দারুচিনি HIV ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
প্রত্যেক রান্নাঘরেই এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ পাওয়া যায়। একত্রে যেটাকে আমরা গরম মশলা বলে থাকি। এই গরমশলার একটি অংশ দারুচিনি।
দারুচিনির গুণাগুণ শুধু রান্নাতেই নয়, তার বাইরেও আছে। দারুচিনির সুমিষ্ট ঘ্রানের পাশাপাশি এর অসাধারণ ঔষধী গুনাগুনও রয়েছে।
ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত করতে, হার্ট ভালো রাখতে এবং HIV ভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করতে দারুচিনি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বিশ্ব সেরা সাত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে দারুচিনি। দারুচিনি ইংরেজিতে এটাকে Cinnamon বলা হয়।
এটা মূলত গাছের ছাল যেটা আমরা মসলা হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। দারুচিনি দুটি ধরণের রয়েছে: সিলোন (Ceylon cinnamon) দারুচিনি এবং কাসিয়া দারুচিনি (Cassia cinnamon)।
দারুচিনির উপকারীতা নিচে আলোচনা করা হলো-
হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়:
বিশ্বের অকাল মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হার্ট ডিজিজ। দারুচিনি হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এটি “খারাপ” (LDL) কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দারুচিনি “ভাল” (HDL) কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়েছে।
ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে:
ইনসুলিন একটি হরমন যা খাদ্য বিপাকপ্রক্রিয়াকে ঠিক রাখে। আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহ থেকে কোষে রক্তের শর্করা পৌছে দেওয়ার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
সমস্যাটি হল অনেক লোকের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না। শরীরের ইনসুলিন তৈরি না হওয়ার এই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে।
মজার বেপার হল দারুচিনি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে:
কয়েকটি উপায়ে দারুচিনি রক্তে শর্করাকে হ্রাস করতে পারে। প্রথমে, দারুচিনি খাওয়ার পরে আমাদের রক্ত প্রবাহে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়।
এটি অসংখ্য হজম এনজাইমের সাথে মিলিত হয়ে হজমে কার্বোহাইড্রেট ভাঙ্গনকে ধীর করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, দারুচিনিতে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা মানব দেহে ইনসুলিনের মতো কাজ করতে পারে।
দারুচিনি আমাদের শরীরের কোষগুলির দ্বারা গ্লুকোজের ব্যবহার উন্নত করে, ইনসুলিনের চেয়ে অনেক ধীর গতিতে কাজ করে। অসংখ্য মানব গবেষণায় দেখা গেছে যে দারুচিনিতে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাব রয়েছে।
জয়েন্টের ব্যাথা কমায়:
অনেকেই জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে দারুচিনিকে জয়েন্টের ব্যথা কমানোর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ মধু আর দারচিনি গুড়ো ভালভাবে মিশিয়ে নিন, এরপর শরীরের ব্যথা স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করুন।
২-৩ দিন ভালভাবে মালিশ করুন। কিছুদিন পর দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।
আলঝেইমারস এবং পার্কিনসন ডিজিজ:
আলঝেইমারস এবং পার্কিনসন ডিজিজ দুটি খুব জটিল রোগ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দারুচিনি আলঝাইমার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, সিইপ্প্ট নামক দারুচিনির ছাল থেকে পাওয়া একটি নির্যাসে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আলঝাইমার লক্ষণগুলির বিকাশে বাধা দিতে পারে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে:
মরণব্যাধি ক্যান্সারের অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় দারুচিনি। দারুচিনিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্রি র্যাডিক্যাল থাকার কারণে এটি ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি এবং টিউমারগুলিতে রক্তনালী গঠন হ্রাস করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে দারুচিনি কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে:
দারুচিনি ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। দারুচিনির অন্যতম সক্রিয় উপাদান সিনামালডিহাইড বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে।
HIV ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে:
HIV ভাইরাস যা আস্তে আস্তে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দেয়। দারুচিনি HIV এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে দারুচিনি আমাদের HIV থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।
একটি ল্যাবে পরীক্ষিত ৬৯ জনের মধ্যে দারুচিনি HIV ক্রিয়াকলাপ হ্রাস করতে সবচেয়ে কার্যকর ছিল।
সর্দি কাশিতে দারুচিনি:
দারুচিনিতে অ্যান্টি–মাইক্রবিয়াল আর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি গুন রয়েছে। তাই এটি আমাদের সর্দি কাশি থেকে সুরক্ষা করে। দারুচিনি আর লবঙ্গ একসাথে পানিতে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফোটান তারপর ছেঁকে পান করুন।
নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ:
দারুচিনির অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল প্রভাব দাঁত ক্ষয় রোধে এবং দুর্গন্ধকে কমাতেও সহায়তা করতে পারে। দারুচিনি ব্যবহার শুধু মাত্র দাঁত এর ব্যথার জন্য নয়, এটার ব্যবহার মুখের সংক্রমণ আর দুর্গন্ধকে কমাতে সহায়তা করে।
দারুচিনি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর একটি মশলা। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে পারে, হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলি হ্রাস করতে পারে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত বেনিফিট রয়েছে।