে।
তাই আপনি যদি সারাদিন সোডা চুমুক দেন তবে আপনি অবশ্যই অ্যাসিডে দাঁত আবরণ করছেন। এছাড়াও এটি আপনার মুখ শুকিয়ে যায়, এর অর্থ আপনার লালা কম।
প্রচন্ড এই গরমে আপনি শুধু কাজ করতে করতে ক্লান্ত নয়, গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সাথে সাথে একটা কোমল পানীয় খেয়ে নিলেন। এটা করা ঠিক নয়।
কৃত্তিম চিনি ও সোডাযুক্ত এইসব খাবার না খেয়ে প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত পানীয় ডাবের পানি, আখের রস, তরমুজের রস অর্থাৎ ফলের রস খান। প্রকৃতিপ্রদত্ত খাবার খান।
মানবসৃষ্ট, কলকারখানা বা ফ্যাক্টরিতে উৎপন্ন খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।