কেমোথেরাপি কি? কেন করা হয় ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?
কেমোথেরাপি (chemotherapy) একটি ক্যান্সারের চিকিৎসা যেখানে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে, সেগুলি সব একইভাবে কাজ করে।
এই ওষুধ ক্যান্সার কোষের পুনরুৎপাদন বন্ধ করে দেয়, যা ক্যান্সার শরীরে বৃদ্ধি ও ছড়াতে বাধা দেয়। কেমোথেরাপি দ্রুত বর্ধনশীল টিউমার কোষকে ধ্বংস করে থাকে। এটি প্রত্যেক ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে উপকারী নাও হতে পারে এবং কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও দেখা দিতে পারে।
কেমোথেরাপি কেন করা হয়ে থাকে
কেন কেমোথেরাপি করা হয়ে থাকে তা নিচে দেওয়া হলো –
- ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করার ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়।
- ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রাথমিক পদ্ধতি হিসাবে কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- কেমোথেরাপি ব্যবহার হয় শরীরের ক্যান্সার কোষের সংখ্যা কমানোর জন্য।
- শরীরের অন্যান্য অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমানো হয় কেমোথেরাপির মাধ্যমে।
- এটির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার বা বিকিরণ থেরাপির আগে টিউমারের আকার হ্রাস করে থাকে।
- কেমোথেরাপি করা হয় ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গ থেকে মুক্তি দিতে। এটি কিছু ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে।
- ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, কেমোথেরাপি ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
- ক্যান্সারের চিকিৎসার পাশাপাশি, কেমোথেরাপি অস্থি মজ্জার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অস্থি মজ্জার স্টেম সেল চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কেমোথেরাপির জন্য ক্যান্সার কোষের সাথে কিছু ভালো কোষও মারা যায় তাই এর প্রভাবে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ক্যান্সারের ধরণে এবং কেমোথেরাপির ঔষধের উপর ভিত্তি করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। সব রোগীর একই রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাও থাকতে পারে। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
চুল পড়ে যাওয়া:
চুল উৎপাদন করা গ্রন্থি কেমোথেরাপির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রোগীর চুল পড়ে যায়। কেমোথেরাপি ২ সপ্তাহ পর থেকে চুল পড়তে শুরু করে।
বমিভাব:
এর প্রভাবে পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে হজম শক্তি হ্রাস পায়। এ জন্য খাদ্য খাবার পর বমিভাব হয়।
ডায়রিয়া হওয়া:
পাকস্থলীর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার জন্য খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না। তাই বদহজমের জন্য ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
ক্ষুধা মন্দা:
খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না তাই পেট ভরা মনে হয়। পেট ভরা থাকার জন্য ক্ষুধা লাগে না এবং রোগী খেতে চায় না।
মুখে ঘা হওয়া:
কেমোথেরাপির কারণে ঠোটে, মুখের ভেতর, খাদ্যনালির উপরের অংশে ঘা দেখা দেয়। ঝাল এবং টক খাবার গ্রহণ করলে মুখের ভেতর খুব জালাপোড়া হয়।
খাবারের স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন হওয়া:
খাবারের গন্ধ শুকলেই বমি বমি ভাব হয়। অনেক সময় দেখা যায় নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়:
শ্বেত রক্ত কণিকা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করা জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু এই কেমোথেরাপির কারণে শ্বেত কণিকা গুলোর সংখ্যা কমে যায় তাই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকটা কমে যায়।
ওজন কমে যাওয়া:
রোগী ঠিকমত খেতে পারে না তাই ওজন কমে যায়। আমাদের শরীরের মেটাবোলিজমের ভারসাম্য নষ্ঠ হলেও ওজন কমে যেতে পারে।
ক্লান্তিভাব সৃষ্টি হওয়া:
কেমোথেরাপি শরীরের কিছু ভালো কোষ গুলোকে মেরে ফেলে এবং অনেক ধরনের কোষের কার্যক্ষমতা কমে যায় এর ফলে শরীরে শক্তির ঘাটতি হয়। শক্তির ঘাটতি দূর করার উপায় হলো সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহন করা কিন্তু রোগী ঠিকমত খেতে পারে না এর ফলে ক্লান্তিভাব সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মানসিক পরিবর্তন:
কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে এবং দ্রুত মনের অবস্থার পরাবর্তন হয়ে থাকে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সামান্য কারণে রেগে যায়।
ত্বকের লাবণ্যতা কমে যায়:
কেমোথেরাপি দ্রুত বর্ধনশীল কোষকে আক্রমণ করে থাকে। আমাদের ত্বকের দ্রুত বর্ধনশীল কোষ কেমোথেরাপির কারণে মারা যায় এবং ত্বকের তৈল গ্রন্থির ক্ষরণ কমে যায় এর ফলে ত্বকের লাবণ্যতা কমতে থাকে। ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক, রুক্ষ। অনেকের নখ কালো হয়ে যায়।
শারীরিক ক্ষমতা কমে যায়:
শারীরিক হরমোন ক্ষরণকারী গ্রন্থিগুলোর হরমোন ক্ষরণের ভারসাম্য নষ্ঠ হয়ে যায় কেমোথেরাপির কারণে এর ফলে শারীরিক অক্ষমতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। অনেকসময় স্বাভাবিক ভাবে শুক্রাণু সৃষ্টি হয়না। খুব কম শুক্রাণু সৃষ্টি হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকচক্র এলোমেলো হয়ে পড়ে।