জন্মের সময় বাচ্চার ওজন কম হলে কি কি সমস্যা হয়। আগে সিজার করিয়ে ভুল করলেন নাতো?
যারা নতুন বাবা-মা হতে যাচ্ছেন বা বাবা-মা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন অর্থাৎ সন্তান নিতে চাচ্ছেন তাদের এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরী।
মায়ের শারীরিক কোনো সমস্যা বা অন্য কোনো কারণে কম ওজনের বাচ্চা জন্ম নিলে জন্মের পরপরই বাবা-মায়ের তথা পুরো পরিবারের ভোগান্তির শেষ থাকে না এবং অনেক বাচ্চা মারাও যায়। অনেক টাকা খরচ করার পরেও বাচ্চাকে বাঁচানো যাই না। অর্থনৈতিক, মানসিক সব দিক থেকে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত।
এছাড়া আরো একটা দিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে বা আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেটা হলো- ডাক্তাররা টাকা কামানোর জন্য ফন্দি করে সময়ের কিছু আগে সিজার করিয়ে কম ওজনের বাচ্চাকে NICU-তে কিছুদিন রেখে অনেক টাকা বিল করে তাদের ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করা।
আপনার প্রথম আলট্রাসোনো রিপোর্টে হয়তো estimated date of delivery (EDD)-ডেট ঠিক আছে এবং আপনার লাস্ট মেনুস্ট্রুয়াল ডেট অনুযায়ী হিসাব করলেও মিলে যায়। কিন্তু পরবর্তী একটি বা দুটি আল্ট্রাসনোতে EDD-ডেট বা সময় এক মাস এগিয়ে রিপোর্ট দিলো। আপনি বুঝেন না বা খেয়াল করলেন না বা ডাক্তার বললেন লাস্ট EDD-এর বেশি আর যাওয়া যাবে না বা দেরি করা যাবে না।
আপনি ডাক্তারের কথা অনুযায়ী সিজার করিয়ে নিলেন। পরে দেখা গেলো ৩৭-সপ্তাহের আগে সিজার করা হয়ে গেছে। বাচ্চার ওজন কম। তাড়াতাড়ি বাচ্চাকে শিশু হাসপাতালে নাও। ICCU-তে বেড খালি আছে কিনা দেখো। আপনি ফেঁসে গেলেন।
কম ওজন নিয়ে জন্মানো বা Low Birth Weight (LBW) হল ২ কেজি ৫০০গ্রাম বা ২৫০০ গ্রাম বা ৫ পাউন্ডেরও কম ওজনের বাচ্চার চিকিৎসার শ্রেণিবিন্যাস। স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা,যদিও এটি ভয়াবহ হতে পারে তবে, শিশুটি যাতে সুস্থ্য থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য কম ওজনের শিশুর পরিবারের সদস্যদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কারণসমূহ:
শিশু দুটি প্রধান কারণে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে: গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায় না (যাকে বলা হয় আন্তঃদেশীয় বৃদ্ধির বাধা, বা আইইউজিআর)।
জন্মের সময় ওজন কম হওয়ার অনেকগুলি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে:
এর মধ্যে prematurity, প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থায় অন্যান্য সমস্যা, ধূমপান বা পদার্থের অপব্যবহার, একাধিক জন্ম (যমজ বা তার বেশি),
poor pregnancy nutrition বা গর্ভাবস্থায় পুষ্টির অভাব।
জন্মের আগে মা বা শিশুর সংক্রমণ যেমন: সাইটোমেগালভাইরাস (সিএমভি)-any of a group of herpes viruses that can cause birth defects, টক্সোপ্লাজমোসিস বা parasite infection, ভাইরাল ইনফেকশন, গর্ভাবস্থায় জ্বর, ঘন ঘন বমি, পাতলা পায়খানা বা আমাশয়ের সমস্যা, চিকেনপক্স, এবং রুবেলা।
কম ওজনের বাচ্চারা যে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তা নিম্নে দেওয়া হলো:
অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ফাংশন নিয়ে সমস্যা:
জন্মের সময় কম ওজন হওয়ায় কিছু বাচ্চার গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে শিশুর জন্মের সময় খুব কম ওজন থাকে তার খাওয়া, ওজন বাড়ানো এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যাও হতে পারে। অকাল জন্মগ্রহণকারী শিশুদের বিভিন্ন জটিলতা থাকতে পারে যার মধ্যে তাদের মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস, অন্ত্র এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে সমস্যা থাকে।
উষ্ণ বা গরম থাকার সমস্যা:
বাচ্চা অকালে জন্ম নিলো। বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। কম ওজন অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহ আগে জন্ম নেওয়া প্রায় সকল বাচ্চাদের উষ্ণ রাখার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে না বা জমা হয়ে পারে না। শেষ মাসেই শরীরের ওজন বেশি বৃদ্ধি পায়, শরীরে ফ্যাট জমা হয়। তাই তারা নিজেরাই উষ্ণ থাকতে না পারে, বাচ্চাকে ইনকিউবেটারে সময় কাটাতে বা রাখতে হয় এবং দামি ওষুধেরও দরকার হয়।
খাওয়ার সমস্যা:
কম ওজনে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ বাচ্চা বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না বা বুকের দুধ খাওয়ানোর বা বোতল-খাওয়ানোর পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী থাকে না এবং তাদের বাড়তে পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণে সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে থাকে। বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনও প্রয়োগ করতে হয়।
সূত্রঃ
https://www.verywellfamily.com/what-is-a-low-birth-weight-baby-2748477