ধূমপান করার ফলে শরীরে কি কি ক্ষতি হয়।

ধূমপান মানে বিষপান- কথাটির সঙ্গে আমরা একমত তারপরও কেন জানি ধূমপান ছাড়তে পারিনা। ধূমপানের ক্ষতি কেবল দেহেই পড়ে না, এর প্রভাব পড়ে সমাজ ও পরিবারেও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে বিশ্বকে ধূমপানমুক্ত করার অদম্য প্রচেষ্টা করে চলছে। শুধু ধূমপানের কারণেই মানুষের আয়ুষ্কাল কমে যায় ১০-২০ বছর। বিশ্বে যত লোক মারা যায় তার দ্বিতীয় প্রধান কারণ ধূমপান।

প্রতিবছর ৫৮ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় ধূমপানের কারণে, প্রতি ১০ জনে একজন। মৃতদের শতকরা ৭০ ভাগই কিন্তু আমাদের মত উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের। ধূমপান আসলেই একটি ব্যাধি। যারা এ রকম করছে, তাদের কাছে এটি বড় কোনো বিষয় মনে হয় না। তারা এটিকে স্বাভাবিক মনে করে। এর প্রভাব খুবই মারাত্মক।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ধূমপান করার ফলে শরীরে কি কি ক্ষতি হয়।

ফুসফুসের ক্ষতি হয়:

তামাক প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৮ মিলিয়নেরও বেশি লোককে হত্যা করে। ধূমপান শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণের জন্য একটি পরিচিত ঝুঁকির কারণ এবং শ্বাসজনিত রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।

কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক রোগ যা প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে আক্রমণ করে। ধূমপান ফুসফুস ফাংশনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যার ফলে শরীরের পক্ষে করোনভাইরাস বা অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে।

হার্টের জন্য ক্ষতিকর:

সিগারেট, পাইপ থেকে ধূমপান হৃৎপিণ্ড এবং ধমনীর জন্য যেমন খারাপ তেমনি এটি ফুসফুসের জন্যও খারাপ। ধোঁয়াকে দ্বিতীয় বিষ মনে করা হয়। সেটা আপানাকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাই আপনি যদি ধূমপান করেন তাহলে ধূমপান করা ছেড়ে দেওয়া হল স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর:

ধূমপান মস্তিষ্কের খুব ক্ষতিকারক একটি বদভ্যাস। স্মৃতিশক্তি হ্রাসের জন্য এই বদভ্যাসটিকে দায়ী করা হয়। সেই সাথে ডিমেনশিয়া ও আলজেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ধূমপান। হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে এটি।

কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে:

ধুমপান আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সব থেকে ক্ষতিকর। এটি আপনার “ভাল” কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান থেকে দূরে থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।

বয়সের ছাপ পড়ে:

ধূমপান আমাদের চেহারাতে অল্প বয়সেই বয়সের ছাপ এনে দেয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তাদের চেহারায় তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ পড়ে। কারণ ধূমপান ফুসফুসে প্রভাব ফেলার আগে আপনার ত্বকে প্রভাব ফেলে।

কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়:

ধূমপান আপনার কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান দেহের রক্তনালীর ক্ষতি করে। অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপানের কিডনিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও মদপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই এগুলোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

ইনফার্টিলিটি:

ধূমপানের ফলে ইনফার্টিলিটি কমে যায়, হরমোনের সমস্যা দেখা দেয়, স্পার্ম মোবিলিটি, ইরেকটাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। মহিলাদের মধ্যেও ধূমপানের কারণে বন্ধাত্ব্য দেখা দেয়।

ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগ হওয়ার আশঙ্খা বাড়ায়:

ক্যান্সার, হৃদরোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ ছাড়াও অন্ধত্ব, বধিরতা, ডায়বেটিস, স্মৃতিভ্রম এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে ধূমপান। এছাড়া অপারেশন হওয়ার পর ধূমপায়ীরা সেরে উঠতে অধূমপায়ীদের চেয়ে বেশি সময় নেয়। তাছাড়া অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের অপারেশন সফল না হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তবে আরো মারাত্মক যেটি, ধূমপান করলে আমাদের শরীরের যে রক্তনালি সেটি সরু হয়ে যায়। সরু হয়ে গেলে পরে বিভিন্ন জটিলতা হয়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

স্ট্যামিনা:

নিয়মিত ধূমপান আপনার স্ট্যামিনা অনেক কমিয়ে দেয়। একটু কাজের চাপ বাড়লেই হাঁপিয়ে ওঠেন। প্রতিদিনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস শরীর ক্রমশ দুর্বল করে দেয়। রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। তাছাড়া ধূমপানের ফলে ক্ষিদে কমে যায়।

চোখে প্রভাব:

ধূমপানের কারণে আপনার চোখে কমবয়সেই ছানি পড়তে পারে। নিয়মিত ধূমপান চোখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়। ধূমপান ছাড়ার পরও অবশ্য চোখে ছানি পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

রক্তে প্রভাব:

সিগারেট, বিড়ি, হুকো ইত্যাদিতে থাকা তামাক থেকে উৎপন্ন নিকোটিন রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। তাছাড়া অনেক সময় অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এছাড়া ধূমপান শুধুমাত্র আপনার ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে না, পাশাপাশি শরীরের অন্য অঙ্গগুলিও সমান তালে ক্ষতির শিকার হয়। তাছাড়াও ধূমপানের কুপ্রভাব কিন্তু সুদূরপ্রসারী।