গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কি স্বাভাবিক? কোন খাবারগুলো সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া দূর করতে।
গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাবের দোষ প্রায়শঃ দেখা যায়। বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া জনিত এই সমস্যা কম বেশি অনেককেই ভোগান্তিতে ফেলে।
ডাক্তারেরা এই সমস্যা দূরীকরণে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ প্রেসক্রাইবড করে থাকেন। এছাড়া ঘরোয়াভাবে এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যায়।
পানি পান করার পরিমাণ কমিয়ে দিলে যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো প্রস্রাবের ইনফেকশন। এই সমস্যাটিকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বলা হয়। প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
দীর্ঘ সময় এই স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন ওষুধ না খেয়ে বরং ঘরোয়াভাবে এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করুন। প্রচুর পানি পান করার পাশাপাশি এমন কিছু খাবার খান যেগুলো প্রস্রাবের ইনফেকশন কমাবে।
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাব সংক্রমণের ঘরোয়া প্রতিকার কী? ক্র্যানবেরি জুস পান করা। ক্র্যানবেরি unsweetened রস আকারে খাওয়া যেতে পারে
বা সুবিধাজনক পরিপূরক বড়ি। UTI (Urinary Tract Infection)-এর চিকিৎসার জন্য অশোধিত ক্র্যানবেরির রস পান করা একটি জনপ্রিয় প্রতিকার।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ক্র্যানবেরি তো আমাদের দেশের ফল নয়। তাহলে আমরা কি খাবো। আমরা বেরি গোত্রের কালোজাম বা জাম এবং করমচা খাবো। এই দুটি ছাড়া আরো কয়েকটি খাবার রয়েছে যেমনঃ দই বা টক দই ও রসুন যেগুলো ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দূর করতে সাহায্য করে।
কোন খাবারগুলো সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া দূর করতে:
প্রচুর পানি পান করুন। তিন লিটারের কম যেনো না হয়। গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনে তিন লিটারের বেশি হলে আরো ভালো। ষড়ঋতুর বা ছয় ঋতুর বাংলাদেশে প্রতি মৌসুমেই প্রচুর দেশি মৌসুমী ফলে বাজার ছেয়ে যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলগুলো বেশি বেশি খাবেন।
প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। সর্বদা পরিষ্কার পরিচছন্ন থাকুন। যৌনমিলনের আগে ও পরে মূত্রত্যাগ করুন।
ক্রানবেরি জুস:
লাল রঙা জাম জাতীয় এই ফল প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয়। ক্রেনবেরিতে বেটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী।
করমচা:
করমচা গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মতো ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। কারণ এতে শক্তিশালী অ্যান্টি-হেলমেটিক এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আমাদের দেশে জৈষ্ঠ্য আষাঢ় মাসে ব্ল্যাকবেরি বা কালোজামের পর পরই আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে করমচা পাওয়া যায় যেটি ক্র্যানবেরি জুইসের মতো কাজ করে ইউরিন ইনফেকশন কমাতে।
জাম বা কালোজাম:
ঐতিহ্যগতভাবেই জাম গাছের বাকল, পাতা ও বীজ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ম্যালিক এসিড, গ্যালিক এসিড, অক্সালিক এসিড এবং ট্যানিন থাকে জাম উদ্ভিদে। একারণেই জাম উদ্ভিদ ও এর ফল ম্যালেরিয়া রোধী, ব্যাকটেরিয়ারোধী এবং গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ হিসেবে কাজ করে।
আয়ুর্বেদ মতে জাম হল অ্যাসট্রিনজেন্ট অ্যান্টি-ডিউরেটিক, যা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ কমাতে সাহায্য করে, হাইপোগ্লাইসেমিক গুণ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ যা ডায়াবেটিসে উপকারী। জাম ফল ও বীজ উভয়েই এই গুণগুলি উপস্থিত।
রসুন:
রসুনে অ্যালিসিন সহ বেশ কিছু উপকারি উপাদান থাকে যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে বেশ ফলদায়ক। ই.কোলি সহ অনেক ব্যাকটেরিয়াকে দমন করতে পারে রসুন। বার বার ফিরে আসা ইউরিন ইনফেকশন রোধেও রসুন বেশ উপকারি। কাঁচা রসুন খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
দই:
অন্ত্রবান্ধব বা Probiotic ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ দই প্রস্রাবের ইনফেকশনেই জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে দমন করতে সাহায্য করে।
ব্রোকলি:
ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি যা প্রস্রাবকে অ্যাসিডিক করে ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাধা দেয়। পাশাপাশি এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ইনফেকশন থেকে মুক্তি মেলায়।
দারুচিনি:
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের কারণে শত শত বছর ধরেই সমাদৃত দারুচিনি। এটি শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বেড়ে উঠতে বাধা দেয়। একটি গবেষণায় জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার জন্য দায়ী ই. কোলি ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে দারুচিনি।
পেঁপে:
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রস্রাবে অ্যাসিডিটি বাড়ায়। ফলে ইনফেকশন তৈরিতে দায়ী ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার, মূত্রপথ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা, মাসিকের সময় নিয়মিত স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। সুতির অন্তর্বাস প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হবে।
মূত্র সংক্রমণের সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ খুবই জরুরি। এ থেকে নানা ধরনের জটিলতা, এমনকি রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় কিডনিও অকেজো হয়ে যেতে পারে।
তাই উপসর্গ বুঝে রোগীকে কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়, যা সংক্রমণের মাত্রা, জটিলতা অথবা জীবাণু শনাক্তকরণের জন্য সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের জন্য সাহায্য করে। যেমন সিবিসি, সিআরপি, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিন আরএমই ও কালচার, ক্ষেত্রবিশেষে আলট্রাসনোগ্রাম।
সূত্রঃ